এইদিন ওয়েবডেস্ক,মালদা,২৯ এপ্রিল : বৃহস্পতিবার ছিল ভোট । তাই সকাল সকাল স্নান সেরে ছেলের সঙ্গে নিয়ে ভোট দিতে গিয়েছিলেন বছর পঞ্চাশের এক বিধবা মহিলা । কিন্তু তাঁর ভোটার কার্ড দেখে ভোটার লিস্টে নাম মেলাতে গিয়ে ভিমড়ি খাওয়ার জোগাড় পোলিং অফিসারের । প্রথমে কিছুক্ষন মহিলার দিকে তিনি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন । তারপর তাঁকে সটান প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে পাঠিয়ে দেন । শেষে প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে গিয়ে মহিলা জানতে পারেন খাতায় কলমে ইহজগতের সঙ্গে তাঁর যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে । অর্থাৎ তিনি মৃত । তাই ভোটার লিস্ট থেকে তাঁর নাম ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে । সেই কারনে আইনত তিনি ভোট দেওয়ার অধিকারী নন । একজন জলজ্যান্ত মানুষকে মৃত দেখিয়ে ভোট দিতে না দেওয়ার তীব্র প্রতিবাদ করেন মালদা জেলার মানিকচকের বাসিন্দা সত্যবালা মন্ডল নামে ওই মহিলা । কিন্তু কোনও কথাতেই কাজ না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তিনি বুথের মধ্যে কার্যত ধর্ণায় বসে পড়েন । এদিকে এই ঘটনার কথা চাওড় হতেই চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায় ।
এদিন রাজ্যের অষ্টম বা অন্তিম দফার ভোট পর্বে মালদা জেলার একাধিক আসনে ভোট গ্রহন হচ্ছে । তার মধ্যে অন্যতম মানিকচক বিধানসভা । মানিকচক শিক্ষা নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের ১১২ নম্বর বুথের ভোটার মানিকচক সিংহপাড়ার বাসিন্দা সত্যবালা মণ্ডল । এদিন সকালের দিকে ছেলে শ্রীকান্তর সঙ্গে ভোট দিতে গিয়েছিলেন তিনি ।
সত্যবালাদেবী বলেন, ‘বুথের ভিতরে ঢুকে আমি আমার ভোটার কার্ডটা দেখাতেই অফিসার জানান, আমি নাকি মারা গেছি । তাই ভোট দিতে পারবো না । এই কথা শোনার পর আমি ও আমার ছেলে প্রতিবাদ করলে আমাদের বিডিও অফিসে খোঁজ নেওয়ার জন্য বলা হয় ।’
জানা গেছে,ভোট কর্মীদের কথা মত ওই মহিলা তাঁর ছেলে বিডিও অফিসে ছোটেন । কিন্তু সেখানে গিয়েও কোনও সদুত্তর মেলেনি । শেষে ফের বুথে ফিরে আসেন ওই মহিলা । তারপর থেকে দীর্ঘ সময় বুথের মধ্যেই তাঁকে ঠায় বসে থাকতে দেখা যায় ।
জানা গেছে, মানিকচক সিংহপাড়ায় বাপের বাড়ি সত্যবালাদেবীর । ছেলে শ্রীকান্ত যখন খুব ছোট তখন তাঁর স্বামী মারা যান । তারপর থেকে তিনি ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়িতেই রয়েছেন । মা ও ছেলে দু’জনেই শ্রমিকের কাজ করেন । মাস পাঁচেক আগে সত্যবালাদেবীর বাবা খোকা মণ্ডল মারা যান ।
শ্রীকান্তর কথায়, ‘ভোটের মাস দুই তিন আগে বিডিও অফিস থেকে ভোটার লিস্টের সংশোধন ও সংযোজনের কাজ করা হয় । তখন ভূল বশত দাদুর পরিবর্তে আমার মাকে মৃত দেখানো হয়েছে । যার জেরেই ভোটার লিস্টে আমার মায়ের নাম ডিলিটেড দেখাচ্ছে । যারা ওই কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সেই সমস্ত কর্মীদের ভূলের জন্য আজ আমার মা ভোট দিতে পারলেন না ।’ যদিও এদিন বিকাল পর্যন্ত ভোট দেওয়ার আশা ছাড়েননি সত্যবালাদেবী । তিনি বলেন, ‘আমি ভোট দিতে চাই । আমার ভোট দেওয়ার ব্যাবস্থা করা হোক।’।