এইদিন ওয়েবডেস্ক,মালদা,৩০ ডিসেম্বর : বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে ভিন রাজ্যে পিটিয়ে মারার ঘটনা যে মিথ্যা নয় তা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ভিডিও হল তার প্রমান । ইতিমধ্যে বেশ কিছু মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে গেছে । কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস,সিপিএম ও কংগ্রেস সেই সমস্ত ঘটনাগুলি “বাংলাভাষীদের উপর আক্রমণ” বলে চালিয়ে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ । ভিন রাজ্যে কাজ করা পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে ওই দলগুলি আদপেই সহানুভূতিশীল কিনা তা মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভাট্টা এলাকার বাসিন্দা ষষ্ঠী মাহাতো(৩৮)র মৃত্যুর পর প্রশ্ন উঠছে । সদ্য স্বামীকে হারিয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে অথৈ জলে পরা মৃতের স্ত্রী সোনালী মাহাতো জানিয়েছেন, ভিন রাজ্য থেকে তার স্বামীর মৃতদেহ আসার পর প্রশাসন বা শাসকদলের কোনো জনপ্রতিনিধি তাদের কোনো খোঁজ নেয়নি ।
হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভাট্টা গ্রামের বাসিন্দা ষষ্ঠী মাহাতো দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে নির্মান শ্রমিকের কাজ করতেন । তার পরিবারে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী সোনালী মাহাতো এবং এক ছেলে ও এক মেয়ে। ভাঙাফুটো একটা বাড়িতে পরিবারটির বসবাস । ভিন রাজ্যে হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দিতেন ষষ্ঠীবাবু । কিন্তু ওডিশায় নির্মাণ শ্রমিকের কাজে গিয়ে হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন । তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । কিন্তু চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার । এদিকে পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্যকে হারিয়ে এখন অথৈ জলে পড়েছেন তাঁর স্ত্রী ।
মৃতের স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে বলেন,’আমার ভাঙাফুটো ঘর । স্বামী চলে যাওয়ার পর আমি কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না । ঘর মেরামত করার চিন্তা তো দূরের কথা, দুই সন্তানের মুখে কিভাবে দু’মুঠো অন্ন তুলে দেবো সেটাই ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছি না ।’ তার অভিযোগ, উড়িষ্যা থেকে তার স্বামীর দেহ আসার পর এখনও পর্যন্ত কোনও জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসনিক আধিকারিক তাঁদের পাশে দাঁড়াননি ।
এদিকে রাজ্যের ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব নিয়ে শাসকদলকে তুলোধুনো করছে বিজেপি । বিজেপির অভিযোগ, রাজ্যে কর্মসংস্থানের নূন্যতম সুযোগ নেই বলেই পেটের দায়ে ভিনরাজ্যে কাজ করতে যেতে হচ্ছে বাংলার মানুষকে । আর সেখানে গিয়ে তাদের বেঘোরে প্রাণ দিতে হচ্ছে ।
প্রসঙ্গত,চলতি বছরের শুরুর দিকে বিজেপি শাসিত রাজ্যে “বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিক”দের উপর হামলার অভিযোগ তুলে তাদের সকলকে নিজের রাজ্যে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । তিনি তাদের মাসিক ৫০০০ টাকা অনুদান দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন । এই বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট পোর্টালও চালু করেছে রাজ্য সরকার । কিন্তু তারপরেও বাংলার শ্রমিকদের ভিন রাজ্যে কাজে যাওয়ার প্রবনতা বন্ধের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না । যদিও হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভাট্টা গ্রামের বাসিন্দা ষষ্ঠী মাহাতোর ঘটনায় তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করেছেন যে মৃত শ্রমিকের নাম যদি রাজ্য সরকারের নির্দিষ্ট পোর্টালে নথিভুক্ত থাকে, তবে নিয়ম মেনে তাঁর পরিবার অবশ্যই আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাবে । তারা মৃত শ্রমিক পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাসও দিয়েছেন । যদিও বিজেপি নেতাদের দাবি, ‘পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা দিতে রাজ্য সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ । রাজ্যের রাজকোষ শুন্য । তাই রাজ্য সরকার কিভাবে হতদরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারকে সহায়তা দেবে, এনিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছেন ।।

