প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৮ অক্টোবর : রাজ্যের বিজেপি নেতাদের কথামতই কেন্দ্রের সরকার আবাস যোজনা ও ১০০ দিনের কাজে বাংলার প্রাপ্য অর্থ দিচ্ছে না।এমন অভিযোগ এনে লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে বিজেপি বিরোধীতার ঝাঁঝ বাড়িয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।এমনকি বাংলার প্রতি বঞ্চনার কথা জাতীয় স্তরে তুলে ধরতে কয়েক দিন আগে তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমাণ্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই রাজ্যের এক ঝাঁক মন্ত্রী ও সাংসদ দিল্লিতে কৃষি ভবনে ধর্ণায় বসে। তারা এখন একই ইশুতে কলকাতায় রাজভবনের সামনে ধরনা অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছে। আর ঠিক এমনই সময়ে বাংলায় এসে কেন্দ্রের অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী তৃণমূলের আনা বঞ্চনার অভিযোগ নস্যাৎ করে দিলেন। পাল্টা তিনি প্রশ্ন তোলেন কেন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে অর্থ খরচের হিসাব পশ্চিমবঙ্গ সরকার দিচ্ছে না? যথাযথ রিপোর্ট কেন্দ্রে পাঠানো হলেই টাকা চলে আসবে বলে পঙ্কজ চৌধুরী সাফ জানিয়ে দেন।
‘মেরা দেশ, মেরা মাটি’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে রবিবার পূর্ব বর্ধমান জেলার রায়না ও জামালপুরে
উপস্থিত হন কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী ।
এদিন দুপুরে প্রথমে তিনি রায়না ২ ব্লকের সুবলদহ গ্রামে গিয়ে বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর প্রতিকৃতিতে মালা পরিয়ে শ্রদ্ধা জানান।পরে সেখানে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে বসার আগে মন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। আবাস যোজনা ও ১০০ দিনের কাজ বাবদ পাওনা অর্থ কেন্দ্র দিচ্ছে না বলে তৃণমূলের আনা অভিযোগ নিয়ে পঙ্কজ চৌধুরীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন , এখানে কেন্দ্রের ১০০ দিন প্রকল্পের একটি দল এসেছিল। তারা প্রকল্প খতিয়ে দেখতে এসে কিছু গোলমাল পেয়েছিল। যে গোলমাল পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। যে কোনও কারণেই হোক ব্যবস্থা নেওয়ার কোনও রিপোর্ট আজও কেন্দ্রে জমা পড়ছে না।
মন্ত্রীর আরও দাবি,কেন্দ্রীয় প্রকল্পে যেখানেই আর্থিক গোলমাল রয়েছে, কেন্দ্র সরকার খতিয়ে দেখেছে।ওই অর্থ উদ্ধার হওয়াটাই তো সঠিক। এ বিষয়ে কেন্দ্র সরকার বারবার রিপোর্ট চাইলেও তা দেওয়া হচ্ছে না। যে দিন সঠিক রিপোর্ট কেন্দ্রে যাবে, সব কাজ শুরু হয়ে যাবে। টাকাও এসে যাবে।
তৃণমূলের কংগ্রেসের আনা অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন,“তথ্য পরিসংখ্যানের দিকে তাকান। দেখবেন, ২০০৬ সাল থেকে ২০১৩-১৪ সাল পর্যন্ত ১০০ দিন প্রকল্প ও অন্যান্য খাতে ৫৮ হাজার কোটি টাকা পশ্চিমবঙ্গ পেয়েছে। এরপর ২০১৪ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কে ২ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে।”আবাস যোজনা নিয়ে তৃণমূলের আনা অভিযোগও একই ভাবে নস্যাৎ করে দিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী জানান, যাঁদের ঘর পাওয়ার কথা এমন অনেক লোকের নাম কেটে দিয়েছে।আর যাঁদের পাবার কথা নয় তাঁদের নাম রাখা হয়েছে। কেন্দ্রের প্রতিনিধি দল তা ধরে ফেলেছে। এর বিরুদ্ধেও কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কোনও রিপোর্টও দিচ্ছে না । মন্ত্রীর সাফ জবাব ,ভারত সরকারের তো একটা নিয়ম আছে। যে টাকা দেওয়া হবে তার হিসেব তো দিতেই হবে। হিসেব-রিপোর্ট দেবে না, তাহলে কি ভাবে টাকা দেওয়া হবে ?
রায়নার সুবলদহ গ্রামে দলীয় কর্মসূচী সেরে বিকালে জামালপুরের জৌগ্রামের দোগাছিয়ায় পৌছান মন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী। সেখানে দলীয় কর্মসূচী শুরু হতে না হতেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সামনে বিজেপি নেতারা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া অশান্তি শুরু করে দেন।কিছু সময়ের মধ্যেই সেই অশান্তি আরও নগ্ন চেহারা নেয় । মন্ত্রীর সামনেই ধাক্কাধাক্কি হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন দুই গোষ্ঠীর বিজেপি নেতা ও কর্মীরা। এসব দেখে বিরক্ত হয়ে মন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী দলের নেতা ও কর্মীদের সান্ত হতে বলেন। তাতে কাজ না হওয়ায় ১৫ মিনিটের মধ্যেই দলীয় বৈঠকে ইতি টেনে দিয়ে গাড়িতে চেপে অন্যত্র রওনা দেন। এর পর বিক্ষোভকারীদের নেতা অভিজিৎ ঘোষাল ব্লকের কয়েকজন বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে তৃণমূলের সঙ্গে সেটিংয়ের অভিযোগ এনে স্বোচ্চার হন। এ নিয়ে সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় বলেন,অনেকদিন ধরেই আমরা বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে সেটিংয়ের কথা বলে আসছি । এখন বিজেপির নিচু তলার নেতা ও কর্মীরা একই কথা বলছে ।।