প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১১ নভেম্বর : গাছ কাটা বন্ধ করে গাছ লাগানোর জন্য সকলকে উৎসাহিত করার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । তবুও গাছ কাটায় বিরাম পড়ছে না পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে। এবার এসআইআর (SIR) আবহে প্রশাসনিক কর্তাদের ব্যস্ত থাকার সূযোগকে কাজে লাগিয়ে কাটা হল পিডাবলুডি-র (PWD) জায়গায় থাকা একাধিক প্রকাণ্ড গাছ। সেই সব গাছ কাটানোর অভিযোগে নাম জড়িয়েছে শাসক দলের এক নেতা তাঁর সাগরেদের। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের এমন ঘটনা নিয়ে বেজায় চটেছেন জামালপুরের চকদিঘী অঞ্চলের শুকপুর এলাকার বাসিন্দারা। ঘটনার বিহিত চেয়ে তাঁরা গণ-স্বাক্ষর সম্বলিত অভিযোগ পত্র জামালপুর থানা ও বন দফতর সহ প্রশাসনের নানা মহলে জমা করেছেন। শুরু হয়েছে অভিযোগের তদন্ত ।
প্রশাসনকে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন,চকদিঘী অঞ্চলের শুকপুর এলাকার উপর দিয়ে গিয়েছে মেমারি-তারকেশ্বর রাজ্য সড়ক।এই সড়ক পথটি পিডাবলুডি-এর (PWD) অধীন। শুকপুর এলাকায় এই সড়ক পথের ধারের পিডাবলুডি-এর জায়গায় শতাধিক বছরের পুরানো বটগাছ সহ একাধিক মূল্যবান গাছ ছিল। গ্রীষ্মে ওইসব গাছের ছায়ার নিচে বসে বিশ্রাম নিতেন পথচারিরা। তা জেনেও পিডাবলুডি-এর বা বন দফতর,কারুর কোন অনুমতি না নিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে ওইসব গাছ।
এত গাছ কারা কাটালো? এই প্রশ্নের উত্তরে শুকপুরের বাসিন্দা মহাদেব মাইতি ,প্রশান্ত দাস এবং আরো অনেকে জানান,কয়েকদিন আগে হঠাৎতই সঞ্জয় পাকড়ে নামে এক ব্যক্তি কিছু লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে গাছ কাটতে নেমে পড়েন। নানা যন্ত্রপাতির সাহায্যে তারা অল্প সময়ের মধ্যে শুকপুরে পিডাবলুডি-এর (PWD) জায়গায় থাকা ৮ -১০টি প্রকাণ্ড গাছ কেটে ফেলে। তার মধ্যে শতাধিক বছরের পুরানো একটি বট গাছও আছে । এইভাবে নির্বিচারে গাছগুলি কাটার অনুমতি কে দিলো তা সঞ্জয় পাকড়ের কাছে জানতে চাওয়া হয় ।তখন সঞ্জয় পাকড়ে মৌখিক ভাবে জানান,’তাঁকে চকদিঘী পঞ্চায়েতের সদস্য ও চকদিঘী অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি আজাদ রহমান এবং তাঁর সাগরেদ উজ্জ্বল মালিক গাছগুলি কাটতে বলেছে।তাই তিনি গাছগুলি কেটেছেন বলে জানান।তবে গাছ কাটার লিখিত কোনও অনুমতিপত্র সঞ্জয় পাকড়ে দেখাতে না পারায় সবাই বুঝে যান বেআইনিভাবে গাছ কাটা হয়েছে। এরপরেই গ্রামবাসীরা প্রশাসন ও বন দফতরে অভিযোগ জানান ।
পিডাবলুডি-এর জেলার এক আধিকারিক গোটা ঘটনার কথা শুনে বলেন,’অত্যন্ত গর্হিত কাজ হয়েছে।জামালপুরের শুকপুরেপিডাবলুডি-এর জায়গায় থাকা গাছ কটার অনুমতি পিপিডাবলুডি-এরতরফে কাউকে দেওয়া হয়নি। কারা গাছ কাটালো তার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’
আর জেলার বন বিভাগের বিট অফিসার (মেমারি রেঞ্জ)বিজু শর্মা জানিয়েছেন,গাছ কাটার অভিযোগ পেয়ে বন দফতরের লোকজন শুকপুরে পৌছে ছিলেন।ঘটনাস্থলে পৌছে সবকিছু খতিয়ে দেখে বন দফতরের লোকজন নিশ্চিত হন,বন দফতরের অনুমতি না নিয়েই গাছগুলি কাটা হয়েছে।তাই কাটা গাছগুলি ও গাছ কাটার যন্ত্রাংশ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
এ নিয়ে আজাদ রহমানকে ফোন করা হলে তিনি বৃক্ষ নিধনের বিষয় নিয়ে কোন কথা বলতে না চেয়ে এড়িয়ে যান। যদিও চকদিঘী পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান তথা ব্লক তৃণমূলের নেতা গৌর সুন্দর মণ্ডল বৃক্ষ নিধনের ঘটনানিয়ে তীব্র ক্ষোভ ব্যক্ত করেন ।তিনি বলেন,’পরিবেশ বাঁচানোর স্বার্থে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গাছ কাটা বন্ধ করে বেশী করে গাছ লাগানোর বার্তা দিচ্ছেন।কিন্তু এর ঠিক উল্টোটাই এসআইআর আবহের মধ্যে এখন চকদিঘীতে ঘটিয়ে চলেছেন সিপিএম থেকে তৃণমূলে এসে নেতা বনে যাওয়া ধান্দাবাজরা।’।

Written by: Journalist Pradeep Chatterjee. He has been involved in newspaper journalism for decades.

