এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৯ জুলাই : রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি চিহ্নিতকরণের নামে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে নাকি বাঙলাভাষিদের উপর নির্যাতন করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও তার দল তৃণমূল কংগ্রেস । বাংলার অস্মিতা রক্ষার নামে ইতিমধ্যে বোলপুর থেকে কথিত “ভাষা আন্দোলন”ও শুরু করে দিয়েছেন মমতা । গত ২৭ জুলাই বিকেলে তিনি এক্স-এ একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করেছিলেন যে সেখানে নাকি মালদার চাঁচলের এক পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবারের উপর নির্যাতন চালিয়েছে দিল্লি পুলিশ । যদিও দিল্লী পুলিশের একজন ডেপুটি কমিশনার অভিষেক ধানিয়া পালটা একটা ভিডিও বার্তায় মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবিকে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে জানিয়েছেন ।
মমতা ব্যানার্জি ওই টুইটে যে ভিডিও পোস্ট করেছেন সেখানে এক ব্যক্তি দাবি করে যে দিল্লি পুলিশ তাকে নাকি মারধর করেছে৷ সে আঘাতের স্থান দেখানোরও চেষ্টা করে৷ কিন্তু তার শরীরে তেমন কোনো আঘাতই দেখা যায়নি । মমতা এটাকেই ইস্যু করে প্রতিক্রিয়ায় লিখেছিলেন,’জঘন্য!! ভয়াবহ!! দেখুন দিল্লি পুলিশ কীভাবে মালদার চাঁচলের এক পরিযায়ী পরিবারের সদস্য একটি শিশু এবং তার মাকে নির্মমভাবে মারধর করেছে। দেখুন কীভাবে বিজেপির বাঙালিদের বিরুদ্ধে ভাষাগত সন্ত্রাসের শাসনকালে একটি শিশুও হিংসার নিষ্ঠুরতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না! তারা এখন আমাদের দেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?’
যদিও পূর্ব দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার অভিষেক ধানিয়া সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ‘এক্স’-এ পোস্ট করেছেন যে একজন বাংলাভাষী মহিলা এবং তার সন্তানকে দিল্লি পুলিশ লাঞ্ছিত করেছে। তথ্য পাওয়ার পরপরই আমরা তদন্ত শুরু করি এবং জানতে পারি যে মহিলার নাম সঞ্জানু পারভীন… জিজ্ঞাসাবাদের সময়, তিনি বলেন যে ২৬শে জুলাই, রাত ১০:৩০ টার দিকে, সাদা পোশাকে থাকা চারজন পুলিশ সদস্য তাদের বাড়িতে এসে তাদের একটি নির্জন এলাকায় নিয়ে যায় যেখানে তারা তাদের মারধর করে এবং তাদের কাছ থেকে ২৫,০০০ টাকা দাবি করে, যা তারা তাদের দেয়।
তিনি বলেছেন,’পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে, আমরা গত রাত থেকে একাধিক দল গঠন করেছি। কারিগরি ও স্থানীয় গোয়েন্দা তথ্যের পাশাপাশি সিসিটিভি ফুটেজের ভিত্তিতে আমরা বিভিন্ন প্রমাণ সংগ্রহ করেছি। সেই প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা জানতে পেরেছি যে এই মহিলার বলা পুরো গল্পটি ভিত্তিহীন… জিজ্ঞাসাবাদের সময়, তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে তার আত্মীয়, যিনি পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলায় থাকেন, একজন রাজনৈতিক কর্মী, এবং তার অনুরোধে, তিনি এই ভিত্তিহীন ভিডিওটি তৈরি করে তার সাথে শেয়ার করেছেন। পরে, তিনি স্থানীয় মিডিয়াতে ভিডিওটি প্রচার করেছিলেন… পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত এবং তদন্তের পর, আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে পুরো ভিডিওটি ভিত্তিহীন এবং বানানো । দিল্লি পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এই ভিডিওটি ইচ্ছাকৃতভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা হয়েছে। আরও তদন্ত এখনও চলছে।’
এদিকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ঘটনার দিনের একটা সিসিটিভি ফুটেজ এক্স-এ শেয়ার করে তৃণমূল কংগ্রেসের এই ‘বানানো গল্পের’ প্রমান দিয়েছেন৷ তিনি ওই পোস্টে লিখেছেন,’মিথ্যেবাদী মমতা জেনে গেছে জনতা . মুখ্যমন্ত্রীর ২৭ জুলাই, ২০২৫ এই পোস্টে দাবি করেছিলেন যে দিল্লিতে আধার যাচাইয়ের নামে একজন বাংলাভাষী মহিলা ও তার ছেলে কে দিল্লি পুলিশ মারধর করেছে। আমি বিশ্বস্ত সূত্র দ্বারা যা জানতে পেরেছি যে ওই মহিলা; সাজনুর পারভিন প্রাথমিকভাবে দাবি করেছিলেন যে চারজন ব্যক্তি, যারা নিজেদের পুলিশ কর্মী বলে দাবি করেছিল ২৫ তারিখ তাদের বাড়ি এসে তাদের পরিবারকে বাংলাদেশি নাগরিক বলে অভিযুক্ত করে এবং পরের দিন, অর্থাৎ ২৬ জুলাই, তাকে ও তার দুই সন্তানকে জোর করে মঙ্গলম হাসপাতালের কাছে একটি পার্কে নিয়ে যায়, জোরপূর্বক আটক করে এবং ২৫,০০০ টাকা মুক্তিপণ দেওয়ার পর মুক্তি দেওয়া হবে এমন ধমকি দেয়।’
তিনি আরও লিখেছেন,’কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজে অসঙ্গতি প্রকাশ পাওয়া যাচ্ছে ! পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে যে তিনি তার সন্তানদের নিয়ে একাই বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন, যা বল প্রয়োগের দাবির সাথে মিলছে না।
সাজনুর পারভিন ইতিমধ্যেই নাকি স্বীকার করে নিয়েছেন যে তিনি কিছু ব্যক্তির কথায় প্রভাবিত হয়ে মিথ্যে গল্পটি সাজিয়েছিলেন। আসল ঘটনা হলো, তার মামা যিনি একজন রাজনৈতিক কর্মী, উনি একজন সাংবাদিকের পরামর্শে এই মিথ্যা গল্প তৈরি করিয়েছিলেন এবং যে ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হয় তা সম্পূর্ণ মিথ্যে। এই রকম অনেক ভুয়ো গল্প ছড়ানো হবে, তাই এবার কানে শুনে নয়, চোখে দেখে বিশ্বাস করুন ।’
পাশাপাশি মমতা ব্যানার্জি ও পূর্ব দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার অভিষেক ধানিয়ার এক্স পোস্টের লিঙ্ক শেয়ার করে বিজেপি নেতা সজল ঘোষ ফেসবুকে লিখেছেন ,’নিচের এই ব্যক্তি হলেন দিল্লী পুলিশের একজন ডেপুটি কমিশনার । নাম – অভিষেক ধানিয়া । গতকাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা টুইটের আমি স্ক্রিন রেকর্ডিং দিয়েছিলাম, যেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য ছিল বাঙালি জেনে দিল্লির পুলিশ কিভাবে এক নিরপরাধ পরিবারের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে । আজ কিছুক্ষণ আগে দিল্লী পুলিশের এই টুইট আবার প্রমাণ করলো গতকাল আমাদের কথা কতটা সত্যি ছিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিভাবে ফেক নিউজ এর মাধ্যমে জাতি বিভেদ ছড়াচ্ছে আপনারা নিজেরাই দেখুন। আপনাদের সুবিধার্থে, মমতা ব্যানার্জির টুইটার লিংক এবং দিল্লী পুলিশের টুইটার লিঙ্ক দুটোই দিয়ে দেওয়া হল।’।