এইদিন ওয়েবডেস্ক,জম্মু-কাশ্মীর,১২ জুন : কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার আসার পর বিগত ১০ বছরে জম্মু-কাশ্মীরের আমূল পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে । ব্যাপকভাবে পরিকাঠামো উন্নয়ন থেকে কর্মসংস্থান হয়েছে । বিগত ১০ বছরে রেকর্ড পর্যটক এসেছিল জম্মু-কাশ্মীরে । কিন্তু উপত্যকার সিংহভাগ মুসলিমদের মন থেকে সন্ত্রাসবাদী মানসিকতা ও পাকিস্তান প্রেম উপড়ে ফেলা সম্ভব হয়নি । কেন্দ্রে ফের নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকার এসেছে । তবে বিজেপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় জোটসঙ্গীদের উপর নির্ভর করতে হয়েছে । আর একদিকে বিরোধী ইন্ডি জোট যেমন এরফলে শক্তিশালী হয়েছে, অন্যদিকে ফের মাথাচাড়া দিচ্ছে উপত্যকার সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি । যেকারণে জম্মু-কাশ্মীরে ইসরায়েলের নীতি গ্রহণের দাবি উঠছে ।
গাজায় ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী সংগঠন হামাসকে নির্মুল করতে যেভাবে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিয়েছে,একইভাবে জম্মু- কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদের শিকড় উপড়ে ফেলতে একই নীতি গ্রহণের দাবি তুলেছেন লেখক আনন্দ রঙ্গনাথন ।
আনন্দ রঙ্গনাথন(Anand Ranganathan), ভারতীয় রাজনৈতিক ভাষ্যকার এবং বিশিষ্ট টিভি প্যানেলিস্ট, কাশ্মীরে ইসরায়েলের মতো সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন। রঙ্গনাথনের মতে, সরকারকে কাশ্মিরী পন্ডিতদের বসতি স্থাপনের কার্যকলাপে জড়িত হতে হবে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে এবং কাশ্মীর উপত্যকায় সীমান্ত সুরক্ষিত করতে হবে। এএনআই সম্পাদক স্মিতা প্রকাশ আয়োজিত একটি চ্যাট শো চলাকালীন তাঁর বক্তব্য সামনে আসে। শোতে অন্যান্য সহ-প্যানেলিস্টদের মধ্যে ছিলেন অভিজিৎ আইয়ার মিত্র, সুশান্ত সরিন এবং তাহসিন পুনাওয়ালা ।
শো চলাকালীন, রঙ্গনাথন বলেছিলেন,’আমি কাশ্মীর নিয়ে মোটেও উৎসাহী নই। আমি কাশ্মীরে ভ্রমণও করতে চাই না । জম্মু-কাশ্মীরে সরকারের সমস্ত নীতি আমাদের ভারতীয়দের ব্যর্থ করেছে। অবশ্যই কাশ্মীরি হিন্দুদের থেকে শুরু করে, এবং গত বছর এই উপত্যকায় প্রায় ১৬ মিলিয়ন পর্যটক বা ভারতীয়রা এসেছিলেন, আপনি বলছে যে জম্মু-কাশ্মীরে সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু আপনার যেটা করা উচিত তা নিয়ে কাজ করছেন না। আপনি ৭ লাখ কাশ্মীরি হিন্দুকে পুনর্বাসন করেননি। পর্যটকদের কাছ থেকে আসা সব টাকাই যাচ্ছে সন্ত্রাসীদের হাতে। এই সন্ত্রাস/জঙ্গিবাদ এবং আপনি যাই বলুন না কেন তা অব্যাহত থাকবে। কাশ্মীর নিয়ে ইসরায়েলের মতো সমাধান চাই। ইসরায়েল যে এটি সমাধান করতে অক্ষম তা এই কারনে নয় যে ইসরায়েল এটি সমাধানের জন্য কাজ করছে না। ইসরায়েল তার জনগণকে সহায়তা করেছে কিন্তু আমরা তা করিনি ।’
এদিকে তাঁর এই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর কথিত ফ্যাক্ট ফাইন্ডার তথা কট্টর ইসলামি সাংবাদিক মহম্মদ জুবেরের মত কিছু লোকজন বিতর্ক উসকে দিয়ে দাবি করে রঙ্গনাথন জম্মু-কাশ্মীরে ‘গনহত্যার’ আহ্বান জানাচ্ছেন । সেই বিতর্কে জল ঢেলে দিয়ে আনন্দ রঙ্গনাথন তার এক্স হ্যান্ডেলে একটি স্পষ্টীকরণ জারি করেছেন যে,’ইসরায়েলের মতো একটি সমাধানের আহ্বান জানানো- ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, বসতি স্থাপন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করা, সীমান্ত সুরক্ষিত করা- গণহত্যার আহ্বান নয়; আমি আরেকটি গণহত্যা প্রতিরোধের আহ্বান জানাচ্ছি । আমি ইসরায়েলের পাশে আছি। আমি কাশ্মীরি হিন্দুদের পাশে আছি। এবং আমি প্রতিটি শব্দের পাশে আছি ।’
উল্লেখ্য,মোদী ৩.০ সরকারের শপথ গ্রহনের অব্যবহিত পরেই ৯ জুন জম্মু-কাশ্মীরে বৈষ্ণো দেবীর মন্দিরে যাওয়া পূণ্যার্থীদের বাসে হামলা চালায় পাকিস্তানি ও স্থানীয় মিলে ৪ জন সন্ত্রাসবাদী । ওই সন্ত্রাসবাদী হামলায় নিহত হয়েছে শিশুসহ ৯ জন পূণ্যার্থী । গুরুতর আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন শিশুসহ অন্তত ৪১ জন । এই হামলার মাস্টারমাইন্ড হল সন্ত্রাসী আবু হামজা নামে এক সন্ত্রাসবাদী ।
এই ঘটনার জের কাটতে না কাটতেই তিন দিনের মাথায় মঙ্গলবার গভীর রাতে জম্মু ও কাশ্মীরের ডোডা জেলার ছত্তরগালা এলাকায় একটি সেনা ঘাঁটিতে পুলিশ ও রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের একটি যৌথ দলের উপর এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা । নিরাপত্তাবাহিনী এনকাউন্টার অভিযান চালাচ্ছে । খতম হয়েছে এক সন্ত্রাসবাদী । সন্ত্রাসীদের বাঁচাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে স্থানীয় কয়েকজন মুসলিম ব্যক্তি । সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর জখম হয়েছেন দুই সেনা ।।