প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২০ জুলাই : তৃণমূলকে ফাঁসাতে নিজেদের বাড়িতে বোমা মারানোর ঘটনা ঘটানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছে সিপিএম প্রার্থী সুশান্ত মণ্ডল । রেহাই পায়নি তাঁর সহযোগী সিপিএম কর্মী রাম সরকার।দু’জনেই এখন রয়েছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার পুলিশের হেপাজতে। তবে এখনও ফেরার রয়েছেন সুশান্তর স্ত্রী তথা পঞ্চায়েত ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের প্রার্থী দেবিকা দেবনাথ । দম্পতির আসল স্বরুপ এবং কেনই বা তাঁরা পঞ্চায়েত সদস্য হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন তার উত্তর এখন পুলিশ হাতরে বেড়াচ্ছে। পাশাপাশি পুলিশ এও জানতে চাইছে কেন জামালপুরের বাড়ি ছেড়ে একদা বেপাত্তা হয়ে গিয়েছিলেন দম্পতি । রাজ্য সরকারের ’গতিধারা’ প্রকল্পের যে গাড়িটি সিপিএমের প্রার্থী দম্পতি ব্যবহার করতেন সেটি কি ভাবে তাঁরা পেলেন,সেই প্রশ্নেরও উত্তর পুলিশ খুঁজছে।
পঞ্চায়েত ভোটে জামালপুর-১ পঞ্চায়েতের ১৪১ নম্বর বুথে সিপিএমের প্রার্থী ছিলেন সুশান্ত মণ্ডল।
আর তাঁর স্ত্রী দেবিকা দেবনাথ একই পঞ্চায়েতের ১৩৯ নম্বর বুথে সিপিএমের প্রার্থী ছিলেন ।সিপিএমের প্রার্থী সুশান্ত মণ্ডলকে গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ তার কাছ থেকে একটি সাদা রঙের এসইউভি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করেছে। পুলিশের দাবি, ওই গাড়িতে করেই নদীয়া ও উত্তর ২৪ পরগনা থেকে বোমা আনা হয়েছিল ।পুলিশ এও জানতে পেরেছে, ওই গাড়িটি রাজ্য সরকারের ’গতিধারা’ প্রকল্পে ২০২০ সালের ১৮ জুন গাড়িটি কেনা হয়েছিল।। গাড়িটির মালিক যদিও সুশান্ত বা দেবিকা নায় গাড়িটির মালিক কলকাতার টালিগঞ্জের জনৈক এক মহিলা। ওই গাড়িটি কী ভাবে সিপিএমের প্রার্থী-দম্পতির কাছে এল তার খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ।জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, ’গতিধারা’ প্রকল্পের গাড়ি হস্তান্তর করা যায় না। তবুও সেই গাড়ি সিপিএমের প্রার্থী-দম্পতির কাছে কি ভাবে এল তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে ।
উত্তরমোহনপুর গ্রামের বাসিন্দাদের বেশ কয়েকজন বৃহস্পতিবার জানান,বেআইনি অর্থ লগ্নিকারী সংস্থার (চিটফাণ্ড)সঙ্গে জড়িত ছিলেন ওই দম্পতি। তাঁদের কথায়, ওই সংস্থায় অর্থলগ্নি করে অনেকে প্রাতারিত হন । তা নিয়ে গ্রামে ক্ষোভ ছড়ায়। সেজন্য প্রায় বছর দশেক আগে দম্পতি উত্তরমোহনপুর ছেড়ে বেপাত্তা হয়ে যান । পরে তাঁরা জমি-জায়গা বিক্রি করে গ্রামের লোকজনের পাওনা মেটান । বছর দেড়েক হল ফের দম্পতি উত্তরমোহনপুর গ্রামের বাড়িতে এসে থাকা শুরু করেন। প্রথমে তাঁরা তৃণমূলের লোকজনের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’ বাড়ান। পরে হঠাৎ করেই দম্পতি সুশান্ত মণ্ডল ও দেবিকা দেবনাথ সিপিএমের ঘনিষ্ট হয়ে যান । জামালপুর-১ পঞ্চায়েতের দুটি বুথে তাঁরা সিপিএমের প্রার্থীও হয়ে যান। প্রার্থী হয়ে ভোটে জেতার জন্যে তাঁরা প্রচুর অর্থ খরচ করা শুরু করেন বলে অভিযোগ। প্রায়সই রাতে বুথের কর্মীদের জন্যে এলাহি খাবারের আয়োজন তাঁরা করতেন।অর্থ খরচে জামালপুরের সিপিএমের অন্য প্রার্থীরা ওই দম্পতির ধারে কাছেও পৌছতে পারেন নি। তবে এত কিছুর পরেও পঞ্চায়েত সদস্য হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়নি দম্পতির ।
তবে সিপিএম প্রার্থী দম্পতির ভোটে এত অর্থ খরচের উৎস কি,সেই বিষয়টি আজও গ্রামের সকলের কাছেই অজানা। সুশান্ত ও দেবিকা কি কাজ করেন সেটাও রহস্যে মোড়া।গ্রামবাসীদের কথা অনুযায়ী,নিজেকে আইনজীবী বলে গ্রামবাসীদের কাছে পরিচয় দিত সুশান্ত গ্রামবাসীরা এও বলেন, উত্তর ২৪ পরগণার সোদপুরে ফ্ল্যাট বাড়ি,,গাড়ি ও বাসের ব্যবসা রয়েছে বলেও সুশান্ত তাদের বলতো।
নিজেদের বাড়িতে বোমা মারানোর ঘটনা ঘটিয়ে তৃণমূলকে ফাঁসাতে গিয়ে ফেঁসে যাওয়া সুশান্ত ও তাঁর স্ত্রী দেবিকাকে নিয়ে এখন যথেষ্টই অস্বস্তিতে পড়েছে সিপিএম। দলের জামালপুর-১ এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুকুমার মিত্র বলেন,এখন লোকে অনেক কিছুই বলছে। এ সব তো আগে শোনা যায়নি । তৃণমূলের লোকজনের সঙ্গে যোগযোগ ছিল,এমন কিছুও প্রকাশ্যেও দেখা যায়নি। সুকুমারবাবুর দাবি,বামপন্থী পরিবারের লোক, তৃণমূল-বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার মানসিকতা রয়েছে, এটা দেখেই ওই দম্পতিকে প্রার্থী করা হয়েছিল ।
যদিও সিপিএম কর্মী রাম সরকার গ্রেস্তার হওয়ার পর সেই পুলিশকে জানায় ,তৃণমূলকে ফাঁসাতে ২৪ জুন গভীর রাতে নিজের বাড়িতে বোমা মারানোর মূল পরিকল্পনাকারী সুশান্ত। এই পরিকল্পনার কথা সুশান্তর স্ত্রী দেবিকাও জানতো । রাম পুলিশকে এও জানিয়েছে,বোম আমদানি করে তাঁর হাতে সুশান্ত নিজেই তুলে দেয় । নিজেজেদের পরিকল্পনা সফল করতে তাঁকে দিয়ে সাশান্ত নিজের বাড়িতে বোমা মারানো করায় বলে রাম মালিক জেরার পুলিশকে জানিয়েছে। পুলিশের আরো দাবি,উত্তর ২৪ পরগণার ঘোলা থানা এলাকা থেকে গ্রেফতারের পর সুশান্ত তাঁর পরিকল্পনা এবং ওই চারচাকা গড়িতে করে বোম আমদানির কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। তৃণমূলের জামালপুর ব্লক সভাপতি মেহেমুদ খাঁন এদিন বলেন ,“সিপিএমের আসল স্বরুপ প্রকাশ্যে চলে এসেছে।তৃণমূলকে ফাঁসাতে গিয়ে সিপিএমের প্রার্থীরাই জালে জড়িয়ে গিয়েছে । এখন মুখ লোকানোর জায়গা পাচ্ছে নি সিপিএমের নেতারা ।।