এইদিন ওয়েবডেস্ক,ওয়েবডেস্ক,২৪ মে : ২০২২ সালের ম্যাঙ্গালোর(Mangalore)জানুয়ারিতে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এনআইএ) হাতে গ্রেফতার হয়েছিল কুখ্যাত সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএসআইএস) রিক্রুটমেন্ট উইং-এর সদস্য মরিয়ম (Maryam) । মরিয়ম জন্ম সূত্রে একজন হিন্দু । তার বাবা ইদিনবাবা মারলা একসময় কংগ্রেসের বিধায়ক ছিলেন । মরিয়মের পূর্ব নাম ছিল দীপ্তি মারলা(Deepthi Marla)। কর্ণাটকের কোডাগু এলাকার বাসিন্দা বিএম বাশারের ছেলে আনাস আবদুল রহমানকে (Anas Abdul Rahman) বিয়ে করার পর নিজের নাম মরিয়ম রাখে দীপ্তি । ক্রমে স্বামী এবং দেবর আম্মার আবদুল রহমানের(Ammar Abdul Rahman) পাল্লায় পড়ে ইসলামিক স্টেটের রিক্রুটমেন্ট উইং-এর একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠেছিল মরিয়ম । তার কাজ ছিল যুবকদের হনি ট্রাপে ফাঁসিয়ে কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেটে নিয়োগ করা । আইএসআইএস-এর সঙ্গে যোগসূত্র থাকার পাশাপাশি দীপ্তি মারলা ওরফে মরিয়মের সঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল বলে জানতে পারে এনআইএ । তদন্তকারী দল আরও জানতে পারে যে কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে এবং আইএসকে সমর্থন করতে দীপ্তি মারলা এবং মহম্মদ আমিন সিরিয়ায় আইএসআইএস খিলাফত শেষ হওয়ার পরে ২০২০ সালের জানুয়ারি এবং মার্চে হিজরার (ধর্মীয় অভিবাসন) অধীনে কাশ্মীর গিয়েছিল । একই উদ্দেশ্যে তারা ইরাক সফরও করেছিল ।
দীপ্তি মারলা ওরফে মরিয়মের গ্রেফতারির পর একটি ইংরাজি কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে তার সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার কথা ঘোষণা করেন তার বাবা-মা । ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারী একটি বিজ্ঞাপনে ঘোষণা করা হয়,
‘এমএস দীপ্তি মারলাকে যে আমাদের জৈবিক কন্যা, এনআইএ তাকে ২০২২ সালেত ৩ জানুয়ারী গ্রেফতার করেছে । ওই দিন থেকে এমএস দীপ্তি মার্লার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
তিনি যা করেছেন তা সম্পূর্ণরূপে তার পছন্দ এবং
অতীতে তার বিয়ের পর থেকে বর্তমান এবং ভবিষ্যতের তার কর্মকান্ডের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই । তার সমস্ত কার্যকলাপের জন্য তাকেই দায়ী থাকতে হবে এবং তার কোন কাজের জন্য আমাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই, তা সে বর্তমান বা ভবিষ্যতই হোক। আমাদের সম্পত্তিতে তার, তার স্বামী এবং তার সন্তানদের কোন অধিকার নেই ।’ সব শেষে ঠিকানা কুশলনগর সহ মুন্ডাদিগুট্টু সদানন্দ মারিয়া, বি.কে. ধনলক্ষ্মী মারলা এবং মুন্ডাদিগুট্টু দর্শন মারলা এই তিনটি নাম লেখা আছে ওই বিজ্ঞাপনে ।
এদিকে এনআইএ-এর জেরায় দীপ্তি মারলা ওরফে মরিয়ম কবুল করে যে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম এবং টেলিগ্রামে তার ১৫-টির বেশি তার ফেক অ্যাকাউন্ট ছিল । অধিকাংশ হিন্দু নামে অ্যাকাউন্ট খুলেছিল সে । ভিডিও কলে সেক্স চ্যাট করে হিন্দু যুবকদের প্রেমের জালে ফাঁসাতো মরিয়ম । ওই যুবকদের সে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিত । তারপর তাদের জোর করে ইসলামে ধর্মান্তরিত করে আইএসআইএস-এ নিয়োগের চেষ্টা করত । কর্ণাটক জুড়ে ১০ জনেরও বেশি হিন্দু যুবককে ইসলামে ধর্মান্তরিত করার কথা কবুল করেছে মরিয়ম । শুধু তাইই নয়,স্বামী আনাসের নির্দেশে সে ক্রনিকল ফাউন্ডেশন ও আইএসআইএস- এর একটি ইনস্টাগ্রাম পেজও পরিচালনা করত বলে জেরায় জানতে পেরেছে এনআইএ ।
তদন্তকারী সংস্থা জানতে পারে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে(ইউএই)পড়ার সময় ইসলামের প্রতি ‘আকৃষ্ট’ হয়েছিল দীপ্তি মারলা । ম্যাঙ্গালোরের দেরলাকাতে একটি কলেজে বিডিএস পড়ার সময় সে আনাস আবদুল রহমানের প্রেমে পড়ে । এরপর দীপ্তি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নিজের নাম রাখেন মরিয়ম । বিয়ে করেন আনাসকে । ২০২১ সালের আগস্টে মরিয়মের শ্বশুরবাড়িতে অভিযান চালায় এনআইএ । সেই সময় কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএসআইএস) সঙ্গে যোগসূত্র থাকায় গ্রেফতার করা হয় আনাস আবদুল রেহমানের খুড়তুতো ভাই আম্মারকে । তখন মরিয়মকে জেরা করা হলেও তাকে গ্রেফতার করা হয়নি । দীর্ঘ প্রায় ৫ মাস ধরে মরিয়মের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে এনআইএ । অবশেষে সুনির্দিষ্ট প্রমান পাওয়ার পরেই ২০২২ সালের জানুয়ারিতে গ্রেফতার করা হয় দীপ্তি মারলা ওরফে মরিয়মকে ।
এনআইএ জানিয়েছে যে কেরালার চার থেকে পাঁচ যুবক মরিয়মের হনিট্রাপে ফেঁসে সিরিয়ায় গিয়েছিল। গ্রেপ্তারের পাঁচ মাস আগে বেঙ্গালুরুতে গ্রেপ্তার হওয়া মাদেশ পেরুমল মরিয়মের ফাঁদে পড়ে। ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন । মাদেশের নাম রাখা হয় আবদুল। প্রেমের জালে ফেঁসে সে দেশে বোমা বিস্ফোরণ ঘটাতে মরিয়মকে প্রতিশ্রুতি পর্যন্ত দিয়েছিল । হিন্দুর পাশাপাশি মুসলিম যুবকদেরও হনি ট্রাপে ফাঁসিয়ে আইএসআইএস-এ যোগ দিতে প্রলুব্ধ করত মরিয়ম ।
এনআইএ তদন্তে জানতে পারে, ভারতে আইএসআইএস-এর জাল বিস্তারে মূল পরিকল্পনাকারী ছিল দীপ্তি মারলা ওরফে মরিয়ম এবং মোহাম্মদ আমিন নামে আর এক সন্ত্রাসবাদী । মোহাম্মদ আমিন ওরফে আবু ইয়াহিয়া ছাড়াও তার দুই সহযোগী ডঃ রাহেশ রশিদ এবং মুশাব আনোয়ারকে ওই চক্রে যুক্ত থাকায় ২০২১ সালেই গ্রেফতার করে এনআইএ । সম্প্রতি ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ হিন্দি চলচিত্র নিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই ফের একবার লাইম লাইটে চলে এসেছে কর্ণাটকের কংগ্রেস প্রাক্তন বিধায়কের মেয়ে দীপ্তি মারলার মরিয়ম হয়ে ওঠার কাহিনী ।।