এইদিন ওয়েবডেস্ক,কাবুল,০১ মার্চ : তালিবানরা আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পর সে দেশের মানুষের অবস্থা ক্রমশ দূর্বিষহ হয়ে উঠেছে । অভাব আর ঋণে জর্জরিত আফগানিরা পরিবার চালাতে নিজের অঙ্গ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন । এলাকার জনবহুল সড়ক পথের পাশে গাছে গাছে অথবা বাড়ির দেওয়ালে তাঁরা কিডনি বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন পর্যন্ত দিচ্ছেন । পরিবারের খাবার জোটাতে একদিকে বাবা বিক্রি করছে নিজের কিডনি । অন্যদিকে মা টাকার বিনিময়ে তাঁর দুধের শিশুকে তুলে দিচ্ছে অজানা ব্যক্তির হাতে । পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে গ্রাম উজার করে মানুষ কিডনি বিক্রি করতে ছুটছেন স্থানীয় হাসপাতালে । পশ্চিম আফগানিস্তানের হেরাতের কাছে একটি গ্রাম আজ ‘এক কিডনি গ্রাম’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে ।
ইরানের সীমান্তের কাছে আফগানিস্তানের এক গ্রামের বাসিন্দা কিডনি বিক্রেতা ৩২ বছর বয়সী যুবক নুরউদ্দিন বলেন, ‘কিডনি বিক্রি করা ছাড়া আমার আর কোনও উপায় ছিল না । আমাকে আমার সন্তানদের জন্য এটা করতে হয়েছে । কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমি ভুল করেছি । কারন এখন আমি আর কাজ করতে পারিনা । শরীর দূর্বল, পেটে ব্যাথা । এখন আমার ১২ বছরের ছেলে পরিবারের খাবার জোটাতে কাজ করে । জুতো পালিশ করে সে প্রতিদিন ৪৯ আফগানি মুদ্রা উপার্জন করে আনে । তাতেই কষ্টে দিন চলে ।’
কিডনি বিক্রির জন্য গাছে বিজ্ঞাপন :
শুধু নুরুদ্দিনই নন, তাঁর ৮ বন্ধুও কিডনি বিক্রি করেছেন । কেউ কেউ তাদের কিডনিও দেড় হাজার আমেরিকান ডলার বা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১,১৩,৫২৪ টাকায় বিক্রি করেছেন । নুরুদ্দিনের মতই একটি কিডনি বিক্রি করেছেন দুই সন্তানের জননী বছর উনিশের গৃহবধু শাকিলা । শাকিলার বলেন, ‘ক্ষুধার হাত থেকে বাঁচার জন্য এছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না । আমি ১,৫০০ ডলারের বিনিময়ে আমার কিডনি বিক্রি করেছি । কিন্তু প্রাপ্ত অর্থের বেশির ভাগই চলে গেছে পরিবারের ঋণ মেটাতে ।’ অন্যদিকে তিন সন্তানের মা আজিজা জানিয়েছেন, তাঁর সন্তানরা পেট চালাতে রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করছে । তাই তিনি তাঁর একটি কিডনি বিক্রির জন্য গ্রাহক খুঁজছেন । কিডনি বিক্রি না হলে তাঁর এক বছরের মেয়েকে বিক্রি করতে বাধ্য হবেন বলে তিনি জানান ।
হেরাতের উপকণ্ঠে সায়শানবা বাজার বলে একটি জনবসতি রয়েছে । শতাধিক বাস্তুচ্যুত পরিবার নিয়ে গড়ে উঠেছে ওই গ্রামটি । এই গ্রামের কোনও মানুষের দুটি কিডনি নেই । সকলেই একটি করে কিডনি বিক্রি করে দিয়েছেন । বর্তমানে ওই গ্রামটিই এখন ‘এক-কিডনি গ্রাম’ হিসাবে পরিচিত । ওই গ্রামের একটি পরিবারের পাঁচ ভাই গত চার বছরে প্রত্যেকে একটি করে কিডনি বিক্রি করে দিয়েছেন । তাঁদের মধ্যে গোলাম নেবী নিজের পেটের কাটা দাগ দেখিয়ে বলেন, ‘ভেবেছিলাম কিডনি বিক্রি করে পারিবারিক দারিদ্র দূর হবে । কিন্তু এখনও আমরা ঋণগ্রস্ত এবং আগের মতোই দরিদ্র ।’
মানব অঙ্গ বিক্রি নিয়ে বেশিরভাগ দেশেই রয়েছে কঠোর আইন । তবে ওসবের বালাই নেই আফগানিস্তানে । আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরীফ শহরের উত্তরাঞ্চলের হাসপাতালের প্রাক্তন শীর্ষ সার্জন অধ্যাপক মোহাম্মদ ওয়াকিল মতিন বলেন, ‘আফগানিস্তানে অঙ্গ দান বা বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে কোনও আইন নেই । শুধু তবে দাতার সম্মতি প্রয়োজন ।’ সার্জন মোহাম্মাদ বাসির ওসমানী বলেন, ‘হেরাতে বেশিরভাগ ট্রান্সপ্লান্ট করা হয় । প্রথমে দাতার মৌখিক সম্মতি নেওয়া হয় । তারপর ডোনারের কাছ থেকে লিখিত সম্মতি এবং একটি ভিডিও রেকর্ডিং নিই আমরা ।’ তিনি বলেন,’গত পাঁচ বছরে হেরাতে শত শত অস্ত্রোপচার করা হয়েছে ।
আমরা কখনই তদন্ত করিনি যে রোগী বা দাতা কোথা থেকে এসেছেন, বা কিভাবে দাতা-গ্রহীতার মধ্যে যোগাযোগ হয়েছে । এটা আমাদের কাজ নয় ।’।