দিব্যেন্দু রায়,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),২৩ জুন : বাবা-মায়ের মৃত্যুর কারন হয়েও অপরাধ জগৎ ছাড়েনি একাধিক মামলার আসামী পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়ার মাধাইতলার বাসিন্দা তন্ময় রায় ওরফে পাপু । দীর্ঘ সাত বছর বেপাত্তা থাকার পর মঙ্গলবার লুকিয়ে কাটোয়ার জেলেপাড়ায় শ্বশুরবাড়িতে এসে উঠেছিল সে । কিন্তু পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আতঙ্ক তাড়া করছিল তন্ময়কে । আর ওই আতঙ্ক থেকেই সে বুধবার বিকেলে শ্বশুরবাড়িতে নিজের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় ৷ পুলিশ তাকে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করে । কিন্তু বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে মৃত্যু হয় তার ।
জানা গেছে,কাটোয়ার মাধাইতলার বাসিন্দা মানিক রায় ও অর্চনা রায়ের ছেলে তন্ময় । তন্ময় সোনারূপোর গহনা তৈরির কারিগর ছিলেন । বছর তেরো আগে কাটোয়ার জেলেপাড়ার মেয়ে মৌসুমীদেবীর সঙ্গে তার দেখাশোনা করে বিয়ে হয় । বর্তমানে তাঁদের একটি ১০ বছরের সন্তান রয়েছে । বিয়ের আগে থেকেই গহনা তৈরির কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়েছিলেন তন্ময় ।
জানা গেছে,২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে দুর্গাপুজোর অষ্টমীর দিন বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করার সময় উদয় বিশ্বাস নামে একজনকে গুলি করা হয়েছিল । ওই ঘটনায় তন্ময়ের নাম জড়ায় । আর তারপর থেকেই সে উধাও হয়ে যায় । প্রথমে সে মুর্শিদাবাদে পালায় । পরে কেরালায় গিয়ে ঠেক নেয় । এরই মাঝে এক মহিলার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তন্ময় ।
জানা গেছে,এদিকে গুলি চালানোর ঘটনার পর থেকেই ছেলের কৃতকর্মের জন্য প্রতিবেশীদের কটাক্ষের শিকার হতে হচ্ছিল মানিক রায় ও অর্চনাদেবীকে । ওই দম্পতি তাঁদের ছেলেকে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পনের জন্য বারবার অনুরোধ করছিলেন । কিছু ছেলে তাঁদের কথা শোনেনি । শেষ পর্যন্ত তাঁরা ২০১৫ সালের দুর্গাপুজোর বিজয়াদশমী করার পর ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হন । কিন্তু শ্বশুর শাশুড়ির মৃত্যুর আগেই স্বামীর কাজকর্মে বীতশ্রদ্ধ হয়ে ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়িতে চলে যান মৌসুমীদেবী । বিগত সাত বছর ধরে বাবার বাড়িতেই রয়েছেন তিনি ।
পরিবার সুত্রে জানা গেছে,মঙ্গলবার রাতে লুকিয়ে জেলেপাড়ায় শ্বশুরবাড়িতে আসেন তন্ময় । ফিরে আসার খবর যাতে চাওড় না হয় তার জন্য সে স্ত্রীকে আগে থেকেই সাবধান করে দেন । কিন্তু বুধবার দুপুরে ছেলে প্রীতমকে নিয়ে লুকিয়ে কাটোয়া থানায় চলে আসেন মৌসুমীদেবী । এদিকে তখন নিজের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় তন্ময় । পুলিশ সুত্রে খবর,কাটোয়ার পাশাপাশি কেরলেতেও বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের জন্য তন্ময়ের বিরুদ্ধে মামলা চলছে । পুলিশের হাতে ধরা পড়ার ভয়েই সে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে বলে অনুমান । এদিন মৃতদেহটির ময়নাতদন্ত করা হয় ।।