এইদিন,ওয়েবডেস্ক,মঙ্গলকোট,২৮ মার্চ : যেকোনো রাজনৈতিক দলের নীচু বা উঁচু তলার কোনো নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তার স্ক্রিপ্টেড কমন ডায়ালগ থাকে-‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে । এটা বিরোধীদের ষড়যন্ত্র । মানুষ সব জানে ।’ কিন্তু কে বা কারা ও কিসের স্বার্থে ষড়যন্ত্র করল সেটা কিন্তু তিনি বলেন না। দলের শীর্ষস্তরের নেতাদের বক্তব্য-‘যদি অপরাধ করে থাকে তাহলে দল তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে’ । কিন্তু জানা যায় না দল আদপেই কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা । একটু বেশি উপরতলার নেতা হলে বলবেন,’আমি বাইরে আছি । বিষয়টি জানা নাই। গিয়ে খোঁজ নিচ্ছি’, ইত্যাদি । কিন্তু তিনি খোঁজ নিয়ে কী করলেন সেটা আর জানা যায় না । ঘটনার সঙ্গে যদি বিরোধী দলের কেউ যুক্ত থাকে তিনি সঙ্গে সঙ্গে খবর পেয়ে যান, মঙ্গল গ্রহে থাকলেও ! এই ঘটনা সমস্ত রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ভিডিও ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরের সৌজন্যে এতদিন রাজ্যের একটা বড় অংশ বিষয়টি জেনে গেছে-“তৃণমূল কার্যালয়ে জুয়ার আসর” । এটি নিয়ে এলাকায় যথেষ্ট চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি দলের দুর্দিনের কর্মীরা পর্যন্ত ক্ষুব্ধ । বিরোধীরা যথারীতি টিপ্পনি দিতে শুরু করেছে। কিন্তু অভিযোগের আঙুল যার দিকে তার কোনো হেলদোল নাই ।
ভিডিও থেকে জানা যাচ্ছে কয়েকদিন আগে দলীয় কার্যালয়ে বসে জুয়ো খেলতে গেখা গ্যাছে পশ্চিম মঙ্গলকোটের পালিগ্রাম অঞ্চলের তৃণমূল উপপ্রধানকে । যিনি ভিডিওটি ভাইরাল করেছেন তিনিও এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসাবে পরিচিত। হতে পারে তিনি উপপ্রধানের বিরোধী গোষ্ঠীর। পূর্ব নির্ধারিত স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী যথারীতি পরপর ঘটনাগুলো ঘটল। অভিযুক্ত উপপ্রধান তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করল। স্থানীয় বিধায়ক ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করলেও ভিন্ন সুর শোনা গেলো সদ্য মনোনীত ব্লক সভাপতির কণ্ঠে । তবে যাই হোক এই ঘটনা একাধিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে ।
স্থানীয়দের বক্তব্য বর্তমান বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী দীর্ঘদিন ব্লক সভাপতি ছিলেন । উপপ্রধানের বেআইনি সম্পত্তি বৃদ্ধিসহ সমস্ত কুকীর্তি তার আমলেই ঘটা । তার অজ্ঞাতে ঘটনাগুলো কখনোই ঘটা সম্ভব নয়। সুতরাং ঘটনার দায় তিনি কিছুতেই অস্বীকার করতে পারেন না। মঙ্গলকোটের যে ক’টি অঞ্চল সিপিএমের হার্মাদদের চোখে চোখ রেখে সংগঠন করে গেছে তাদের অন্যতম পালিগ্রাম অঞ্চল । সিপিএমের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যাদের হাত ধরে তৃণমূল পালিগ্রাম অঞ্চলে দলের সংগঠন গড়ে তুলেছিল তারা আজ কোথায় ? কেন তাদের দূরে সরিয়ে দেওয়া হলো ? ওই এলাকারই আর এক নেতা যে একটা সময় পাঁউরুটি বিক্রি করত দল ক্ষমতায় আসার পর তারই বা এত সম্পত্তি কি করে হলো সেটা কি দলের অজানা?
পাশের অঞ্চলের শীর্ষ নেতা যার সৌজন্যে দল ২০১৯ এর লোকসভা বা ২০২১ এর বিধানসভায় কার্যত নাস্তানাবুদ হয়েছে তারই বা এত সম্পত্তি হলো কি করে ? কোন যাদুবলে বাড়ি করল, গাড়ি কিনল? একশ দিনের কাজ সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে তার বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। এলাকায় কান পাতলেই বিষয়টি শোনা যাবে । এক সময়ের লালদুর্গ এই অঞ্চলে যাদের হাত ধরে তৃণমূল ২০০৮ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে ভাল ফল করেছিল এবং যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল না তাদের আজ দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে কেন ? উত্তর নাই ।
পাশের ব্লকের আর এক নেতা যে নাকি একটা সময় রেললাইনের পাথর টানত সেই বা এত সম্পত্তি করল কি করে ? ব্লকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরেও কেন সে ক্ষমতার মধু ত্যাগ করতে পারছে না ? এলাকায় কান পাতলেই তার বিরুদ্ধে হাজার অভিযোগ শোনা যাবে। প্রতিটি অভিযোগ বিরোধীদের ষড়যন্ত্র বলে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না, সারবত্তা আছে ।
এত অভিযোগের পরেও দল তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রেখেছে। কিসের ভয়? পদে থেকেও যারা দলের সর্বনাশ করেছে পদে না থাকলে দলের নতুন করে কি কোনো ক্ষতি হবে? এলাকায় এদের কারও ভাবমূর্তি ভাল নয়। উপপ্রধানের দাপটে যারা ভয়ে কথা বলত পারত না তাদের হাত ধরেই ভাইরাল ভিডিও সামনে আসার অর্থ হলো ভয় কাটছে । এরপর হয়তো দুর্নীতি সংক্রান্ত আরও অনেকের ভিডিও সামনে আসবে।
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলাকায় তাদের কারও ভাবমূর্তি ভাল নয়। তবুও তারা সামনের সারিতে আছে। সিপিএমের তপন-সুকুর, ডাবলু আনসারিদের মত এরাও দলের ‘সম্পদ’ না বিপদ সেটা কিন্তু খুব শীঘ্রই বোঝা যাবে। সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন । অতএব দলকে সতর্ক হতেই হবে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা যাচ্ছে “তৃণমূল কার্যালয়ে জুয়ার আসর” কান্ডে অভিযুক্ত উপপ্রধানকে ‘আপাতত’ পঞ্চায়েত বা দলীয় কার্যালয়ে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। অর্থাৎ তার জন্য সমস্ত দরজা জানলা খোলা রাখা হয়েছে । আইওয়াশ করার জন্য যেটুকু দরকার আপাতত সেটাই করা হয়েছে ।।