দিব্যেন্দু রায়,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),২৫ মে: পারিবারে সীমাহীন অভাব,জোটেনি টিউশন, তারই মধ্যে ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়ে তাক লাগালেন কাটোয়ার রাজমহিষী দেবী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী মলি মুখার্জি । কাটোয়ার রাজমহিষী দেবী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী মলি বাংলায় ৭৭, ইংরেজিতে ৯০, ইতিহাসে ৮০, ভূগোলে ৯২, দর্শনে ৯৯ এবং সংস্কৃতে ৯০ নম্বর পেয়েছেন । সেরা পাঁচের হিসাবে তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৫১ । দরিদ্র পরিবারের ওই মেধাবী ছাত্রীটি জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে তিনি শিক্ষিকা হতে চান । দু:স্থ পড়ুয়াদের দিকে বাড়িয়ে দিতে চান সাহায্যের হাত । এদিকে অভাবের মধ্যে মেয়ের উচ্চশিক্ষার খরচ কিভাবে জোটাবেন তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছেন মলির মা সীমাদেবী । তিনি বলেন,’কিভাবে মেয়ের পড়াশোনা খরচ জোটাবো জানিনা ।’
কাটোয়া পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার পানুহাট পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা মলয় মুখার্জি ও সীমা মুখার্জির দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় মলি । ছেলের বয়স ৩ বছর । মলয়বাবু কাটোয়া শহরে ফুটপাতে বসে জামাকাপড় বিক্রি করতেন । কিন্তু ২০১৮ সালে কাটোয়া পুরসভা ফুটপাতের সমস্ত হকার উচ্ছেদ করে দিলে কাজ হারান মলয়বাবু । বর্তমানে তিনি কেরলে রংমিস্ত্রির কাজ করেন । দুর্গাপূজার সময় কয়েক দিনের ছুটিতে তিনি বাড়ি আসেন ।
মলির মা সীমাদেবী কাটোয়ার জানকীলাল উচ্চ বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল রান্নার কাজ করেন । দম্পতির সীমিত উপার্জনেই মেয়ের পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবারের যাবতীয় খরচখরচা চলে । এদিকে মা যখন কাজে চলে যান তখন সংসারের যাবতীয় কাজকর্ম ও ভাইয়ের দেখাশোনার দায়িত্ব মলিই সামলান । তারই মধ্যে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়ে মলির এই নজরকাড়া সাফল্যে বিস্মিত এলাকার বাসিন্দারা ।
মলি জানান,তার কোনো টিউশন ছিল না । তার মা যে স্কুলে কাজ করেন ওই স্কুলের শিক্ষিকা মাঝেমধ্যে তাকে সহযোগিতা করেছেন । এনিয়ে ওই শিক্ষিকা কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন মলি । কঠোর জীবন সংগ্রামের মাঝেও সাফল্য পেয়ে খুব খুশি মলি । কিন্তু ভবিষ্যতের কথা ভেবে বিমর্ষ দেখালো তাকে । যদিও মলির দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন রাজমহিষী দেবী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কমলাকান্ত চক্রবর্তী ।।