এইদিন ওয়েবডেস্ক,মালদা,২৮ মার্চ : স্বাধীনতার পর ৭৩ বছর অতিক্রান্ত । কিন্তু সেই একই বাঁশের নড়বড়ে সেতুর উপর দিয়ে বিপজ্জনকভাবে নদী পারাপার করতে হচ্ছে মালদা জেলার চন্দ্রপাড়া অঞ্চলের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দাদের । গ্রামবাসীদের অভিযোগ,সেতু পাকা করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় তদ্বির তদারকি করেও কোনও লাভ হয়নি । এদিকে ভোট এলে শাসক-বিরোধী উভয় দলই সেতু পাকা করার প্রতিশ্রুতি দেয় । কিন্তু প্রতিশ্রুতিই সার । ভোট আসে ভোট যায় ঘোচেনা হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দাদের দুর্দশা । এদিকে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন এসে গেছে । তাই ভোটের আগে ফের সেতু পাকা করার জোরদার দাবি তুলছেন গ্রামবাসীর ।
মালদহ জেলার ৪৭ নম্বর মালতিপুর বিধানসভার চন্দ্রপাড়া অঞ্চলের অন্তর্গত এই হোসেনপুর গ্রাম । প্রায় ৫০০ পরিবারের বসবাস । হোসেনপুর গ্রামটি মহানন্দা ও সুই নদীর মাঝামাঝি জায়গায় রয়েছে । ফলে নদী টপকে যাতায়ত করতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হত । তাই ইংরেজ শাসনের সময়েই নদীর উপর দিয়ে চলাচলের জন্য গ্রামবাসীরা কেলাইগাছি-হোসেনপুর ঘাটে নিজেদের উদ্যোগে বাঁশের সেতু তৈরি করেছিলেন । তারপর সেই সেতু বংশানুক্রমিকভাবে জোড়াতালি দিয়ে চালিয়ে আসছেন গ্রামবাসীরা ।
গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, গ্রাম পঞ্চায়েত, স্কুল-কলেজ,ব্লক,অফিস-কাছারি,হাট-বাজার, হাসপাতাল যেতে যেতে গেলে ওই নড়বড়ে বাঁশের সেতুই একমাত্র ভরসা । অথচ সাঁকোটিত একসাথে একজনের বেশি পারাপার করা যায় না । গ্রীষ্মকালে সেরকম সমস্যা না হলেও বর্ষায় প্রলয়ঙ্কারী রূপ ধারন করে দুই নদী । তখন সেতু দিয়ে যাতায়ত করা যায় না । নৌকা করে যাতায়াত করতে হয় ।
হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা আইনল হক, হারুন অল রসিদরা বলেন, ‘গ্রামের রোগী বা প্রসূতি মায়েদের হাসপাতাল নিয়ে যেতে চরম কষ্ট হয় । গ্রীষ্মকালে বাঁশের খাটিয়ায় রোগীকে চাপিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে নদী পার করাতে হয় । ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার আগে থেকেই বাঁশের সাঁকো দিয়ে এভাবে নদী পারাপার করতেন আমাদের পূর্ব পুরুষরা। আজও অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি ।’ তাঁদের অভিযোগ, ‘বেশ কয়েক বছর আগে সেতু তৈরীর জন্য মাপজোক করা হয়েছিল । কিন্তু তারপর আর সেতু পাকা করার কোনও উদ্যোগই নেওয়া হয়নি । তাই আমরা এখন পাকা সেতুর স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিয়েছি ।’
মালতিপুর বিধানসভার বর্তমান বিধায়ক রয়েছেন জাতীয় কংগ্রেসের আলবেরুনী জুলকারনাইন । এবারেও তিনি সংযুক্ত মোর্চার মনোনীত প্রার্থী । হোসেনপুর গ্রামে নদীর উপর পাকা সেতু তৈরি না হওয়ায় বিধায়কের ঘারে দায় চাপিয়েছেন চাঁচল-২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূল নেতা আব্দুল হাই । তিনি বলেন, ‘হোসেনপুরবাসীর দুর্দশার কথা আমার জানা আছে।আমি ব্যক্তিগত ভাবে বহুবার চেষ্টা করেছি । তবে এলাকার বিধায়ক এনিয়ে বিধানসভায় জোড়ালো দাবি জানাতে পারতেন । কিন্তু তিনি তা করেননি ।’ পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘২০২১ সালের নির্বাচনে তৃতীয় বারের জন্য রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস । এবারে মালতিপুর বিধানসভায় আমাদের দলীয় প্রার্থী আবদুর রহিম বক্সী বিজয়ী হবেন বলে আমাদের আশা । আমরা জিতলেই পাকা সেতু নির্মানের কাজ শুরু হয়ে যাবে ।’
তৃণমূল নেতার অভিযোগ প্রসঙ্গে মালতিপুরের কংগ্রেসের বিদায়ী বিধায়ক আলবেরুনী জুলকারনাইন বলেন, ‘হোসেনপুরের পাকা সেতু নির্মান নিয়ে বারবার রাজ্য সভায় দাবি পেশ করেছি । কিন্তু কোনো কাজ হয়নি । ২০১৪ সালে ওই এলাকার কংগ্রেস নির্বাচিত জেলাপরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ মাঞ্জারুল ইসলামের উদ্যোগে মাপজোক করে উপরে পাঠানো হয়েছিল । তারপরে কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি ।’ তাঁর পালটা অভিযোগ, ‘শাসকদল দশ বছর ধরে ওই সেতু নির্মানের কোনও সদিচ্ছাই দেখায়নি । আমি একজন বিরোধী দলের বিধায়ক হয়েও এলাকায় অনেক কাজ করেছি। এবার জয়ী হলে সেতু নির্মানের দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবো ।’।