ধর্মনিন্দার গুজব ছড়িয়ে ময়মনসিংহের ভালুকায় ২৭ বছরের হিন্দু যুবক দিপু চন্দ্র দাসকে নৃশংস বর্বরোচিতভাবে পিটিয়ে আধমরা করার পর জীবন্ত পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়েছে । গোটা বিশ্বের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ ইসলামি মৌলবাদের এই নৃশংস বর্বর চেহেরার তীব্র সমালোচনা করছে । কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ সিপিএম এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরেও ভোটব্যাংকের স্বার্থে বিষয়টি “শ্রমিক হত্যা” বলে লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করছে । তারই প্রমান পাওয়া গেল গতকাল পুরাতন মালদায় সিপিএম নেত্রী মিনাক্ষী মুখার্জির বক্তব্যে । তার কথায়,”নাম বাংলাদেশের দিপু দাস হোক । নাম বাংলাদেশের রিয়াজুল হোক । আমাদের কাছে তারা দুজনই শ্রমিক । দুজনই গায়ে ঘাম ঝরাত । দুজনাই যে ধর্মের রাজনীতি, হিংসার রাজনীতি, মৌলবাদের রাজনীতি, যো রুঢ়িবাদ কা রাজনীতি হ্যায়, যো কট্টরবাদ কা রাজনীতি হ্যায়, আগর ও লোগ গরিবকা জান লেতা হ্যায়,শ্রমিককা জান লেতা হ্যায়, আগর ইসকা খিলাফ কই আওয়াজ বুলন্দ করতা হ্যায়, ও হ্যায় লাল ঝান্ডা৷ ও হ্যায় বামপন্থী । ওরা হলো শ্রমিকের পার্টি৷ ওরা হলো ক্ষেতমজুরদের পার্টি৷”
কিন্তু সিপিএম যতই এই ইসলামি কট্টরপন্থাকে আড়াল করার চেষ্টা করুক না কেন, বাংলাদেশের ইসলামি জিহাদি জুবায়ের আহমেদ তাশরীফ স্পষ্ট করে দিয়েছে যে দিপু চন্দ্র দাসের নৃশংস বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড সম্পূর্ণ ধর্মীয় বিষয় এবং তার সম্প্রদায়ের নৃশংসতার ভিডিও দেখে সে আনন্দিত হয়েছে । ওই সন্ত্রাসীর একটা ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে । যেখানে তাকে বলতে শোনা গেছে, ‘আগামীতে রসুলের অবমাননার বিচার,সম্প্রতি ময়মনসিংহ বাসী যেভাবে করেছে এইভাবেই করতে হবে গোটা দ্যাশবাসীকে৷ রসুলের অবমাননার বিচার সরকার করবে কি করবে না জানি না । জনগনই অ্যার বিচার করবে…. ইনশাআল্লাহ । সাম্প্রতিক কালে ময়মনসিংহবাসী বিচার করেছে,পরপারে পাঠিয়ে দিয়েছে ।’
জুবায়ের আহমেদ তাশরীফ বলেছে, ‘হে প্রিয় ময়মনসিংহবাসী, বাংলাদেশের এই কষ্টের ভিতরেও আপনারা একটা ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন । আপনারা মানুষের হৃদয়ে আনন্দ দিয়েছেন । ময়মনসিংহে সাম্প্রতিক কালে যে ঘটনা আমরা দেখেছি, এই ঘটনা থেকে সারা বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মুসলমানের শিক্ষা নিতে হবে । প্রত্যেকটা জেলার মানুষ, প্রত্যেকটা জায়গার মানুষকে শিক্ষা নিতে হবে এই ময়মনসিংহের মানুষের কাছ থেকে ।’
ওই জিহাদি আরও বলেছে,’বাংলাদেশে যেহেতু সঠিক বিচার হয় না, রসুলের অবমাননার বিচার হয় না, সেইহেতু সেই বিচার আমাদেরই করতে হবে । ময়মনসিংহবাসী সাম্প্রতিক কালে যে কাজটি করেছেন,আল্লাহর কটুক্তিকারী, তার নাম হল রবীন চন্দ্র দাসের পুত্র দীপু চন্দ্র দাস । দীপু চন্দ্র দাসকে পরপারে পাঠিয়ে দিয়েছে । খুব…আমি সবকিছু খুলে বলতে পারছি না, ফেসবুকের গাইডলাইনের ব্যাপার স্যাপার আছে, কিন্তু কথা হচ্ছে যে দৃশ্য আপনারা ফেসবুকে অনেকে দেখেছেন, অনেকেই পোস্ট করেছেন,পড়ে এবং দেখে হাদি ভাইয়ের চলে যাওয়ার মধ্যে মনে অনেক কষ্ট, এ্যার ভিতরেও যেন সান্ত্বনা পেয়েছি ঘটনা পরে এবং দেখে ।’
ময়মনসিংহের সন্ত্রাসীদের নৃশংসতার প্রশংসা করে ওই জিহাদি বলেছে,’প্রিয় ময়মনসিংহবাসী,এ্যার পুরষ্কার ইনশাআল্লাহ একদিন আল্লাহ আপনাদের দেবেন হাসনের ময়দানে । রসুলকে গালি দেওয়া কত ভয়াবহ, কত জঘন্য, আজকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় এইরকম কিছু বের হয় । রসুলকে কটুক্তি করার মত অনেক ব্যক্তি দেশের আনাচে কানাচে পড়ে আছে । কিন্তু বিচার না হওয়ার কারনে এদেশ শিক্ষা হয়না । সারা দেশবাসী ময়মনসিংহবাসীর কাছে শিক্ষা গ্রহণ করুন । যারা রসুলের সত্যিকারের আশিক হবে তারা দুষমনকে ছাড় দিতে পারে না৷ যদি কোনো ব্যক্তি কাফের হয়ে যাওয়ার পর ফিরে আসে,তার মাফ হয়ে যেতে পারে, কিন্তু …..।’
দীপু চন্দ্র দাশের দেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার পথেও হামলা
এদিকে দীপু চন্দ্র দাশের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে যুক্ত ইসলামি জনতা হুমকি দিয়ে বলেছিল,“দীপু চন্দ্র দাশের লাশ যে নিয়ে আসবো তারে মারমু। দাঁড়া, তোদের আগে মাইরা নেই” । তবে এই হুমকি নিছক কথার কথা ছিল না তার প্রমান পাওয়া গেছে । দীপু চন্দ্র দাশকে নির্মমভাবে হত্যা করার পরও থামেনি সাম্প্রদায়িক হিংসা । শ্মশানে খাটিয়ায় করে লাশ নিয়ে যাওয়াএ সময়ও মৌলবাদীদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন দীপু চন্দ্র দাশের শোকাহত পরিবারের সদস্যরা। শোকের মুহূর্তে মানবিকতা দেখানোর বদলে দেখানো হয়েছে ভয়, ঘৃণা আর অমানবিকতা । স্থানীয় হিন্দুদের কথায়,এ কোন বাংলাদেশ?যেখানে মৃতের মর্যাদাও নিরাপদ নয়,যেখানে পরিবারের কান্নার মাঝেও চলে হামলা,যেখানে মিথ্যা অভিযোগের আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় একজন নিরপরাধ মানুষকে,আর প্রশাসনের নীরবতা অপরাধীদের আরও বেপরোয়া করে তোলে।।

