এইদিন,ওয়েবডেস্ক,২৬ ফেব্রুয়ারী : উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুর জেলার দেওবন্দ শহরে অবস্থিত ‘দারুল উলূম মাদ্রাসা’ (Darul Uloom Deoband) বহুবার বিতর্কিত ফতোয়ার কারণে খবরে এসেছে। কিন্তু, এবার তারা ভারতবিরোধী ফতোয়া জারি করে তাদের ধর্মান্ধ মানসিকতার প্রমাণ দিয়েছেন। দারুল উলূম তার ফতোয়ায় গাজওয়া-ই-হিন্দকে (Ghazwa-e-Hind) স্বীকৃতি দিয়েছে। এই ফতোয়ায় বলা হয়েছে যে ভারত আক্রমণের সময় যারা মারা গেছে বা যাবে তাদের মহান শহীদ বলা হবে এবং স্বর্গে যাবেন। এখন ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটস (এনসিপিসিআর) স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ নিয়েছে এবং এই ফতোয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সাহারানপুর জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে একটি নোটিশ জারি করেছে।
এদিকে দেওবন্দ দারুল উলূম মাদ্রাসাকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । তবে শুধু দারুল উলূম মাদ্রাসাই নয়,দিল্লির তাবলিগী জামাত মার্কাসকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠছে । একটি ইউটিউব চ্যানেলে এক মৌলবীকে ওই দুই কট্টর ইসলামী সংগঠনকে বন্ধ করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার কাছে দাবি জানাতে শোনা যায় ন । মৌলবী বলেন,’যদি ভারত থেকে সন্ত্রাসবাদকে খতম করতে হয় তাহলে দেওবন্দ ও দিল্লির মারকাস (তবলিকি জামাত মারকাস),এই দুটোকেই বন্ধ করতে হবে । এই দুটি সংগঠনকে বন্ধ করে দিলেই ভারত থেকে সন্ত্রাসবাদ খতম হয়ে যাবে ।’ পাশাপাশি তিনি এও জানান যে দিল্লি সরকারের প্রতি তার ভরসা আছে ।
দীপক পান্ডে নামে এক এক্স ব্যবহারকারী দেওবন্দ দারুল উলূম মাদ্রাসাকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলে বলেছেন, ‘ইংরেজরা কংগ্রেসকে তৈরি করেছিল নিজেদের বাঁচনোর জন্য । আর আজকে এই কংগ্রেসই ওই সমস্ত সংগঠনগুলোকে বাঁচাচ্ছে । এই কংগ্রেস ধর্মের ভিত্তিতে ভারতকে দু’বার ভাগ করেছে । আর নতুন দেশ দুটি একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায় কে দিয়েছে । তাহলে তাদের ভারতে কেন রেখেছে? আর রাখার পরেও তাদের জনসংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে কংগ্রেস । এখন ওরা তৃতীয় দেশের জন্য দাবি করছে । ভারতের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে হিন্দু সংখ্যালঘু অথবা হিন্দু নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে ।’ তিনি জোরালোভাবে দেওবন্দ দারুল উলূম মাদ্রাসাকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছেন ।
একটি বৈদ্যুতিক সংবাদ মাধ্যমে ডিবেট অনুষ্ঠানে
হিন্দু ধর্ম গুরু দীপঙ্কর সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘যখন দেশে একতা ও অখন্ডতার দরকার তখন এই ধরনের বিষয় (গাজওয়া-ই-হিন্দকে) কি কোন একটি ইঙ্গিত বহন করছে ?’ ধর্মগুরু এইচএস রাবত বলেন,’এই ধরনের ফতোয়া আসলে হল দেশদ্রোহীতার শামিল । এতে দেশের অভ্যন্তরে হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে বিভেদের সৃষ্টি হবে । আর সরকারের উচিত যে এই ধরনের ফতোয়া দেওয়া সংগঠন বা ব্যক্তির ওপর কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া ।’
আসলে, দারুল উলূমের সাইটে (darulifta-deoband.com) একটি প্রশ্ন উত্থাপিত করা হয়েছে । যাতে বলা হয়েছে হাদিসে ভারত আক্রমণের কথা বলা আছে, তা কি উপমহাদেশে সংঘটিত হবে? আর এই যুদ্ধে যে শহীদ হবে তাকে কি মহান শহীদ বলা হবে? আর যে গাজী হবে সে কি বেহেশতে থাকবে ? এ প্রশ্নের জবাবে দারুল উলূমের পক্ষ থেকে একটি ফতোয়া জারি করা হয়। ফতোয়ায় ‘সুনান-আল-নাসা’ নামের বইটির কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এই বইটিতে গাজওয়া-ই- হিন্দের একটি সম্পূর্ণ অধ্যায় রয়েছে। এতে হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর হাদিস উল্লেখ করে বলা হয়েছে-‘আল্লাহর রাসূল ভারত আক্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমি বেঁচে থাকলে এর জন্য আমি নিজেকে এবং আমার সম্পত্তি উৎসর্গ করব। আমি সর্বশ্রেষ্ঠ শহীদ হব।’ এই ফতোয়ায় আরও বলা হয়েছে যে, দেওবন্দের মুখতার অ্যান্ড কোম্পানি এই বিখ্যাত বইটি ছাপিয়েছিল। এই ফতোয়ায় ভারতের ওপর হামলাকে ন্যায়সঙ্গত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
এরপর ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অব চাইল্ড রাইটস এই বিষয়টি তুলে ধরে এবং সংস্থার চেয়ারপার্সন প্রিয়াঙ্কা কানুনগো সাহারানপুর জেলার ডিএম এবং এসপিকে এই বিষয়ে একটি এফআইআর নথিভুক্ত করার জন্য একটি নোটিশ জারি করেছেন । এনসিপিসিআর নোটিশে বলেছে, এই মাদ্রাসা ভারতের শিশুদের দেশবিরোধী প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এতে ইসলামি মৌলবাদের প্রসার ঘটবে। শিশুদের মধ্যে দেশের প্রতি বিদ্বেষ জন্মাবে। কমিশন বলেছে যে শিশুদের অহেতুক হয়রানি করা বা শারীরিক ব্যথা সৃষ্টি করা কিশোর বিচার আইনের ৭৫ ধারার লঙ্ঘন।’
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অশ্বিনী উপাধ্যায়কে একটি ভিডিওতে বলতে শোনা যায়, কিছুদিন আগে একটি নিষিদ্ধ সংগঠন তাদের একটি ভিশন ডকুমেন্ট জারি করেছিল যাতে ৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে মুসলিম রাষ্ট্র করার কথা বলা হয়েছে । অর্থাৎ তাদের রিকল্পনা হলো ২০৪৭ এর মধ্যে ভারতকে একটা মুসলিম রাষ্ট্র পরিণত করা । এখন দেওবন্দ এই পরিকল্পনার উপর সিলমোহর দিয়েছে দেওবন্দ । আর যারা গজওয়ায়ে হিন্দদের জন্য যারা কাজ করবে তারা জান্নাতে যাবে । অর্থাৎ অনুপ্রবেশ,ধর্মান্তরন সঠিক পদ্ধতি, সন্ত্রাসবাদ ছড়ানো গজবায় হিন্দের জন্য সঠিক, গজবায়ে হিন্দের জন্য যারা পাথর ছোড়ে, জিহাদ করে তাদের কোন দোষ নেই । তার মানে কাশ্মীরে যা হয়েছে সেটা সঠিক । বাংলায় যেটা হচ্ছে সেটাও সঠিক । এক কথায় হিন্দুদের খতম করে ভারতের শরিয়া আইন লাগুক করা ওদের নজরে বৈধ কাজ । এটা আমি বলছি না, দারুল উলুম দেওবন্দ বলছে গজবায়ে হিন্দের জন্য সবকিছু বৈধ ।’ আইনজীবীর অভিযোগ, ‘দারুল উলুম দেওবন্দে এর আগে অনুপ্রবেশকারী ধরা পড়েছে, সন্ত্রাসবাদি ধরা পড়েছে, এই গোষ্ঠীটি বেশ কয়েকবার সন্ত্রাসবাদীদের জন্য আইনি লড়াই লড়েছে । তিন তালাক হালালার পিআইএল-এর বিরুদ্ধে গিয়েছিল দেওবন্দ । অর্থাৎ ইসলাম এর যত কুরীতি আছে সবকিছুর সমর্থন করেছে দারুল উলুম দেওবন্দ । ভারতের সংস্কৃতি ভারতীয় মানসিকতারও বিরোধ করে দেওবন্দ ।’।