প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৩ মে : সৌজন্য রুপ নিয়ে নিল সংঘর্ষের। ভোটের ময়দানে প্রধান প্রতিপক্ষ তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী কীর্তি আজাদকে দেখেতে পেয়ে হাসি মুখে তাঁকে জড়িয়ে ধরেছিলেন বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ। সোমবার চতুর্থ দফার ভোটের দিন বেলায় বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা অধীন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরবাসী দেখেছিলেন জুজুধান দুই রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর এমন সৌজন্য বিনিময়।তবে এই সৌজন্য বেশিক্ষুণ স্থায়ী হয় নি।দিলীপ ঘোষ মন্তেশ্বরের উজনা গ্রাম ছেড়ে শুশুনিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত তুল্লা গ্রামে পৌছতেই লাটে ওঠে সৌজন্য।
তুল্লা গ্রামে পুলিশের সামনেই শাসক দলের কর্মী ও সমর্থকদের চুড়ান্ত বিক্ষোভে নাস্তানাবুদ হতে হয় দিলীপ ঘোষ কে।তাঁর রক্ষীদের গাড়ি সহ সংবাদ মাধ্যমের একাধীক গাড়িতেও চলে বেপরোয়া ভাঙচুর।পরে কোনক্রমে দিলীপ ঘোষকে নিয়ে তাঁর নিরাপত্তা রক্ষীরা ওই এলাকা ছাড়েন।পরে কালনা গেট এলাকাতেও একই রকম পরিস্থিতির মুখে পড়েন বিজেপির হেভিওয়েট প্রার্থী। এমন পরিস্থিতির মুখে পড়ার জন্যে পুলিশ ,কেন্দ্রীয় বাহিনী ও নির্বাচন কমিশন, সবাইকে এক আসনে ফেলে দুষেছেন দিলীপ ঘোষ।
বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা আসনে তৃণমূল এবার দেশের প্রক্তন ক্রিকেটার কীর্তি আজাদকে প্রার্থী করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপি দিলীপ ঘোষকে প্রার্থী করে।প্রচার চলার কটা দিন দুই প্রার্থীর বাকযুদ্ধ অব্যাহত থাকে।একজন আর এক জনককে তুলোধনা করতে পিছুপা থাকেনি।এমন জুজুধান দুই প্রার্থী এদিন বেলায় পৌছান মন্তেশ্বরের কুসুমগ্রাম এলাকায়। সেখানেই পথে দুই প্রার্থীর কনভয় মুখোমুখি হয়।গাড়ি থেকে নেমে দুই প্রার্থী হাসিমুখে একে অপরকে আলিঙ্গন করে সৌজন্য বিনিময় করেন । এররপর দিলীপ ঘোষ মন্তেশ্বরের তুল্লা গ্রামের বুথের ভোট প্রক্রিয়া সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে বেরিয়ে পড়েন ।
এদিন ভোট প্রক্রিয়া শুরুর কিছু সময়ের পর থেকেই মন্তেশ্বরে বিভিন্ন বুথে অশান্তি ছড়াতে শুরু করে । তার মধ্যে উজনা গ্রামের ১০৪ এবং তুল্লা গ্রামের ৫৬ ও ৫৭ নম্বর বুথের বিজেপি এজেন্টকে মারধোর করে বুথ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে শাসক দলের লোকজনের বিরুদ্ধে। তুল্লা গ্রামের বুথ জ্যাম করে রাখারও অভিযোগ ওঠে। সেই খবর পেয়ে দিলীপ ঘোষ এদিন বেলায় প্রথম উজনা গ্রামে যান। সেখানকার বুথের এজেন্টকে ফের বথে বসার ব্যবস্থা করে দিয়ে দিলীপ ঘোষ তুল্লা গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
তুল্লা গ্রামে বুথে পৌছানোর আগেই শাসক দলের লোকজন দিলীপ ঘোষের কনভয় আটকের দিয়ে গো-ব্যাক ও জয় বাংলা শ্লোগান দেওয়া শুরু করে ।তা নিয়ে উত্তেজনা চরমে উঠলে গাড়ি থেকে নেমে পড়েন । বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে তাঁর কথা কটাকাটি শুরু হয় ।সেই সময় দিলীপ ঘোষ এক তৃণমূল কর্মীকে ধাক্কা দিলে উত্তেজনা চরমে ওঠে।তখন তৃণমূল কর্মীরা লাঠি উঁচিয়ে দিলীপ ঘোষের দিকে রুদ্রমূর্তি নিয়ে তেড়ে গেলে পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে রুখে দাঁড়ায় । সেই সময় লাঠির ঘা লেগে ঈনশান খান নামে এক তৃণমূল কর্মী আহত হন । তাকে দিলীপ ঘোষের গাড়ির সামনে শুইয়ে দিয়ে তৃণমূল কর্মীরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে । পুলিশ কোন রকমে দিলীপ ঘোষের গাড়ি সেখান থেকে বের দেয় ।তৃণমূল কর্মীরা পিছু ধাওয়া করে দিলীপ ঘোষের কনভয় ও সংবাদ মাধ্যমের গাড়ি লখ্য করে ইট পাথর ছোড়া শুরু করে। তাতে দিলীপ ঘোষের নিরাপত্তা রক্ষীদের একটি গাড়ি সহ সংবাদ মাধ্যমেরও একাধীক গাড়ি ভেঙে চুরে যায়।রক্তাত হন সংবাদ মাধমের প্রতিনিধিরাও।
এরপর ফের বর্ধমানের কালনা গেট এলাকায় দিলীপ ঘোষ একই রকম পরিস্থিতির মুখে পড়েন। কালনা গেট এলাকায় দিলীপ ঘোষের নিরাপত্তা রক্ষীদের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে ।ইটের আঘাতে দুই নিরাপত্তা রক্ষীও জখম জখম হন। পর পর এমন হামলা নিয়ে দিলীপ ঘোষ পুলিশ,কেন্দ্রীয় বাহিনী ও কমিশণের বিরুদ্ধে চুড়ান্ত ক্ষোভ উগরে দেন। তার পরেই কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন দিলীপ ঘোষের উপর হওয়া হামলা ও অশান্তির ঘটনার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তলব করে ।
দিলীপ ঘোষ মন্তেশ্বর ছাড়ার পর তৃণমূল প্রার্থী কীর্তি আজাদ মন্তেশ্বরে পৌছান।তার মধ্যে তুল্লা এলাকায় দিলীপ ঘোষকে ঘিরে বিক্ষোভ চলার সময় আহত হওয়া তৃণমূল কর্মী ঈনশান শেখ কে ভর্তি করা হয় মন্তেশ্বরর ব্লক হাসপাতালে। তাকে দেখতে দুপুরে তৃণমূল প্রার্থী কীর্তি আজাদ এবং মন্তেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী ওই তৃণমূল কর্মীকে দেখতে হাসপাতালে যান।
দিলীপ ঘোষ বলেন,’তুল্লা এলাকার বুথ থেকে বিজেপি এজেন্টকে মারধোর করে বুথ থেকে বের করে দেওয়া হয় । এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোটারদের ভোট দিতে আসতে দেওয়া হচ্ছে না, এমন খবর পেয়েই আমি তুল্লা এলাকার বুথে যেতে চাই। শাসক দলের লোকজন আমাকে যেতে দিতে চায়না । তারা ইচ্ছাকৃত ভাবে বাধা সৃষ্টি করে । আমার পথ আটকায় । আমার নিরাপত্তারক্ষী এবং সংবাদ মাম্যমের প্রতিনিধিদেরও শাসক দলের কর্মীদের হামলার মুখে পড়তে হয় । একই ভাবে আমায় ঠেকাতে বর্ধমানের কালনাগেট এলাকাতেও তৃণমূলের লোকজন হামলা আক্রমণ চালায় ।’
কীর্তি আজাদ বলেন,’লাঠিচার্জে তৃণমূল কর্মী জখম হয়েছে । বিজেপি লোকতন্ত্রকে একেবারে খতম করে দিয়েছে।’ আর মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বলেন,’ভোট বানচাল করতেই দিলীপ ঘোষ এদিন মন্তেশ্বরে এসে অশান্তি পাকায় ।’ এদিনের আশান্তির জন্য দিলীপ ঘোষ ও তাঁর নিরাপত্তা রক্ষীরাই দায়ী বলে গ্রন্থাগার মন্ত্রী দাবি করেন।।