দিব্যেন্দু রায়,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),০৫ সেপ্টেম্বর : বসবাসের জন্য ঘর তৈরি করতে নিজেদের ৬ মাসের সন্তানকে দেড় লক্ষ টাকায় এক প্রতিবেশীকে বিক্রি করে দিয়েছিল এক দম্পতি । প্রকাশ্য রাস্তায় দম্পতির মধ্যে কোনো কারনে বচসা শুরু হলে নিজেরা সেকথা বলে ফেলে । এদিকে দম্পতির মধ্যে তর্কাতর্কির সময় শিশু বিক্রির বিষয়টি পথচারীদের কানে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তারা থানায় খবর দেয় । শেষে বুনি বাউড়ি (২৬) ও তার স্বামী অচিন্ত্য সরকার নামে ওই দম্পতি গ্রেফতার করে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া থানার পুলিশ । পাশাপাশি গ্রেফতার করা হয় শিশুটির ক্রেতা সুভাষ পণ্ডিত এবং তার স্ত্রী চম্পাদেবী নামে এক দম্পতিকেও । তাদের কাছ থেকেই উদ্ধার হয় ৬ মাসের ওই শিশুটি । সেই সঙ্গে পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে বুনি বাউড়ি কাছ থেকে উদ্ধার করে সন্তান বিক্রির ৮৯ হাজার টাকাও । ধৃতদের আজ মঙ্গলবার কাটোয়া মহকুমা আদালতে তোলা হয় ।
জানা গেছে,কাটোয়া থানার পলসোনা গ্রামে বাড়ি অচিন্ত্য সরকারের । অচিন্ত্য পশ্চিম বর্ধমান জেলার উখড়া থানার আনন্দপল্লী এলাকার একটি মিষ্টির দোকানে কাজ করেন । কর্মসূত্রে তিনি আনন্দপল্লী এলাকাতেই থাকেন । সেই সূত্রে পেশায় পরিচারিকা বুনি বাউড়ির সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে । পরে প্রথম স্বামী ফড়িংকে ছেড়ে অচিন্ত্যকে বিয়ে করেন বুনি বাউড়ি । মহিলার প্রথম পক্ষের কোনো সন্তান ছিল না । কিন্তু দ্বিতীয় পক্ষে তার দুই সন্তান রয়েছে । তার মধ্যে বড় ছেলের বয়স ৫ বছর এবং ছোট ৬ মাসের শিশু । অন্যদিকে বিহারের ভাগলপুর জেলার বিনপুর থানা এলাকার বাসিন্দা সুভাষ পণ্ডিত ও চম্পাদেবীর কর্মসূত্রে উখড়ায় থাকেন ।
পুলিশ সূত্রে খবর,১২ দিন আগে দেড় লক্ষ টাকার বিনিময়ে সুভাষ পণ্ডিতকে নিজেদের ছোট সন্তানকে বিক্রি করে দেন বুনি বাউড়ি ও অচিন্ত্য সরকার । তারপর ওই দম্পতি ৫ বছরের ছেলেকে নিয়ে সোমবার উখড়া থেকে কাটোয়ার পলসোনা গ্রামে আসছিলেন । বিকেল নাগাদ কাটোয়া শহরের ১৪ কুঠুরি পাড়ায় এলে কোনো কারনে দম্পতির মধ্যে ঝামেলা শুরু হয় । বচসার মাঝে তারা সন্তান বিক্রির কথা ফাঁস করে ফেলেন । একথা স্থানীয়দের কানে যেতেই ফোন করে কাটোয়া থানায় খবর দেন ।
এদিকে খবর পেয়ে পুলিশ এসে দম্পতি ও তাদের সন্তানকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় । জেরায় ওই দম্পতি সন্তান বিক্রির কথা কবুল করলে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ । দম্পতির কাছ থেকে উদ্ধার হয় ৮৯ হাজার টাকা । পাশাপাশি সুভাষ পণ্ডিত এবং তার স্ত্রী চম্পাদেবীর নাম সামনে এলে পশ্চিম বর্ধমান জেলার উখড়া থেকে তাদের গ্রেফতার করে আনে কাটোয়া থানার পুলিশ । সেখান থেকেই পুলিশ উদ্ধার করে ৬ মাসের ওই শিশুটিকেও ।
চম্পাদেবী বলেন,’আমাদের প্রায় ২৭ বছর বিয়ে হয়েছে, কিন্তু কোনো সন্তান হয়নি । বুনি বাউড়ি ও অচিন্ত্য সরকার তাদের ৬ মাসের শিশুটিকে কোথাও ফেলে দিয়ে আসবে বলে পরিকল্পনা করেছিল । তখন আমরা তাদের শিশুটি আমাদের দিতে বলি । আমরা শিশুটিকে লালন পালন করতাম এবং আমাদের সন্তানের অভাবও দূর হত । ওরা এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায় ।’ তবে কোনো আর্থিক লেনদেন হয়নি বলে তিনি দাবি করেন । যদিও টাকার বিনিময়ে সন্তানকে বিক্রির কথা স্বীকার করেছেন বুনি বাউড়ি । তিনি বলেন,’আমাদের বসবাসের কোনো ঘর নেই । তাই একটা ঘর তৈরি করার জন্য আমাদের ছোট সন্তানকে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলাম ।’।