এইদিন ওয়েবডেস্ক,মালদা,০১ জুলাই : এমপি ল্যাড (লোকাল এরিয়া ডেভেলাপমেন্ট) স্কিমের টাকায় কেনা অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া সংক্রান্ত বিবাদ মামলায় মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদকসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার জন্য ইংরেজবাজার থানাকে নির্দেশ দিল মালদা সিজিএম আদালত । চলতি বছরের ফেরুয়ারী মাসে মালদার বাসিন্দা পেশায় রেল বিভাগের কর্মী গৌতম ঘোষের তরফ থেকে দায়ের করা এক মামলার ভিত্তিতে বিচারক এক নির্দেশ দিয়েছেন । এফআইআর দায়েরের পাশাপাশি পুলিশকে দ্রুত তদন্ত শুরু করার জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।
মালদা শহরের সুভাষপল্লী এলাকায় বাড়ি গৌতম ঘোষের । তাঁর আইনজীবী বিনয় সরকার জানিয়েছেন, গৌতম ঘোষের হয়ে গত ফেব্রুয়ারী মাসে মালদা সিজিএম আদালতে ১৫৬(৩) ধারায় একটি মামলা ফাইল করেছিলেন । অভিযোগ ছিল, গৌতমবাবু তাঁর এক রোগীকে চিকিৎসার কারনে কলকাতা নিয়ে যাওয়ার জন্য মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অব কমার্সের কাছ থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেছিলেন । ২২ হাজার টাকা ভাড়া চুক্তি হয় । তিনি যথারীতি সেই ভাড়া মিটিয়ে দেন । কিন্তু কালিয়াচক যাওয়ার পর রোগীর আত্মীয়রা সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা মালদাতেই রোগীর চিকিৎসা করাবেন । তাই ওনারা সেখান থেকে ঘুরে এসে রোগীকে মালদা শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন । তারপর মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অব কমার্সের অফিসে এসে অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া বাবদ বাকি টাকা ফেরত চান গৌতমবাবুরা । তখন ওই সংস্থা টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করে ।
পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্সটা এমপি ল্যাড স্কিম থেকে কেনা । ওটা কোনও বেসরকারি সংস্থা চালাতে পারে না । একমাত্র সিএমও ও ডিএম ওই অ্যাম্বুলেন্সের মালিক । তা সত্ত্বেও ওই সংস্থা ভাড়ার অতিরিক্ত টাকা ফিরিয়ে দিতে অস্বীকার করলে এনিয়ে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন গৌতমবাবু । কিন্তু থানা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি । শেষে সিজিএম আদালতে ১৫৬ (৩) ধারায় মামলা ফাইল করা হয় । তারপর মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক জয়ন্ত কুন্ডুসহ উত্তম বসাক ও কমলেশ বিহারী নামে দুই আধিকারিকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার জন্য থানাকে নির্দেশ দেয় আদালত ।’
গৌতম ঘোষের অভিযোগ, ‘মালদা থেকে কালিয়াচকের দূরত্ব মাত্র ২৭ কিলোমিটার । তাই আমাদের পক্ষ থেকে চেম্বার অব কমার্সের কাছে আবেদন জানানো হয়েছিল যাতে ভাড়া বাবদ ২২ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে ন্যাহ্য ভাড়া নেওয়া হয় । কারণ সামান্য কিছু কিলোমিটার পথ গিয়েছিল অ্যাম্বুলেন্সটি । তার জন্য অত টাকা ভাড়া হতে পারে না । কিন্তু ওরা মানছে না দেখে আমরা অর্ধেক টাকা পর্যন্ত ছেড়ে দিতেও রাজি হয়েছিলাম । কিন্তু চেম্বার অফ কমার্স এর পক্ষ থেকে জানানো হয় ৫ হাজার টাকা ছাড়া হতে পারে বাকি টাকা ছাড়া সম্ভব নয় । তাই বাধ্য হয়ে আমরা ইংরেজবাজার থানা ও পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হই । কিন্তু তাতে কোন লাভ না হওয়ায় শেষে আদালতের স্মরনাপন্ন হই ।’
যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক জয়ন্ত কুন্ডু । তিনি বলেন, ‘নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই ভাড়া নেওয়া হয়েছে । এই অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার হয় না । যা করা হয়েছে চেম্বার অব কমার্সের এক্সিকিউটিভ বডিতে সিদ্ধান্ত নিয়েই করা হয়েছে ।’
বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুর এমপি ল্যাড স্কিম থেকে অ্যাম্বুলেন্সটি কেনা হয়েছে বলে জানা গেছে । এই বিষয়ে খগেনবাবু বলেন, ‘আমার কোটায় দুটি অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়েছে । একটা মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অব কমার্সকে দেওয়া হয়েছে । আর একটা দেওয়া হয়েছে চাঁচলের রোটারি ক্লাবকে । এমপি ল্যাডে কেনা অ্যাম্বুলেন্সগুলি সম্পুর্ণ জেলা শাসকের অধীনে । ‘নো লস নো গেইন’ এই পলিসিতে এম্বুলেন্সগুলি চলে ।’ তবে একজন রোগীকে প্রায় ২৭ কিমি পথ নিয়ে গিয়ে ২২ হাজার টাকা ভাড়া নেওয়া প্রসঙ্গে কোন মন্তব্য করেননি সাংসদ ।
এদিকে এই বিষয়ে বিজেপিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব । মালদা জেলার যুব তৃনমূলের সভাপতি প্রসেনজিৎ দাস বলেন, ‘ বিজেপি ব্যবসায়ীদের টাকায় অ্যাম্বুলেন্স কিনে ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছে । ওটা ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার হচ্ছে ।’।