প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২১ এপ্রিল : বৈশাখের শুরু থেকেই চরমে উঠছে তাপমাত্রা । এই অবস্থায় আবহাওয়া দফতর এখনই কালবৈশাখী ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা যেমন কিছু দেখছে না তেমনি মদের দোকানেও দেখা নেই ’বিয়ারের’। আর গরমে বিয়ার অমিল হয়ে পড়ায় হতাশ বিয়ারপ্রেমীরা ।
গরম পড়লেই মদের দোকান গুলিতে বিয়ারের চাহিদা বহুগুন বেড়ে যায়।পূর্বেকার বছর গুলিতে বিয়ারের যোগান নিয়ে কোন সমস্যা না থাকলেও এই বছর আশ্চর্যজনক ভাবে বিয়ারের যোগান ঘাটতি দেখা দিয়েছে।গলসি নিবাসী ব্যবসায়ী শুভেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,’এখন সপ্তাহে মাত্র ১৭ ক্যারেট বিয়ার পাওয়া যাচ্ছে । এক ক্যারেটে ৬৫০ মিলিলিটারের ১২টি বোতল থাকে । অথচ এখন বিয়ারের চাহিদা এর থেকেও অনেক গুন বেশী ।’ একই জায়গায় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মেমারির সাতগেছিয়ার ব্যবসায়ী প্রলয় ঘোষ দাবী করেন, ‘এখন তিনি যদি সপ্তাহে ১৪০ ক্যারেট বিয়ার পান ।সেটাই হুড়িয়ে বিক্রী হয়ে যাবে। কিন্তু এখন মিলছে মাত্র ১০ ক্যারেট ।’ অপর ব্যবসায়ী সনাতন সিংহ দাবী করেন,’গত বছর গাড়ি গাড়ি বিয়ার তুলেছিলাম। আর এখন গাড়ি তো দূরের কথা, চাহিদার অর্ধেকও বিয়ার মিলছে না ।’ একই আক্ষেপের কথা শুনিয়েছেন বর্ধমান, কালনা, কাটোয়া, গুসকরার ও জামালপুর ও মেমারির মদ ও বিয়ারের ব্যবসায়ীরা । তাঁদের বক্তব্য বিয়ারপ্রেমী খরিদ্দারদের বিয়ার দিতে পারছি না । বিয়ার না পেয়ে খরিদ্দাররা হতাশ হয়েই মুখ ঘুরিয়ে চলে যাচ্ছেন ।’
হঠাৎ করে এই বছর ’বিয়ারের’ চাহিদা এত বেড়ে যাওয়ার কি কারণ তা জানার জন্যে বিয়ার প্রেমীদেরও কৌতুহলের শেষ নেই । এই বিষয়ে ব্যবসায়ীদের দাবি,’বিয়ারের দাম আগের থেকে কমে গিয়েছে। তাই যে সব সুরাপ্রেমীরা আগে ’পচাই’ বা ’দেশি মদ’ খেতেন তারাও এখন এই গরমে বিয়ারের দিকে ঝুঁকেছেন ।এর কারণে বিয়ারের চাহিদা এখন আনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। অপর কারণ হিসাবে উঠে এসেছে , পূর্ব বর্ধমান জেলার ৩১৩ টি দোকানে বিয়ারের পর্যাপ্ত সরবরাহের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকা।আবগারি দফতরের তরফে যদিও বলা হচ্ছে ,এপ্রিল-মে মাসে প্রতি সপ্তাহে পূর্ব বর্ধমান জেলায় ১৮-২০ হাজার ’ক্যারেট’ বিয়ার লাগে।সেই চাহিদা মতোই চলতি সপ্তাহে যোগান দেওয়া হয়েছে।বিক্রীও গত বছরের চেয়ে ৮-৯ শতাংশ বেশি হয়েছে। তারপরেও এখন দোকানে দোকানে বিয়ার বাড়ন্ত।
এদিকে বিয়ারের যোগান কম থাকায় ‘ফরেন লিকার’ বা বিদেশি মদের চাহিদাও বেড়ে বলে জানা গিয়েছে। দফতর সূত্রে খবর এপ্রিল মাসেই ‘ফরেন লিকারের’ বিক্রি ২৯ হাজার লিটার বেড়েছে। যা গত মার্চ মাসের চেয়ে ২৩% বেশী।জেলা আবগারী দফতরের তথ্য অনুযায়ী গত এক মাসে শুধু মাত্র দোকানের হিসেবে পূর্ব বর্ধমান জেলায় ২০ কোটি টাকারও বেশি মদ-বিয়ার বিক্রি হয়েছে।“এই বিষয়ে আবগারি দফতরের সুপার এনায়েত রব্বির দাবী,“জোগানে ঘাটতি নেই বললেই চলে। তবে গরমের জন্যে বিয়ারের চাহিদা বেড়ে গিয়েছে।“যদিও বিয়ারের জোগান কবে থেকে স্বাভাবিক হবে তার উত্তর আবগারি দফতরের কোন কর্তারাই দিতে পারেনি ।
এদিকে মদের দোকানে বিয়ারের বাড়ন্তের মাঝেই আবার ‘ওয়েস্টবেঙ্গল পচাই অ্যান্ড কান্ট্রি স্পিরিট ভেন্ডর অ্যাসোসিয়েশন’ চাহিদা মতো বিয়ার চেয়ে আবগারি দফতরে চিঠি পাঠিয়েছে । ওই সংগঠনের রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক গুসকরার বাসিন্দা মেঘনাদ সাহা। তিনি দাবি করেছেন,’চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না বলে ব্যবসায়ীদের যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনি রাজ্য সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে ।’।