এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৩ ডিসেম্বর : বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী মুসলিমরা শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য লক্ষ্মী হলেও রাজ্যের হিন্দুদের কাছে মূর্তিমান আপদ । কারণ অনুপ্রবেশকারী মুসলিমরা একচেটিয়া ভাবে তৃণমূল কংগ্রেসকেই ভোট দেয় বলে দাবি করা হয় । কিন্তু বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় অনুপ্রবেশকারী মুসলিমদের কারণে জনবিন্যাসের আমল পরিবর্তন ঘটে গেছে । কোন কোন জায়গায় কার্যত হিন্দু শুন্য পর্যন্ত হয়ে গেছে বলে দাবি করা হয় । এবারে এই প্রবনতায় লাগাম টানতে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানালেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী
আজ সন্ধ্যায় বিধানসভায় নিজের অফিসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাজ্য সরকারের কাছে একগুচ্ছ প্রস্তাব দেন । শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘আমি মনে করি এই হাউসের দিল্লির ভারত সরকারকে অনুরোধ করে সনাতন বোর্ড গঠনের প্রস্তাব আনা উচিত । লাভ জিহাদের বিরুদ্ধে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, গুজরাটের মত আইন আনা উচিত । জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিল আনা উচিত । ২ টির বেশি সন্তানের জন্মনিয়ন্ত্রণ আনার জন্য । ধর্ম পরিবর্তন আটকানোর জন্য বিল আনা উচিত । এবং অবশ্যই, গোটা পৃথিবীতে নাগরিক পঞ্জি আছে, তাই আমাদের দেশেও, ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির মাটি পশ্চিমবঙ্গ থেকে আওয়াজ উঠুক ‘উই ওয়ান্ট এনআরসি’ ।’
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটা দেশের নিজস্ব নাগরিক পঞ্জিকা আছে৷ আমাদের দেশে কেন থাকবে না ? তাহলে যে রোহিঙ্গাগুলো, যাদের ছবিগুলো আমি দুপুরের আগে দেখাচ্ছিলাম , সেই লোকগুলো থাকতে পারবে না । গুলশান কলোনিতে সাড়ে তিন হাজার ভোটার,এক লক্ষ আটানব্বই হাজার জনসংখ্যা থাকবে না । এটা হিন্দু মুসলমানের বিষয় নয় । এটা ভারতীয়দের নিজস্ব বিষয়৷’
ওয়াকফ সংশোধনী বিলে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধিতার প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘বাজার মাতানো আর মুসলমান ভোটকে কাছে টানা এটাই উদ্দেশ্য । এমনি তো সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ভোট পেয়েছেন । মালদা, উত্তর দিনাজপুর, মুর্শিদাবাদে অল্প কিছু এদিক-ওদিক হয়েছে । সেগুলোকে ফিরিয়ে এনে মুসলিম ভোট ব্যাংকে একসাথে করতে চান । এই মুখ্যমন্ত্রী সিএএকে এনআরসি বলে বাংলায় আগুন লাগিয়েছিলেন,শ্যামবাজার থেকে সিথিরমোড় হেঁটে । এই সিদ্দিকুল্লা মাদ্রাসার বাচ্চাদের নামিয়ে বর্ধমানে প্রথম বাসে আগুন লাগিয়েছিলেন । আমরা এর বিরোধিতা করি এবং আমরা মনে করি দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়েছিল, মুসলিমদের জন্য মোহাম্মদ আলী জিন্না তৈরি করেছিলেন পাকিস্তান, আর হিন্দুদের জন্য হয়েছিল ভারতবর্ষ ৷ তাই হিন্দুস্তান ৷ আমরা মনে করি ১৯৪৭ সালের ৩ জুন এই বিধানসভার যার নাম ছিল আইনসভা ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির নেতৃত্বে জ্যোতিবাবুদের উপস্থিতিতে ৫৮ জন হিন্দু আইন সভার এমএলএ রেজুলেশন করে পশ্চিমবঙ্গকে ভারতের সঙ্গে রেখেছিলেন । আর বাকি অংশ পূর্ব পাকিস্তানের গেছে । সেদিনও সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর মত আইনসভার ২১ জন মুসলিম এমএলএ ভোট দিয়েছিল পাকিস্তান ভুক্তির জন্য । ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জিকে প্রণাম করি, জ্যোতি বাবুকে সম্মান করি, তারা যদি সেদিন না করতেন আজকে বাংলাদেশের মতো আমাদের প্রত্যেকের অবস্থা হতো ।’ বাংলাদেশে চলমান হিন্দু নির্যাতনের বিষয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’মেয়েরা শাঁখা পলা পড়তে পারছে না, চিন্ময় প্রভু আইনজীবী পাচ্ছেন না । মাথায় সিঁদুর দেওয়া যাচ্ছে না । গলার কন্ঠি নেই । মাথায় টিকি বা শিখা কেটে ফেলতে হচ্ছে । ধুতি পরা বন্ধ করে দিতে হয়েছে । হিন্দু ছেলেমেয়েরা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় যেতে পারছে না । হিন্দুদের বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ । ১৯৪৭ এর ২০ জুন ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি যদি আমাদের এখানে না রেখে যেতেন আমাদের অবস্থা একই হত ।’
শ্রীরামপুরের তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ তথা দলের মুখ্য সচেতক ওয়াকফ নিয়ে কল্যাণ ব্যানার্জির মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’বলছে পাঁচ দশ পনের ২৫/৫০ জন নামাজ পড়লে এই জায়গাটা নাকি ওয়াকফের হয়ে যাবে৷ বলেন কি উনি ? মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দরকার । কিন্তু পরিষ্কার লেখা আছে যে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হলেই পাস হয়ে যাবে ।ওয়াকফ এমেন্ডমেন্ট বিল ২০২৪ অর্ডিনারি বিল এটা কনস্টিটিউয়েন্ট বিল নয়- সাধারণ গরিষ্ঠতা থাকলেই পাস হয়ে যাবে ।’ তিনি বলেন,’গতকাল আমরা বনগাঁতে ছিলাম সেই সুযোগ লাগিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মিথ্যা কথা বলে গেছেন । কুড়ি মিনিটের জায়গায় ৪২ মিনিট বলতে দিয়েছে । লাইভ সম্প্রচার করে রাজনীতি করেছে । স্পিকার পার্টির একজন হিসেবে কাজ করছে । ইনিই হাউসকে বলছেন দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দরকার । আমি দুবার লোকসভায় ছিলাম । উনি লোকসভা কি জানেন ? এটা সাধারণ বিল এবং সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দরকার।’
কেন্দ্রের আনা ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাস হওয়া নিয়ে আত্মবিশ্বাসী শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’দেখবি আর জ্বলবি লুচির মত ফুলবি । সিএএ কার্যকর হয়েছে৷ ৩৭০ ধারা বাতিল হয়েছে এবং কাশ্মীরে ভোট হয়েছে । তিন তালাক বাতিল হয়েছে । পার্ক সার্কাস ময়দানে এই সিদ্দিকুল্লারা মুসলিম পার্সোনাল লবর্ডকে নিয়ে মিটিং করেছিল । কিন্তু আটকাতে পারেনি ।’।