এইদিন ওয়েবডেস্ক,সিঙ্গুর(হুগলি),১৮ অক্টোবর : বিগত লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের বহু আসনে সিপিএমের ভোট একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছিল । এমন অন্তত ১২ টি আসনে সিপিএম হিন্দু ভোট কেটে নেওয়ায় তৃণমূলকে জেতাতে সহায়ক হয়েছিল বলে অভিযোগ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর । আজ শুক্রবার সিঙুরে পরিত্যক্ত টাটা প্রকল্পের জমির সামনে রতন টাটার স্মরণ সভায় যোগ দেওয়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘১২ টা লোকসভা কেন্দ্রে হিন্দু ভোট কেটেছে সিপিএম । সুজন চক্রবর্তী ২ লাখ ৪১ হাজার ভোট পেয়েছে তার মধ্যে ২ লাখ ৪০ হাজার হিন্দু ভোট। কৃষ্ণনগরের এসএম সাদি ১ লাখ ৮৩ হাজার ভোট পেয়েছেন । তারমধ্যে ১ লাখ ৮০ হাজার হিন্দু ভোট । তার নিজের সম্প্রদায়ের লোকেরাই তাকে ভোট দেয়নি । তার সম্প্রদায়ের লোক ভোট দিয়েছে বিজেপিকে রুখতে তৃণমূলকে । কারণ আমরা নাকি হিন্দুদের পার্টি । সিপিএমের লক্ষ্য হলো ৫% হিন্দু ভোট কাটো আর তৃণমূলকে রাখো । কিন্তু সিপিএমের এই ব্যবসা এবারে বন্ধ হবে । সিপিএমের হিন্দুরাই বন্ধ করবে, আমি বলে গেলাম । কারন এই সিপিএমের হিন্দুদের মধ্যে একটা বড় অংশ বাংলাদেশে ধর্মীয় কারণে নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারতে পালিয়ে এসে উদ্বাস্তু হয়েছে ।’ শুভেন্দু অধিকারী জানান যে সিপিএমের এই সমস্ত কর্মকাণ্ড দেখে তাদের দলের এরিয়া কমিটির সদস্য খুব গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বিজেপিতে যোগদান করেছেন আজ ।
পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করেছেন যে আর জি করের তোর চিকিৎসকের ধর্ষণ খুনের ন্যায় বিচারের দাবিতে যে আন্দোলন চলছে সে আন্দোলনকে পরিকল্পিতভাবে শেষ করে দিতে চাইছে সিপিএম । এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি যে আরজি করের লড়াই পতাকা ছাড়া বিনা শর্তে বিজেপি আছে । আজকে কেন সিপিএম রাজ্যের বৃহত্তর বিরোধী দলকে ঢুকতে দেয়নি ? বিরোধীদলের সাংসদ ও বিধায়ককে রাজনৈতিক পরিচয় ছাড়া একজন নাগরিক হিসেবে কর্মসূচিতে যেতে দেয়নি । অভিজিৎবাবুর মতো অত্যন্ত সম্মানীয় লোককে অপমান করা এবং বিনা বিনা কারণে অগ্নিমিত্রা পালকে পার্টি অফিসে ঢুকতে দেওয়ার পথে ‘গো ব্যাক’ বলা এসব তো সিপিএমের ইচ্ছাকৃতভাবে করিয়েছে । কারণ এরাজ্যের শাসকবিরোধী মূল শক্তি যাতে ঢুকতে না পারে এবং আন্দোলন যাতে সফল না হয় । গতকালের ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে সিপিএম এই আন্দোলনের অপমৃত্যুচায় । আমরা চাই এই আন্দোলন জয়ী হোক৷’
তিনি বলেন,’ডক্টর কুণাল সরকারের মত চিকিৎসকরা এজন্য দায়ী নয় । দায়ি হ নারায়ণবাবুর মত কিছু সিপিএমের এজেন্ট । আর যাদবপুরের ছিন্নমূলেরা যারা জাতীয় সংগীত গায় না, বন্দেমাতরম বলেনা, ২৬ শে জানুয়ারি ও ১৫ ই আগস্ট পতাকা তোলে না, কলকাতার মত জায়গায় যেখানে নেতাজি ও রবি ঠাকুরের কর্মক্ষেত্র ছিল, স্বামী বিবেকানন্দের জন্মভূমি, স্বাধীনতা সংগ্রামের আন্দোলনের জায়গা, সেখানে দাঁড়িয়ে বলছে ‘কাশ্মীর মাঙ্গে আজাদি’ । এই সমস্ত সিপিএমদের চিহ্নিত করতে হবে ।’
তিনি বলেন,’সিপিএম চায়না ঝান্ডা সরিয়ে রেখে সম্মিলিত নাগরিক সমাজ গঠিত হোক । বিজেপিকে ছাড়া তৃণমূল বিরোধী নাগরিক সমাজকে কখনো সম্পূর্ণ হতে পারে ? ১৯,২১ এবং ২৪ তিনটি নির্বাচন দেখলে বিজেপি ২ কোটি ২৮ লক্ষ,২ কোটি ৩০ এবং ২ কোটি ৩৩ লক্ষ ভোট পেয়েছে । বিরাট জনগোষ্ঠীর সমর্থন বিজেপির প্রতি আছে ।’
পাশাপাশি সিঙ্গুর আন্দোলনে মমতা ব্যানার্জির আন্দোলনের ক্ষেত্র তৈরি করে দেওয়ার জন্য রাজ্য সিপিএমের সদর দপ্তর আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতাদের দায়ি করেছেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বলেন,’সেদিন যদি বর্গাদারদের সিপিএম ক্ষতিপূরণ দিত তাহলে মমতা কি এখানে লোক পেত ? ওকে তো ডানকুনির ওপাশ থেকে ছুটে পালাতে হতো । ১১০০০ জমির মালিক চেক নিয়েছে, বর্গাদাররা চেয়েছিল এক চতুর্থাংশ টাকা তাদের দেওয়া হোক । কিন্তু সিপিএম দেয়নি । সেই বর্গাদারদের নিয়েই মমতা ব্যানার্জি ঢুকেছে । বর্গাদাররা কাঁটাতারের বেড়া কাটতে গিয়েছিল সেদিন কিন্তু সিপিএম কৃষকদের মাথা ফাটিয়েছে । ভুলগুলো করে গেছে । সেই জন্য বুদ্ধদেব বাবুর মতো একজন সৎ মানুষের প্রচেষ্টা বৃথা হয়েছে । একইভাবে ২০০৭ সালের ১২ই মার্চ যখন আমাকে উনি বিধানসভায় ডেকেছিলেন আমি বলেছিলাম ‘বুদ্ধবাবু লড়াইটা লক্ষণ সেঠের বিরুদ্ধে আপনার বিরুদ্ধে নয় ।কিন্তু সিপিএমে বুদ্ধবাবুর মতন নেতাদের কথা চলতো না। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে বুদ্ধ বাবুদের কথা চলতো না ।তারা অসহায় ছিল । জ্যোতি বাবু যেমন দলকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন তেমন বুদ্ধবাবু করতে পারেনি ।’
কিরে সিপিএম নেতা হাইকোর্টের আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্যকেও এক হাত নিয়েছেন । বিকাশ ভট্টাচার্যকে নিয়ে সেনা করে শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘জুনিয়র ডাক্তার বাবুদের লড়াইটা বিরাট অংশের রাষ্ট্রবাদী মানুষকে সাথে নিয়ে । কিন্তু রাজ্যের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিজেপিকে ঢুকতে না দিয়ে সিপিএম যত রকমের অসভ্যতা আছে করেছে এবং করছে… তার কারণ বিকাশ ভট্টাচার্য যেমন কোন মামলার নিষ্পত্তি করতে পারে না…তার শুরুটা খুব ভালো কিন্তু কোন মামলার নিষ্পত্তি হয় না…যারা চাকরি প্রার্থী তারা বহু লোক আমার কাছে এসে বলে গেছে যে কোটি কোটি লক্ষ লক্ষ টাকা আমাদের তুলে দিতে হয় কিন্তু কোন ফল নেই। সিপিএম চায়না কোন সমস্যার সমাধান হোক ।’।