প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৯ এপ্রিল : কোন রাজনৈতিক দলের নেতা নেত্রীরাই প্রতিশ্রতি রক্ষা করেনি।তাই লোকসভা ভোটের সময় সব রাজনৈতিক দল ও তাদের প্রার্থীকে প্রত্যাখ্যান করলেন গ্রামবাসীরা । এমনকি গ্রামে রাজনৈতিক দলের ভোট প্রচারে ’’নিষেধাজ্ঞা’ জারি করে ভোটের দিন ইভিএম মুখো না হওয়ার সিদ্ধান্তও তারা নিয়ে ফেলেছেন। পূর্ব বর্ধমানের মেমারির দিলালপুর গ্রামের বাসিন্দারা এমন বেনজির সিদ্ধান্ত নেওয়ায় শাসক ও বিরোধী সব রাজনৈতিক দলই বড় বেকায়দায় পড়ে গিয়েছে।কি করে গ্রামবাসীদের মন গলানো যায় ,সেই উপায়ই এখন রাজনৈতিক দলগুলির নেতারা হাঁতরে বেড়াচ্ছেন ।
ভোট গণতন্ত্রের সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব। কিন্তু বর্ধমান পূর্ব লোকসভার অধীন মেমারির বাগিলা পঞ্চায়েতের অন্তর্গত দিলালপুর সহ পাঁচটি গ্রামের বাসিন্দারা সেই উৎসব থেকে একেবারেই মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন।এর কারণ গ্রামে প্রবেশের একটি কাঠের পুল নিয়ে লাগাতার বঞ্চনা,মিথ্যা আশ্বাস আর মেকি প্রতিশ্রুতি।সেটাই দিলালপুর গ্রামের বাসিন্দাদের সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতি বিতশ্রদ্ধ করে তুলেছে।তার পরিণামেই গোটা দিলালপুর গ্রাম এই লোকসভা ভোটের সময় পরিত্যাগ করেছে সমস্ত রাজনৈতিক দল ,নেতা নেত্রী ও তাদের প্রার্থীদের।সেই সংক্রান্ত ব্যানার ও ফেস্টুনেই এখন ছয়লাপ গোটা গ্রাম।গ্রামে নেই শুধু কোন রাজনৈতিক দলের দেওয়াল লিখন,পতাকা ও ব্যানার।
এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ প্রসঙ্গে দিলালপুর গ্রামের বাসিন্দারা জানালেন বঞ্চনার এক বৃহৎ কাহিনী।তাদের কথা অনুযায়ী!দিলালপুর হয়ে মেমারির প্রাণ কেন্দ্রে পৌছানোর একমাত্র রাস্তায় রয়েছে একটি কাঠের পুল।বাম আমলে ওই কাঠের পুল তৈরি হয়। কিন্তু তার কোন রক্ষনাবেক্ষণ আর হয় না। এখন কাঠের পুলটি একেবারে ভগ্নপ্রায়।যে কোন সময় পুলটি ভেঙে পড়তে পারে । বিপদের ঝুঁকি নিয়েই গ্রামের বাসিন্দাদের ওই পুল পারাপার করতে হচ্ছে।বাম সরকারের অবসান ঘটিয়ে তৃণমূল সরকার রাজ্যের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রয়েছে । পঞ্চায়েত, পুরসভা এমনকি মেমারি বিধানসভা এলাকাতেও ঘাসফুল ফুটেছে । এখন আবার পদ্ম শিবির দাপাদাপি করছে। কিন্তু কাঠের পুলটি সংস্কারের ব্যাপারে কোন রাজনৈতিক বা তাদের নেতা নেত্রীরা কোন আগ্রহ দেখান নি । ভোটের পর ভোট পেরিয়ে গেছে,বিধায়ক বদলেছে,পঞ্চায়েতে প্রধান বদলেছে,কিন্তু বদলায় নি শুধু দুর্দশাগ্রস্ত কাঠের পুলটির হাল।তাই রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের প্রতি দিলালপুরের দিলও এবার বড় কঠোর হয়ে গিয়েছে।
সোমবার দিলালপুর সহ পার্শ্ববর্তী আরও পাঁচ থেকে ছ’টি গ্রাম ঘুরে কোথাও কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারে ব্যানার, ফেস্টুন বা পতাকা দেখতে পাওয়া যায় না। পুরানো দেওয়াল লিখনও সব মুছে দেওয়া হয়েছে। গ্রামের বাসিন্দা তরুণ পণ্ডিত বলেন,“ প্রশাসন ইতিপূর্বে একাধীকবার কাঠের পুলটিকে বিপদজনক হিসেবে চিহ্নিত করে তার উপর দিয়ে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছিল ।কিন্তু ডিভিসি সেচ খাল পেরিয়ে যাতায়াতের বিকল্প ব্যবস্থা করে নি। সময় গড়ানোর সাথে সাথে পুলটি আরো দুর্দশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে । তবুও জীবনে ঝুঁকি স্কুল পড়ুয়া থেকে শুরু করে,রোগী ,প্রসূতি, সাধারণ মানুষ সবাইকে বিপজ্জনক ওই কাঠের পুল পেরিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে। তবু কোন রাজনৈতিক দল , নেতা নেত্রী কেউ ফিরেও তাকায় না। তাই আমারও এবার আর তাদের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছি না বলে তরুণ বাবু সাফ জানিয়ে দেন।
এবিষয়ে বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপির প্রার্থী অসীম সরকার বলেন,’আমি ওই এলাকায় যাব, সেখানকার মানুষের সাথে কথা বলবো। এটাই বলবো ,চোরেদের এতদিন সহ্য করেছেন। আমাদের একবার সুযোগ দেওয়ার জন্যে অনুরোধ জানাবো। সেই সূযোগ তারা দিলেই তাদের সমস্যা পূরণের কাজ করবো, কথা দিলাম।’ যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন,’খোঁজ নিয়ে জেনেছি স্থানীয় কিছু সমস্যার কারণে ওই পুলের কাজ করা যায়নি। তবে ওই পুল ,গ্রামের রাস্তা ,সবই হবে। বিজেপির প্রতিশ্রুতি বিশ্বাস করবেন না। তৃণমূল সরকারের উপর আস্থা রেখে গণতন্তরের উৎসবে সামিল হোন ।’ মেমারির তৃণমূল বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্যও একই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ।।