এইদিন ওয়েবডেস্ক,বর্ধমান,২৪ সেপ্টেম্বর : গরু পাচারকার মামলায় দীর্ঘ প্রায় ২ বছর জেলবন্দি থাকতে হয়েছে বীরভূমের তৃণমূল কংগ্রেসের দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডল ও তার মেয়ে সুকন্যাকে । অবশেষে কয়েক দিনের ব্যবধানে জামিন পেয়েছেন পিতাপুত্রী । এদিকে অনুব্রত জামিন পাওয়ায় শাসকদলের মধ্যে খুশির ছোঁয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে । কিন্তু রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ ‘গরুচোর’ অনুব্রতকে নিয়ে শাসকদলকে খোঁচা দিয়ে বলেছেন,’এরাই তৃণমূলের গর্ব।’
আজ বর্ধমান শহরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অনুব্রত মণ্ডলের জামিন প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘গরুচোর জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে ২ বছর পর। বীরভূমে মিলন উৎসব হবে। পার্টি করবে তৃণমূল। এরাই তৃণমূলের গর্ব। সম্পত্তি আছে বলে এরাই বাঘ- সিংহ-হাতি । সাধারণ সৎ নেতাদের গুরুত্ব নেই।’ পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আজকের বীরভূম সফর নিয়ে তিনি কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘বীরভূম থেকে পার্টির ইনকাম কমে গেছে, আমার মালকরি আসবে…তার প্রস্তুতি কতদূর কি হলো… সব ঠিক আছে কিনা…. কাজল শেখ কি সব খেয়ে নিল নাকি আছে,এগুলো দেখতে গেছেন দিদি।’
প্রসঙ্গত,২০২২ সালের ১১ অগাস্ট গোরুপাচার মামলায় বীরভূমের নিচুপট্টি এলাকার বাড়ি থেকে অনুব্রতকে গ্রেপ্তার করেছিল সিবিআই। প্রথমে আসানসোল সংশোধনাগারে তাঁকে রাখা হয়েছিল তাকে । পরে তাঁকে দিল্লির তিহাড় জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। ২০২৩ সালের ২১ মার্চ থেকে তিহাড় জেলেই বন্দি ছিলেন অনুব্রত । মেয়ে সুকন্যাকে বাবার সঙ্গে একই জেলে রাখা হয়েছিল । এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট(ইডি) চার্জশিটও আদালতে জমা করে । ইডির আইনজীবীর বক্তব্য,ভাষার গেরোই বিচার প্রক্রিয়া পিছিয়ে যাওয়ার কারণে গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার হওয়া একের পর এক অভিযুক্তের জামিন আটকাতে পারছে না ইডি ! শেষ পর্যন্ত অনুব্রত ও তার মেয়েকে শুক্রবার দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট জামিন দিয়ে দেয় ।
জানা গেছে, গরু পাচার মামলায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাঁদের অধিকাংশই বাংলা ছাড়া অন্য কোনও ভাষা জানেন না। ফলে তাঁদের বয়ান বাংলাতেই রেকর্ড করা হয়েছে। এখন সেই হাজার হাজার পাতার বয়ান বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করতে হবে। যে কাজ এখনও শেষ হয়নি এবং অনুবাদের কাজ যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ। ফলে বয়ানের কপি হাতে না থাকার কারণে মূল মামলার ট্রায়াল কোনওভাবেই শুরু করা যাচ্ছে না। বিচারক জ্যোতি ক্লেয়ারের এজলাসেও দেখা গিয়েছে, এই ভাষাগত সমস্যার কারণে কোন অভিযুক্ত, কী বয়ান দিয়েছেন, তা বুঝতে পারেননি বিচারক। উল্লেখ্য, অনুব্রত জেরার সময় তাঁর বয়ান লিখতেও পারেননি। তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি লিখতে পারেন না। যেকারণে তাঁকে জেরার পুরো প্রক্রিয়া ভিডিয়ো রেকর্ড করা হয়েছিল।
এদিকে দুই বছরেরও বেশি সময় পরে আজ বীরভূমে ফিরলেন তৃণমূলের বীরভূম জেলার সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল । সোমবার রাতের তিনি বিমানেই কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন । আজ মঙ্গলবার ভোরে বিমানবন্দরে নেমে গাড়িতে বোলপুরের পথে রওনা দেন । তার আগেই মধ্যে কার্যত সাজো সাজো রব সিউড়ি, বোলপুর, নানুর সহ বীরভূমের তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে ৷ সিউড়ি দলীয় কার্যালয় পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়। বসানো হয় ফ্লেক্স, তাঁর নামাঙ্কিত বোর্ড। কার্যালয়ের অনুব্রতর বসার ঘরও সাজানোর হয়েছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা একপ্রস্ত মাংস ভাত খাওয়া দাওয়াও করে নিয়েছে । বোলপুরের নিচুপট্টিতে অনুব্রতর বাড়ির সামনে অনুগামীরা ভিড় জমিয়ে ‘অনুব্রত মণ্ডল জিন্দাবাদ’ শ্লোগানও দেয় ।।