প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৯ জুলাই : মদ খেয়ে মৃত্যু হওয়া ব্যক্তির সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বর্ধমানে।শুক্রবার মৃতের সংখ্য চারজন থাকলেও শনিবার তা বেড়ে ছয়ে পৌছে গিয়েছে।আর তা নিয়ে এখন তোলপাড় পড়ে গিয়েছে রাজ্য জুড়ে । কিন্তু বিষাক্ত মদ খেয়ে রাজ্যে এই প্রথম কারুর মৃত্যু হল এমনটাও নয়। তথ্য বলছে ,২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে বিষাক্ত চোলাই মদ খেয়ে শতাধীক মানুষের মূত্যু হয়েছিল দক্ষিন ২৪ পরগনার সংগ্রামপুরে।এর পর সাত বছর কাটতে না কাটতে ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে বিষাক্ত চোলাই মদ খেয়ে ১২ জনের মৃত্যু হয় নদীয়ার শান্তিপুরের ।এত মানুষের মৃত্যু নিয়েও ওই সময়ে রাজ্য জুড়ে হইচই কম হয়নি।তবুও প্রশাসন এখনও পারেনি কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে পূর্ব বর্ধমান সহ এই রাজ্যের সমস্ত জেলায় চোলাই মদ তৈরি ও বিক্রী পুরোপুরি বন্ধ করতে।তাই চোলাই মদ খেয়ে মৃত্যুর আশঙ্কা এখনও থেকেই গিয়েছে ।
চোলাই কারবারিরা এখন মদ তৈরির জন্য
বেছে নিয়েছে ঝোপঝাড় ঘেরা দামোদরের চরকে। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর সহ জেলার অন্য জায়গার চোলাই কারবারীরা রাতে দামোদরের চরে দেদার তৈরি করেন চোলাই মদ । জামালপুরের হৈবতপুর এলাকার দামোদরের চর এখন হয়ে উঠেছে চোলাই মদ তৈরির নিরাপদ শিল্প তালুক।বিভিন্ন রাসায়নিক সহযোগে তৈরি হওয়া সেই চোলাই মদ জেলার বিভিন্ন জায়গার পাশাপাশি ভিন জেলাতেও পাচার হয়ে যাচ্ছে।এই মদ খাওয়ার কারণে শান্তিপুর কিংবা সংগ্রামপুরের মত ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেগেলে অবাক হওয়ারও কিছু থাকবে না বলেই মনেকরেন হৈবতপুরের বাসিন্দারা ।
জামালপুর ব্লকের বেরুগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম হৈবতপুর । এই গ্রামের এক পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে দামোদর নদ।সেই দামোদরের বিস্তির্ণ চর এখন ঢাকা পড়েছে ঝোপ জঙ্গলে।বড় বড় টিনের ড্রামে ভরে রাখা গুড় মিশ্রিত পচাই ,ইস্ট ,ইউরিয়ার বাট ও বড় আকারের এক ধরণের সাদা টাবলেট তারা দামোদরের চরে নিয়ে যান । চরের নির্জন ঝোপের মাঝখানে নির্দিষ্ট দূরত্ব অন্তর বড় বড় উনান জ্বালিয়ে চোলাই কারবারীদের দল তৈরি করে চোলাই মদ। নির্দিষ্ট দূরত্ব অন্তর উনান জ্বলানো হয়।সেই উনানের অাঁচে বড় বড় হাঁড়িতে বিভিন্ন উপকরণ ফুটিয়ে তাঁরা চোলাই মদ তৈরি করেন।অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাসায়নিক ব্যবহার করে তৈরি ওই মদ যে আদৌ মানুষের খাওয়ার যোগ্য নয় সেটা ভাল ভাবেই বোঝেন মদ কারবারীরা ।তবুও মোটা টাকা মুনাফা লোটার জন্য এই চোলাই মদই তাঁরা মদ্যপায়ীদের বিক্রি করে চলেছে ।
দামোদরের চরের ঝোপ জঙ্গলের মধ্যে যে চোলাই মদ তৈরি হয় সেই কথা স্বীকারও করেছেন বেরুগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের হৈবতপুর গ্রামের সদস্য প্রতিভা ঘোষ।তিনি বলেন,’আমরা চাই পুলিশ ও আবগারি দফতর কড়া ব্যবস্থা নিয়ে দামোদরের চরে মদ তৈরি বন্ধ করুক ।’ হৈবতপুর গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, ‘দামোদরের চরে ঝোপ জঙ্গলে মধ্যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চোলাই মদ তৈরি হয়। আগে দিনে ও রাতে সমান তালে মদ তৈরি হত ।বর্ধমানে মদ খেয়ে কয়েকজন মারা যাওয়ার ঘটনার পর এখন কদিন দিনের বেলা মদ তৈরি বন্ধ হয়েছে। তবে কারবারীরা রাতে খুব সন্তর্পণে মদ তৈরি করা চালিয়ে যাচ্ছে ।’ পাশাপাশি গ্রামবাসীরা এও জানান,যেসব দ্রব্য ব্যবহার করে ওই মদ তৈরি হয় তা মানব শরীরের পক্ষে হানিকর বলেই তাঁরা মনে করেন।এ ছাড়াও চোলাই মদের বর্জ ফেলা হয় দামোদরের জলে।তার ফলে দামোদরেও দূষণ বাড়ছে। এই চোলাই মদ খেয়ে যদি শান্তিপুর কিংবা সংগ্রামপুরের মত ঘটনা ঘটে যায় তাহলে প্রশাসনেরই মুখ পুড়বে।এলাকারও বদনাম হবে।তাই তাঁরা চান, চোলাই কারবারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে প্রশাসন দামোদরের চরে চোলাই মদ তৈরি পুরোপুরি বন্ধ করেদিক।
জামালপুর ব্লকের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার বলেন,’ঘটনা যদি সত্যি হয়, উচ্চ কর্তৃপক্ষকে তা জানানো হবে।পাশাপাশি কড়া আইনানুগ পদক্ষেপও নেওয়া হবে“। এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) সুপ্রভাত চক্রবর্তী জানিয়েছেন, এইসব কোন ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।দামোদরের চরের যেখানে যাঁরা মদ তৈরি করে তাঁদের বিরুদ্ধে আবগারি দফতর ও পুলিশ যৌথ ভাবে কড়া পদক্ষেপ নেবে।দামোদরের চরে চোলাই মদ তৈরির কারবার নির্মূল করতে অভিযান জোরদার করা হবে ।’।