বলা হয় যে ভারত বিভাজন ছিল ব্রিটিশদের একটা সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র । আর এই ষড়যন্ত্রের অংশভাগী হওয়ার জন্য অনেকাংশে দায়ি করা হয় জহরলাল নেহেরু ও মহম্মদ আলি জিন্নাহকে । সেখানে কথিত “অহিংসার পূজারি” মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী কার্যত “অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র”-এর ভূমিকা পালন করেন । কারন নেহেরু ও জিন্নাহের প্রতি অপার স্নেহ ছিল গান্ধীর । আর সেই স্নেহের কারনে দুই প্রিয়পাত্রকে ক্ষমতায় বসাতে ভারতমাতার বিভাজনের সময় তিনি নীরবতা পালন করেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে । কথায় আছে,”মৌনং সম্মতি লক্ষনম্” । যে গান্ধী মুসলিমদের অধিকার রক্ষায় বারবার আমৃত্যু অনশনের হুমকি দিতেন,সেই গান্ধীরই ভারত বিভাজনের সময় অনশনের কথা মাথায় আসেনি বা তিনি অনশনে বসার প্রয়োজন অনুভব করেনি । আর এই বিভাজনে একচেটিয়া ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছিল অবিভক্ত ভারতের হিন্দুদের । সেই অপূরণীয় ক্ষতির একটা পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন প্রফেসর সুধাংশু নামে একজন বিশ্লেষক । সোশাল মিডিয়া প্লাটফর্ম এক্স-এ এই সংক্রান্ত তার একটি বিশ্লেষণাত্মক পোস্টের অনবাদ নিচে তুলে ধরা হল : যার শিরোনাম হল: কংগ্রেসের – “মুসলমানদের প্রতি ভালোবাসা এবং দেশভাগ”৷
তিনি লিখেছেন, যখন কোন ধর্মান্ধ ব্যক্তি বলে যে ভারত কারো বাবার নয়, তখন “বিভাজনের ভয়াবহতা” নিয়ে আলোচনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। দেশভাগের সময় ভারতে প্রায় ৩০ কোটি হিন্দু এবং প্রায় ৫ কোটি মুসলিম ছিল। সেই সময় ভারতের আয়তন ছিল ৪৩,১৯,২৬৩ বর্গকিলোমিটার। কারণ মুসলমানরা ধর্মের নামে দেশ ভাগ করেছিল। অতএব, সেই সময়ের জনসংখ্যা অনুযায়ী, তাদের ৬,৪০,৮৪০ বর্গকিলোমিটার জমি পাওয়া উচিত ছিল, কিন্তু তাদের ১০,৩২,০০০ বর্গকিলোমিটার জমি দেওয়া হয়েছিল । মুসলিমদের প্রতি কংগ্রেসের ভালোবাসা এবং হিন্দুদের প্রতি ঘৃণার কারণে, তাদের প্রাপ্য জমির প্রায় দ্বিগুণ জমি দেওয়া হয়েছিল।
তার মানে হিন্দুদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে।
হিন্দুদের বিরুদ্ধে আরেকটি প্রতারণা করা হয়েছিল যে – তাদের অংশের প্রায় দ্বিগুণ জমি পাওয়ার পরেও – প্রায় ৩.৫ কোটি মুসলমান পাকিস্তানে যায়নি। ১৯৫১ সালের অভিবাসী আদমশুমারি অনুসারে, দেশভাগের পরপরই ৭২,২৬,০০০ মুসলিম ভারত ছেড়ে পাকিস্তানে চলে যান এবং ৭২,৪৯,০০০ হিন্দু ও শিখ পাকিস্তান থেকে ভারতে আসেন। এটা ঠিক করে বুঝুন – ভারতের ৫ কোটি মুসলমানের মধ্যে মাত্র ৭২,২৬,০০০ জন পাকিস্তানে গিয়েছিল এবং সেই সময় – প্রায় এক কোটি মুসলমান পাকিস্তানেই বাস করত, যার অর্থ – প্রায় ৩.৫ কোটি মুসলমান ভারতেই রয়ে গিয়েছিল।
আমার অঙ্কটা দুর্বল – এখন তুমি হিসাব করো – যখন ৫ কোটি মানুষ ৬,৪০,৮৪০ বর্গকিলোমিটার জমি পেয়েছে, তখন “২ অথবা ১.৭৫ কোটি” মানুষের ভাগে কত জমি আসা উচিত? “জিন্নাহ, নেহেরু এবং কংগ্রেস” ক্ষমতা অর্জনের জন্য যে হিংসাত্মক খেলা চালিয়েছিল, তাতে ২ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল এবং ৩০ লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছিল, ১ লক্ষ হিন্দু বোন ও কন্যাকে হিন্দুদের কাছ থেকে মৌলবাদীরা কেড়ে নিয়েছিল।
আজ দেশের মাত্র ১% মানুষ দেশের “বিভাজনের ভয়াবহতা” সম্পর্কে জানে । হরিয়ানা এবং পাঞ্জাবের মানুষ ছাড়া দেশের অন্যান্য অংশের মানুষ জানেন না যে সেই সময় কী ঘটেছিল।দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তরুণদের কথা আর কি বলব – যাদের বয়স ৭০ বছরের কম তাদের কোন জ্ঞানই নেই। এটা ভালো যে এই ইন্টারনেট যুগে, তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে যা আজ সবার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে, এখন প্রতিটি কৌতূহলী ব্যক্তি সত্য জানতে পারছেন।।