এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,০৫ অক্টোবর : সাম্প্রদায়িক হিংসার শিকার হয়েও বাংলাদেশের এক শ্রেণির হিন্দুদের মাথা থেকে ধর্মনিরপেক্ষতার ভুত কিছুতেই নামছে না ৷ বাংলাদেশের দুই প্রান্ত থেকে কয়েকজন হিন্দুর সেকুলারিজমের এমন কিছু চিত্র উঠে আসছে যাতে সেদেশের বৃহৎ সংখ্যক হিন্দুদের মধ্যেই তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে । বাংলাদেশের নেত্রকোনায় দুর্গাপ্রতিমা বিসর্জনের সময় এক পিতাপুত্রীকে ফিলিস্তিনের পতাকার পাশে “বিজয়ার শুভেচ্ছা” ও ফ্রি প্যালেস্টাইন” লেখা পোস্টার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় । অন্যদিকে ঢাকার একটি মন্দির কমিটির সভাপতি সুনীল চন্দ্র সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে বলেছেন,”আমাদের একটাই শত্রু, আর সেটা হল ইসকন । কারন ইস্কন আমাদের সব মন্দির দখল করে নিচ্ছে৷’ তিনি আরও বলেছেন, ‘হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই,আমাদের কোনো বিভেদ নেই।’ যদিও দুটো ঘটনাতেই সমালোচনায় মুখর হচ্ছে বাংলাদেশি হিন্দুরা ।
প্রতিমা নিরঞ্জনে ফ্রি প্যালেস্টাইন পোস্টারের ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের অধ্যাপক ডঃ কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন,’দুর্গাপূজা একটি ধর্মীয় মহোৎসব, একে রাজনৈতিক বা আন্তর্জাতিক রাজনীতির কোন ইস্যুর সাথে জড়িত করা অনুচিত। দুর্গাপূজার আয়োজনের অভ্যন্তরে যদি ফিলিস্তিনের মতো আন্তর্জাতিক ইস্যুতে কথা বলতে হয়-তবে তার আগে পাকিস্তানের হিন্দুশূন্য করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে; ভুটানের লাখো লাখো হিন্দুকে শরনার্থী করে অমানবিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে; শ্রীলঙ্কায় তামিল হিন্দু সম্প্রদায়ের উপরে সংগঠিত গণহত্যার বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে; ফিজির হিন্দু সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক অধিকার হরণের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে; উগাণ্ডায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ইদি আমিনের সংগঠিত গণহত্যার বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে; আফগানিস্তানের হিন্দুশূন্য করা এবং হিন্দু ঐতিহ্য অর্থাৎ পুরাতাত্ত্বিক ঐতিহ্য ধ্বংসের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে;কাশ্মীরের পণ্ডিতদের বিরুদ্ধে সংগঠিত গণহত্যার বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে।’
অন্যদিকে বাংলাদেশের জাতীয় সংবাদমাধ্যম ডেইলি ইত্তেফাক-এ এক সাক্ষাৎকারে মন্দির কমিটির সভাপতি সুনীল চন্দ্রের ইসকন সম্পর্কে ওই বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে । হিন্দু নিউজ একটি প্রতিবেদনে লিখেছে,নিজেকে হিন্দু পরিচয়দানকারী হলেও হিন্দুদের অধিকার নিয়ে কখনোই সোচ্চার না হওয়া এই ব্যক্তি এবার সরাসরি ইসকনকে লক্ষ্যবস্তু বানান।
সাক্ষাৎকারে সুনীল চন্দ্র দাবি করেন— “হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই, কিন্তু ইসকন হিন্দুদের ভাই নয়; বরং ইসকনই নাকি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় শত্রু। তাই ইসকনকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করতে হবে।” এ বক্তব্যের সঙ্গে আরও নানা কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য যোগ করেন তিনি, যা ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমালোচকদের মতে হিন্দুদের অধিকার প্রশ্নে যিনি কখনোই একটিবার মুখ খোলেননি, তিনি এখন হঠাৎ করেই ইসকন-বিরোধী হয়ে মাঠে নামলেন—এটা নিছকই স্বার্থসিদ্ধির কৌশল। সামাজিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তাঁর এসব বক্তব্য মূলত পদ-পদবি, প্রতিষ্ঠা এবং অর্থলাভের আশায় দেওয়া। অনেকে কটাক্ষ করে বলছেন,’এমন মন্তব্য করতে তাঁর পকেটে কত টাকা ঢুকেছে, সেটাই এখন প্রশ্ন।’
হিন্দু সমাজের বিশিষ্টজনেরা মনে করছেন, ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ভেতর বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা অত্যন্ত বিপজ্জনক। তাঁদের মতে, বাইরের শত্রু যতটা না ক্ষতিকর, ভেতরের তথাকথিত ‘বকধার্মিক’রা তার চেয়েও ভয়ংকর। হিন্দু বিদ্বেষী মনোভাব লুকিয়ে রেখে নামমাত্র ধর্মীয় পরিচয় বহনকারীরা প্রকৃত হিন্দু সমাজের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকেই মন্তব্য করছেন,’ঘরের শত্রু থাকলে বাইরের শত্রুর প্রয়োজন হয় না। Lite Version-এর মতো চরিত্ররা হিন্দু সমাজের জন্য ভেতর থেকেই ধ্বংস ডেকে আনে।’ দাবি করা হয়েছে যে হিন্দু সমাজের দাবি, রাষ্ট্র ও প্রশাসনকে উচিত এসব উস্কানিমূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে করে সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ না ছড়ায় ।।