এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,২১ নভেম্বর : ভারত বিরোধীদের প্রতি কংগ্রেসের প্রেমের ঘটনা নতুন কিছু নয় । আমেরিকায় বসবাসকারী ভারত বিরোধীদের সঙ্গে কংগ্রেসের “যুবরাজ” রাহুল গান্ধীকে আকছার দেখতে পাওয়া যায় । এবারে আর এক ভারত বিরোধীর হাতে শান্তি, নিরস্ত্রীকরণ ও উন্নয়নের জন্য ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কার তুলে দিল কংগ্রেস । আর তিনি হলেন চিলির প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মিশেল ব্যাচেলেট । ব্যাচেলেটর হাতে পুরষ্কারটি তুলে দেন সোনিয়া গান্ধী । এদিকে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) এবং জম্মু ও কাশ্মীর ইস্যুতে ব্যাচেলেটের ভারত বিরোধী মন্তব্যের কথা তুলে ধরে কংগ্রেসের সমালোচনায় মুখর হয়েছে বিজেপি ।
প্রসঙ্গত,২০১৯ সালে, ৩৭০ ধারা বাতিলের পর জম্মু ও কাশ্মীরে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল, সেই সময় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী মিশেল ব্যাচেলেট “ভারত সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের কাশ্মীরিদের উপর মানবাধিকার লঙ্ঘন” নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। পরের বছর ব্যাচেলেট একটি আবেদন দাখিল করেন, যেখানে তিনি সিএএ-র বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন একটি মামলায় অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে হস্তক্ষেপ করার আবেদন করেন। কেন্দ্র পাল্টা আক্রমণ করে বলেছিল, “ভারতের সার্বভৌমত্ব সম্পর্কিত বিষয়গুলিতে কোনও বিদেশী পক্ষের নাগ গলানোর কোনও অধিকার নেই”।
বিজেপি নেতা অমিত মালব্য বৃহস্পতিবার ‘এক্স’-এ পোস্ট করেছেন যে “মিশেল ব্যাচেলেটকে ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার প্রদানের কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত যতটা প্রকাশ্য, ততটাই ভবিষ্যদ্বাণীযোগ্য”৷ তিনি অভিযোগ করেছেন যে তিনি তার মেয়াদ “একটি স্পষ্টতই ভারতবিরোধী, ইসলামপন্থী আখ্যানের উপর ভিত্তি করে তৈরি করেছিলেন যা বিশ্বব্যাপী বাম- উদারনৈতিক বাস্তুতন্ত্রের সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ। স্বাভাবিকভাবেই, কংগ্রেস তাকে সম্মানিত করতে ছুটে গেছে ।”
উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত “ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কার”টি ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল ট্রাস্ট দ্বারা পরিচালিত হয়, যার সভাপতিত্ব করেন সোনিয়া গান্ধী। রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র সহ গান্ধী পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও এই ট্রাস্টের সদস্য।
ব্যাচেলেট এই পুরষ্কারের ৩৭তম প্রাপক। চিলির সমাজতান্ত্রিক দলের সদস্য ব্যাচেলেটকে পুরষ্কারের প্রশংসাপত্রে কঠিন পরিস্থিতিতে শান্তি, লিঙ্গ সমতা, মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের জন্য অবিচলভাবে প্রচেষ্টা এবং চিলির সাথে ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার অবদানের প্রশংসা করা হয়েছে।
১৯৮৬ সালে প্রথম এই পুরষ্কারটি পান পার্লামেন্টারিয়ানস ফর গ্লোবাল অ্যাকশন, যা বিভিন্ন দেশের আইন প্রণেতাদের একটি আন্তর্জাতিক দল, “পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের দৃঢ় সমর্থন”-এর স্বীকৃতিস্বরূপ। ১৯৮৬ সালে, এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মিখাইল গর্বাচেভকে “পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত একটি অহিংস বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গি”-এর জন্য প্রদান করা হয়। বছরের পর বছর ধরে, অনেক প্রাপক এমন নেতা হয়েছেন যাদের মধ্য-বামপন্থী বিভাগে রাখা যেতে পারে, কিন্তু সকলকেই নয়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৭ সালে, এটি নিরস্ত্রীকরণ এবং শান্তির ক্ষেত্রে তার কাজের জন্য প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টারকে দেওয়া হয়েছিল, যেখানে ২০১৩ সালে, প্রাক্তন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল “আর্থিক সংকটের সময় ইউরোপ এবং বিশ্বে অনুকরণীয় নেতৃত্ব, জার্মান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রচারের জন্য” এটি দিয়েছিল সোনিয়া-রাহুল ।
২০০৭ সালে, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনকে “বিশ্বজুড়ে এবং ভারতে অগ্রণী এবং অনুকরণীয় জনহিতকর কাজের” জন্য পুরস্কৃত করে ভারতের ওই বিতর্কিত পরিবারটি ।পরিহাসের বিষয় হলো, বাংলাদেশের বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং শেখ হাসিনা, যিনি গত বছর প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদচ্যুত হয়েছিলেন এবং ইউনূসের উত্থানের কারণ হয়েছিলেন, উভয়ই এই পুরষ্কারের অতীত প্রাপকদের মধ্যে রয়েছেন। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে অবদানের জন্য ১৯৯৮ সালে ইউনূস এই পুরষ্কার পেয়েছিলেন। ঠিক তার এগারো বছর পর, ২০০৯ সালে, “গণতন্ত্র ও বহুত্ববাদের প্রচার এবং দারিদ্র্য বিমোচনে তার দৃঢ় প্রচেষ্টার” জন্য হাসিনাকে পুরষ্কার দেওয়া হয়।
মধ্য-বামপন্থী নেতাদের মধ্যে রয়েছেন নরওয়ের লেবার পার্টির সদস্য গ্রো হারলেম ব্রান্ডটল্যান্ড, যিনি তিনবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, নামিবিয়ার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এবং বর্ণবাদ বিরোধী কর্মী স্যাম নুজোমা এবং ২০১০ সালে ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি লুলা দা সিলভা।অন্যদিকে, চেক প্রজাতন্ত্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ভ্যাক্লাভ হ্যাভেল, যিনি পূর্ববর্তী চেকোস্লোভাকিয়ায় কমিউনিস্ট ব্যবস্থার পতনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, তাকে ১৯৯৩ সালে এই পুরষ্কার দেওয়া হয়েছিল।
২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (IAEA) প্রাক্তন মহাপরিচালক, নোবেল শান্তি বিজয়ী মোহাম্মদ এল বারাদেই এই পুরষ্কার পেয়েছিলেন। এই সমস্ত ব্যক্তি ছাড়াও, যেসব প্রতিষ্ঠান এই পুরষ্কার পেয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে ১৯৯৬ সালে ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স, ২০১৪ সালে ইসরো, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনারের কার্যালয়, বিজ্ঞান ও পরিবেশ কেন্দ্র ।
প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন, প্রাক্তন আরবিআই গভর্নর রঘুরাম রাজন, প্রাক্তন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য সৈয়দা হামিদ, প্রাক্তন প্রধান তথ্য কমিশনার ওয়াজাহাত হাবিবুল্লাহ, প্রাক্তন সাংবাদিক সুমন দুবে, সমাজকর্মী অরুণা রায় এবং প্রাক্তন প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কৌশিক বসু এই পুরস্কারের জুরি সদস্য। জুরি বোর্ডের মধ্যেও রয়েছে বামপন্থী ও বিজেপি বিরোধিতার ছাপ ।
জুরি বোর্ডের কার্যপ্রণালীতে বলা হয়েছে যে, এই পুরস্কারের সাথে ১ কোটি টাকা নগদ অর্থ এবং ইন্দিরা গান্ধীর স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে ব্যবহৃত হেমাটাইট জ্যাসপার পাথর দিয়ে তৈরি একটি ট্রফি রয়েছে। এই পুরষ্কারটি বিশ্ব শান্তি, নিরস্ত্রীকরণ, জাতিগত সমতা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রচারের জন্য দেওয়া হয়। কিন্তু, আদপে ভারত বিরোধী বলে পরিচিত ব্যক্তিত্বদের সম্মান জানাতে কংগ্রেস এই পুরষ্কারটি ব্যবহার করে বলে অভিযোগ । যেকারণে কংগ্রেসের চালিকাশক্তি “গান্ধী পরিবারের” মানসিকতা নিয়ে বছরের পর বছর ধরে প্রশ্ন ওঠে।।

