এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২১ ডিসেম্বর : ময়মনসিংহের ভালুকায় দিপু চন্দ্র দাসকে (২৭) পিটিয়ে আধমরা করার পর জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা গোটা বিশ্বকে শিহরিত করেছে । বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এই নৃশংস বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আওয়াজ উঠছে । কিন্তু ভারতের ছদ্ম ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলগুলি প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলছে বলে মনে হচ্ছে । শেষ মুহুর্তে তথাকথিত সেকুলার সিপিএম দিপু দাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ড নিয়ে মুখ খুললেও ভারতের হিন্দুত্বকে বাংলাদেশের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে এক করে দিয়েছে । এই বিষয়ে সিপিএমের রাজ্য কমিটির সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বক্তব্য সামনে এসেছে । তিনি দিপু চন্দ্র দাস ও বেঙ্গালুরুর গৌরি লঙ্কেশ হত্যাকাণ্ডকে এক করে দিয়েছেন । উল্লেখ্য,গৌরি লঙ্কেশ ছিলেন উগ্র বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী একজন সাংবাদিক । হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন প্রথার কট্টর সমালোচক ছিলেন । ২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর, কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুর রাজরাজেশ্বরী নগরে গৌরীকে তার নিজের বাড়ির সামনে তিনজন অজ্ঞাত ব্যক্তি গুলি করে হত্যা করে । এই হত্যাকাণ্ডের জন্য হিন্দুত্ববাদীদের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলে বামপন্থীরা ।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ নিয়ে ৮ বছর আগের গৌরি লঙ্কেশ হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘যারা ধর্মের নামে এই কেত্তন করছে এবং মানুষ খুন করছে,ইন্ডিপেন্ডেন্ট ব্লগার থেকে আরম্ভ করে বামপন্থী কর্মী, সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন করছে, তাদের ফিলোজফি এবং এই অমিত মালব্যদের মত যে দল করে তাদের মধ্যে কোনো তফাত নেই । শুধু ঝান্ডার রঙটা আলাদা হয়৷ আমাদের কালবুর্গি, পানসারে খুন করেনি ? কে খুন করেছে ? গৌরি লঙ্কেশ সাংবাদিক ছিল৷ লেখিকা ছিল । তাহলে যারা গৌরি লঙ্কেশকে, পানসারেকে, কালবুর্গি কে খুন করেছে, বাংলাদেশে যারা ইন্ডিপেন্ডেন্ট ব্লগার, সেক্যুলার মনস্ক বা সংখ্যালঘুদের খুন করছে তার মধ্যে কি তফাৎ আছে ? ইডিওলজিক্যালি, ফিলোজফিক্যালি এক । কর্ম পদ্ধতিও এক । ধর্মকে ব্যবহার করে ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরি করে বিরোধী কন্ঠস্বরকে শেষ করে দেওয়া-নিকেশ করে দেওয়া । শুধু যেখানে গিয়ে বাজারে যেটা চলবে । এই কারণেই সব ধরনের ধর্মীয় উন্মাদনা উসকানিমূলক কাজের বিরোধিতা করি । সব ধরনের ধর্মকে ব্যবহার করে নিয়ে শিখ হোক, হিন্দু হোক, মুসলমান হোক,খ্রিস্টান হোক,বৌদ্ধ হোক,ধর্মকে আশ্রয় করে বর্ম করে অপকর্ম করার প্রতিবাদ করতে হবে ।’
সিপিএমের ওই বর্ষীয়ান নেতার এহেন মন্তব্য নিয়ে কটাক্ষ করে রাজ্য বিজেপির যুবমোর্চার সহ-সভাপতি ও কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তরুনজ্যোতি তিওয়ারি ফেসবুকে একটি বড়সড় পোস্ট করেছেন৷ তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশে দীপু দাসের হত্যা নিয়ে সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিমের সুবচন শুনলাম। তিনি আখলাক, প্যাটিস, আরএসএস, বিজেপি সবকিছু নিয়ে জড়িয়ে মড়িয়ে একটা কিছু বলার চেষ্টা করে যখন দেখলেন ব্যাপারটা সেরকম দাড়াচ্ছেনা তখন জানালেন তার পুরো ব্যাপারটা ঠিক জানা নেই। তিনি আরও বিশদ তথ্যের অপেক্ষায় আছেন।
সেলিম সাহেবের কাছে তথ্য অবশ্য মাঝেমাঝেই কম পরে। সে ছেলের বিয়ের কার্ড হোক কিংবা দীপু দাসের হত্যা। খালি একটি তথ্য নিশ্চিত যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনেও উনি কোন একটি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় দাঁড়াবেন এবং এবারেও হারবেন।
সিপিএমের আরেক কমরেড সুজন চক্রবর্তী অবশ্য এতো ভাণ ভনিতার ধার ধারেননি। তিনি স্পষ্টই বুঝিয়ে দিয়েছেন দীপু দাসের মূল্য তার কাছে একটি চিকেন প্যাটিসের থেকে বেশী কখনই নয়।
পাশাপাশি বাংলাদেশের হিন্দু নরসংহারের বিষয়ে শাসকদলের প্রতিক্রিয়ারও সমালোচনা করেছেন । তরুনজ্যোতি লিখেছেন,তৃণমূলের মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী অবশ্য অনেক সোজাসুজি মানুষ। তিনি সরাসরিই চিকেন প্যাটিস এবং দীপু দাসকে এক করে দিয়েছেন। খালি যেটা তিনি কখনও বলেননা, কেন তার পরিবার বাংলাদেশে বসে চিকেন প্যাটিস খেতে পারেনি। কেন কোলকাতায় বসে চিকেন প্যাটিস খাচ্ছেন। স্টকহোম সিন্ড্রোম বলে কি জানি একটা মানসিক রোগের নাম আছে অবশ্য।
আসলে মুস লিম লিবেরাল আগে মুস লিম, তারপর ভিক্টিম মুস লিম হলে তখন লিবেরাল। আর হিন্দু লিবেরাল আগে ধান্দাবাজ, তারপর ভিক্টিম মুস লিম হলে তখন লিবেরাল। তাই দীপু দাস শুক্রবার রাতে জ্বলে গেলেও তার খবর সংবাদ মাধ্যমে আসতে শনিবার হয়ে যায়।
এদের মতে চিকেন প্যাটিসই নাকি ভবিষ্যতে দীপু দাসের লক্ষন। সবিনয়ে জানতে চাই, তাহলে মরিচঝাপীর উদ্বাস্তু হত্যা, বিজন সেতুর সন্ন্যাসী হত্যা, বানতলার অনিতা দেওয়া ধর্ষন কান্ড কিংবা একেবারে হাল আমলের বিসর্জন বন্ধ করে মহরম কিংবা মেটিয়াবুরুজে নামা জের সময় আরতি বন্ধের নির্দেশ কিংবা সিএএ বা ওয়াকফের অজুহাতে হিন্দুদের ঘরবাড়ি পোড়ানো বা হরগোবিন্দ দাস বা চন্দন দাসের হত্যা ভবিষ্যতে কিসের ইঙ্গিত দেয়?
দীপু দাসের নাকি ওসমান হাদীর?এবার পরপর কিছু নাম বলি, – রোহিত তাঁতি,ইন্দ্রজিৎ দত্ত,হরগোবিন্দ দাস,চন্দন দাস,পঙ্কজ নারাং,নিকিতা তোমর এবং আরও আরও আরও৷
তিনি লিখেছেন,এবার কিছু জায়গার নাম আর সাল বলি -দেগঙ্গা, ২০১১,ক্যানিং, ২০১৩,ধূলাগড়, ২০১৬,কালিয়াচক,২০১৬,বাদুরিয়া, ২০১৭,মুর্শিদাবাদ, ২০২৫ । এবার যারা চিকেন প্যাটিস ভালোবাসেন, তারা এর পাল্টায় বাংলাদেশের একটা ঘটনা অন্তত বলে যাবেন, যেখানে দীপু দাস আক্রমনকারী আর ওসমান হাদী আক্রান্ত- দীপ্তাস্য যশ৷
উল্লেখ্য,গত ৭ ডিসেম্বর কলকাতায় ময়দানে ছিল ৫ লক্ষ কণ্ঠে গীতা পাঠের অনুষ্ঠান। ব্রিগেডের এই অনুষ্ঠানে ২ জন চিকেন প্যাটিস বিক্রেতাকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। জানা যায়, এই দুই ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ট্যাংরার বাসিন্দা। অন্যজন কসবার বাসিন্দা। এই ২ জনের মধ্যে একজনের নাম মহম্মদ সালাউদ্দিন এবং অন্যজন শেখ রিয়াজুল। তাদের বিরুদ্ধে নিরামিষ প্যাটিসের নামে মুরগীর মাংসের প্যাটিস বিক্রির অভিযোগ উঠেছে । পরে তাদের হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দিয়ে আসেন সিপিএমের দীপ্সিসা ধর।।
