শ্যামসুন্দর ঘোষ,মন্তেশ্বর(পূর্ব বর্ধমান),৩১ জুলাই : সকাল থেকেই মেঘলা আকাশ । তবে তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি দিনভর৷ বিকেলের পর থেকে উত্তর দিক থেকে ঘন কালো মেঘ দেখা যায় । সময়টা তখন বিকেল ৬ টার আশপাশ । বাড়ির উত্তর দিকের আকাশ থেকে একটা বিদ্যুতের ঝিলিক আসে বাড়ির মাথার উপর ৷ কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিকট একটা শব্দে চারদিক কেঁপে ওঠে৷ তার সাথে সাথেই বাড়ির উঠানের নারকেল গাছের মাথায় আগুন ধরে যায় ৷ বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর থানার হাসপাতাল পাড়ার বাসিন্দা গৃহবধূ চম্পা বাগ আতঙ্কে ভরা বিস্ফোরিত চোখে কথাগুলো বলার পর একটা দীর্ঘশ্বাস নেন ।
ফের তিনি বলতে শুরু করেন,’ওমন বিকট শব্দ আমি জীবনে শুনিনি । আমরা প্রচন্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম । বাড়ির ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সাথে নিয়ে দ্রুত ঘরের ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিই । জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখি চারিদিকে ধোঁয়ায় ভরে গেছে । নারকেল গাছের মাথাটা তখন দাউদাউ করে জ্বলছে । সেখান থেকে আগুনের পিন্ড এসে পড়ে বারান্দায় বৃষ্টির জল আটকানোর জন্য টাঙিয়ে রাখা পলিথিনে আগুন ধরে গেছে । দরজা খুলে জল ছুড়ে কোনো রকমে আগুন নেভাই ৷’ তিনি আরও বলেন,’ভাগ্যিস আগে ভাগে গরু ও ছাগলগুলোকে গোয়ালে ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম । তাই ওরা প্রানে বেঁচে গেছে ৷’
মন্তেশ্বর হাসপাতালের গায়েই অ্যাসবেস্টসের ছাউনি দু’কামরার মাটির বাড়ি চম্পা বাগদের । তার স্বামী অজিত বাগ পেশায় জনমজুর । হতদরিদ্র পরিবার । আজকের সন্ধ্যায় বজ্রপাতে তাদের বিশেষ ক্ষয়ক্ষতি না হলেও তাদের প্রতিবেশী বাথান হাজরার বাড়ির বিদ্যুতের লাইন পুড়ে গেছে বলে জানা গেছে । বিকল হয়ে গেছে সমস্ত বৈদ্যুতিক বাতিগুলি । বরাত জোরে প্রাণে বেঁচে যায় বাথানের বাড়ির এক বয়স্ক সদস্য৷ বজ্রপাতের সময় তিনি একতলা মাটির বাড়ির বারান্দায় বসেছিলেন বলে জানা গেছে । অল্পবিস্তর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি । তবে দুই পরিবার বজ্রপাতের আতঙ্ক এখনো কাটিয়ে উঠছে পারছে না ।
প্রসঙ্গত,রাজ্যে প্রতি বছরেই বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা পূর্ববর্তী বছরকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে । ২০১৯ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে রাজ্যে বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা বেড়েছিল প্রায় ৯৯ শতাংশ। গত বছর বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা ছিল ২৮। এবার সংখ্যাটা আরও অনেকটাই বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।দুর্যোগের সময়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলেছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। কংক্রিটের ছাদের নীচে থাকার পরামর্শ। উঁচু বাড়ি, বহুতল বা গাছের আশপাশ থেকে সরে আসতে হবে। পাকা ছাদের নীচেই আশ্রয় নেওয়ার কথা বলা হয়েছে । বৃষ্টিপাতের সময় পারতপক্ষে বাইরে না বের হওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ।।