দিব্যেন্দু রায়,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),১০ নভেম্বর : ১৯৭৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভাতারে জাতীয় কংগ্রেসের টিকিটে লড়াই করে জিতেছিলেন হাইকোর্টের আইনজীবি ভোলানাথ সেন ৷ রাজ্যে তখন কংগ্রেস সরকার । সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের ক্যাবিনেটে পূর্ত মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ভোলানাথবাবুকে । মাত্র ওই ৫ বছরের সময়ের মধ্যে তিনি ভাতারকে ঢেলে সাজিয়েছিলেন । একে একে হাউসিং কমপ্লেক্স, বিডিও অফিস, অগ্নি নির্বাপন কেন্দ্র,স্টেডিয়াম সহ একাধিক উন্নয়নমূলক কাজ করেছিলেন । এলাকার বহু মানুষ তাঁর কল্যাণে সরকারি চাকরি পর্যন্ত পেয়েছিলেন । কিন্তু নিজের বিধানসভা এলাকায় এত উন্নয়ন করেও ১৯৮২, ১৯৯১ সালে ভোটে লড়াই করে তাঁকে পরাজয়ের মুখ দেখতে হয়েছিল ।
তারপর শুধুমাত্র সংস্কারের অভাবে তাঁর সৃষ্টিগুলি কালক্রমে ধূলিস্যাৎ হয়ে গেছে । ভোলানাথ সেনের সৃষ্টি আলিনগরের স্টেডিয়াম আজ নিশ্চিহ্ন । হাউসিং কমপ্লেক্সের ভবনগুলি আজ বসবাসের অযোগ্য । ১৯৮২ সালের পর দীর্ঘ কয়েক দশক ক্ষমতায় ছিল সিপিএম । ২০১১ সালের পর ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস । সিপিএম তো নয়ই, তৃণমূলের দুই প্রাক্তন বিধায়ক বনমালী হাজরা ও সুভাষ মণ্ডলকেও ভোলানাথ সেনের সৃষ্টি ওই সমস্ত কাঠামোগুলিকে সংস্কারে উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি । এই কারনে বৃহস্পতিবার স্বর্গীয় ভোলানাথ সেনের জন্ম শতবর্ষের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় নিজের দলের দুই প্রাক্তন বিধায়কের সমালোচনায় সরব হলেন ভাতারের বর্তমান তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী ।
তিনি বলেন,’ভাতার মানেই ভোলানাথ সেন । অথচ তাঁর তৈরি করে যাওয়া স্টেডিয়াম,অডিটোরিয়াম হল, দমকল অফিস সব আজ বেহাল অবস্থায় আছে । আমি চেষ্টা করছি যদি ওগুলোর সংস্কার করা যায় । আমি যখন দলের প্রার্থী নির্বাচিত হই তখনই আমি বলেছিলাম আমার টার্গেট স্টেডিয়াম । এখানে আরও একটা স্টেডিয়াম হয়েছে । তবে সেটা ভাতারের নয় । স্টেডিয়ামটা মন্তেশ্বর ও ভাতারের মাঝামাঝি জায়গায় । সেটা কোনো কাজে লাগে না । সেই সময় যিনি বিধায়ক ছিলেন তিনি যদি একটু চেষ্টা করতেন তাহলে আলিনগরের স্টেডিয়ামেই হয়ে যেত ।’
উল্লেখ্য,২০১৬ সালে ভাতার থেকে ১০-১২ কিমি দূরে নাসিগ্রামের কাছে একটি নতুন স্টেডিয়াম নির্মান করিয়েছিলেন তৎকালীন তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক সুভাষ মণ্ডল । কিন্তু শুধুমাত্র দূরত্বের কারনে স্টেডিয়ামটির প্রতি ভাতারবাসীর সেভাবে আগ্রহ নেই । ফলে বর্তমানে ওই স্টেডিয়ামটি গোচারণ ভূমি ও দূষ্কৃতীদের আখড়া হয়ে গেছে বলে অভিযোগ ।
মানগোবিন্দবাবু এদিন ভোলানাথবাবুর তৈরি আলিনগরে স্টেডিয়ামের জায়গায় নতুন করে স্টেডিয়াম তৈরি করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন ।
তিনি বলেন,’অডিটোরিয়াম আজ ধ্বংশস্তুপে পরিনত হয়েছে । অডিটোরিয়াম,ফায়ার ব্রিগেড আর হাউসিং সংস্কারের চেষ্টা করছি । এগুলো ভোলানাথ সেনের সৃষ্টি । ওগুলো বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা আমায় করতেই হবে ।’ পাশাপাশি তিনি নিজের দলের দুই প্রাক্তন বিধায়কের সমালোচনা করে বলেন,’দুটো প্রশাসনিক ভবন ছিল । তার মধ্যে একটা চলে গেছে । একটা ধুঁকছে । আমাদের আগের দুই বিধায়কের উচিত ছিল এগুলো বাঁচিয়ে রাখা । এখন আমি চেষ্টা করবো ।’
প্রসঙ্গত,ভাতার গান্ধী কালচারাল এন্ড এডুকেশনাল সেন্টারের উদ্যোগে এদিন থেকে স্বর্গীয় বিধায়ক ভোলানাথ সেনের জন্ম শতবর্ষ উদযাপন করা হচ্ছে । এই উপলক্ষে তিন ব্যাপী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং কচিকাঁচাদের অঙ্কন ক্যারাটে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে । এদিন আদিবাসী নৃত্য সহযোগে ভাতার বাজারে একটি শোভাযাত্রা বের হয় । সন্ধ্যা থেকে চলে ছোটদের নৃত্যানুষ্ঠান ।।