এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৫ এপ্রিল : মুর্শিদাবাদের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী সিপিএমের ভূমিকা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক । ধুলিয়ানের সাম্প্রদায়িক হিংসাকে চাপা দিতে ক্রমাগত চেষ্টা করে যাচ্ছে তারা । আর সেই চেষ্টা প্রতিফলন শোনা গেল সিপিএমের বরিষ্ঠ নেতা মহম্মদ সেলিমের কথায় । ধুলিয়ানের হিন্দুদের অভিযোগ যে বেছে বেছে হিন্দুদের নিশানা করছে মুসলিমরা । আর সেই সাম্প্রদায়িক হিংসার বলি হয়েছিল সিপিএম কর্মী পিতা পুত্র হরগোবিন্দ দাস ও পুত্র চন্দন দাস৷ তাদের নৃশংসভাবে গলা কেটে কুপিয়ে হত্যা করে মুসলিমরা । অভিযোগ যে হত্যাকারিরা তাদেরই প্রতিবেশী মুসলিম । কিন্তু সোমবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুহাম্মদ সেলিম দাবি করেন,’আজকে কেন মুর্শিদাবাদে হল ? দুজন যে মারা গেছে, সিপিএমের কর্মী মারা গেছে, দাঙ্গা আটকাতে গিয়ে মারা গেছে । তাদের কি ধর্ম পরিচয় দেখে খুন করা হয়েছে ? তাদের খুন করা হয়েছে দাঙ্গা বিরোধী বলে । তাই এখানে প্রশ্ন হচ্ছে কে দাঙ্গার পক্ষে এবং কে দাঙ্গার বিরুদ্ধে৷’
কিন্তু সিপিএমের মোহাম্মদ সেলিমের এই প্রকার ভন্ডামি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তিনি মৃত হরগোবিন্দ দাসের স্ত্রীর শামসেরগঞ্জ থানায় দায়ের করা অভিযোগ পত্রটি এক্স-এ পোস্ট করেছেন । পাশাপাশি মহম্মদ সেলিম এর বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপিংও শেয়ার করেছেন শুভেন্দু অধিকারী ।
শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,জনাব মহম্মদ সেলিম সাহেব, ধরে নিলাম যে মুর্শিদাবাদ জেলার সামসেরগঞ্জ ব্লকের জাফরাবাদে নিহত পিতা-পুত্র দ্বয়; শ্রী হরগোবিন্দ দাস ও শ্রী চন্দন দাস আপনাদের দলীয় কর্মী ছিলেন। কিন্ত তাঁদের হত্যা করা হলো কেন ? আপনি বলছেন ওনারা দাঙ্গা রুখতে গেছিলেন!
কিন্তু আপনার বক্তব্য ও পরিবারের লোকজনের থানায় দায়ের করা অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা বিবরণের মধ্যে সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’
তিনি এরপর লেখেন,’আপনার জ্ঞাতার্থে অভিযোগ পত্রের ছবি সংযুক্ত করলাম। স্পষ্ট লেখা রয়েছে যে:-
“সবিনয় নিবেদন এই যে আমি xxxxx xxx, স্বামী মৃত হরগোবিন্দ দাস, গ্রাম জাফরাবাদ, থানা সামশেরগঞ্জ, জেলা মুর্শিদাবাদ। আমার স্বামী – হরগোবিন্দ দাস এবং পুত্র চন্দন দাসকে কিছু দুষ্কৃতি যাদের নাম নিচে দেওয়া হল তারা গতকাল শনিবার 12/04/2025 আনুমানিক সময় সকাল 10:30 আগ্নেয় অস্ত্র সহ কুপিয়ে খুন করে, বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে গিয়ে। অনেক অনুনয় বিনয় করা সত্ত্বেও তাদের থামানো যায়নি। তাদের মধ্যে অনেক জন থাকলেও কিছু ব্যক্তি মিলে দু’জনকে হত্যা করে। অতএব মহাশয়ের নিকট প্রার্থনা নিম্নোক্ত হত্যাকারীদের কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তি দিয়ে বাধিত করবেন।”
সেলিমের উদ্দেশ্যে শুভেন্দুর প্রশ্ন হল,’ওনারা নিশ্চয়ই বাড়ির মধ্যে থেকে দাঙ্গা আটকাচ্ছিলেন না। ওনাদের বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে খুন করে। এই জন্যে নয় যে ওনারা বামপন্থী ছিলেন বা রাজনৈতিক শত্রুতা ছিল। স্রেফ এই জন্যে, কারণ ওনাদের নাম হচ্ছে হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাস। আর যাদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে উক্ত অভিযোগ পত্রে, তাদের নাম গুলো হলো – ইউসুয়া সেখ, একবর সেখ, হজরত আলি, কালু নাদার, নুরুল সেখ, আনসার আলি। বাকি আপনি বিচক্ষণ ব্যক্তি, আশা করছি কারণ বুঝে গেছেন।’
শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,’কিন্তু প্রকাশ্যে স্বীকার করা আপনার পক্ষে সম্ভব নয়, কারণ প্রথমত আপনি যে দলের নেতা, সেই দলের ‘ইন্ডি’ জোট সঙ্গী তৃণমূল সরকারের সমালোচনা করা হয়ে যাবে তাহলে। তাদের দলের নেতারা সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়েছে আর পুলিশ প্রশাসন হাতে হাত দিয়ে বসে থেকে এই সব নিরীহ হিন্দুদের মরতে দিয়েছে ও ভিটে ছাড়া হতে দিয়েছে। দ্বিতীয়ত, আপনি নিজে ধর্ম কে ‘ক্রাচের’ মতো ব্যবহার করে নির্বাচনের বৈতরণী পার করার চেষ্টা করেছেন (তবে পর্যদুস্ত হয়েছেন), এক বার নয়, পর পর তিন বার ! ২০১৯ – রায়গঞ্জ,২০২১ – চন্ডীতলা, ২০২৪ – মুর্শিদাবাদ। এই কেন্দ্র গুলির জনবিন্যাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে একটা বড় অংশের ভোটার হলো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের।
তাই আপনার সৎ সাহস নেই এটা বলার যে, কেন হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাসের প্রাণ গেলো, কাদের জন্য তাঁরা প্রাণ হারালেন এবং ঠিক কোন কারণের জন্যে প্রাণ হারালেন।’।

