এইদিন ওয়েবডেস্ক,চন্ডীগড়,১৫ সেপ্টেম্বর : চলতি বছরের ৩১ জুলাই হরিয়ানার মেওয়াতে শ্রাবণ সোমবার ব্রিজমণ্ডল জলাভিষেক যাত্রায় মুসলিম সম্প্রদায়ের হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে হরিয়ানার নুহ(Nuh)এবং প্রতিবেশী গুরুগ্রামে (Gurugram) সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনায় কংগ্রেস বিধায়ক মাম্মান খানকে(Mamman Khan) বৃহস্পতিবার রাতে রাজস্থানের জয়পুর থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে হরিয়ানার পুলিশ । ওই সংঘর্ষে ২ জন হোমগার্ড এবং একজন ইমাম সহ মোট ৬ জন নিহত হয়েছিল । গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফিরোজপুরের ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ সুপার ঝিরখা সতীশ কুমার, যিনি নুহ সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনার তদন্তকারী বিশেষ তদন্তকারী দলের (SIT) প্রধান । আজ শুক্রবার ধৃত বিধায়ক মাম্মান খানকে নূহ জেলা আদালতে তোলা হবে । তার আগে আদালতের বাইরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে ।
ফিরোজপুর ঝিরকার কংগ্রেসের বিধায়ক মাম্মান খান । নুহ সাম্প্রদায়িক হিংসায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে । পুলিশের এফআইআর-এ নামও রয়েছে তার । বৃহস্পতিবার হরিয়ানা সরকার হাইকোর্টকে বলেছে যে মাম্মান খানকে এফআইআর-এ সন্দেহভাজন হিসাবে রাখা হয়েছিল । তার বিরুদ্ধে ফোন কল এবং অন্যান্য প্রমাণও পাওয়া গেছে । যদিও নুহ হিংসার সাথে জড়িত থাকার কথা জোরালোভাবে অস্বীকার করে গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে সুরক্ষা চেয়েছিলেন মাম্মান খান । তিনি দাবি করেন যে যেদিন হিংসা শুরু হয়েছিল সেদিন তিনি নূহতে ছিলেন না, বরং ২৬ জুলাই থেকে পয়লা আগস্ট পর্যন্ত তাঁর গুরুগ্রামের বাড়িতে ছিলেন। সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময়, মাম্মান খানের আইনী পরামর্শদাতা দাবি করেছিলেন যে খান সম্প্রতি এফআইআর-এ তার নাম থাকার বিষয়ে সচেতন হয়েছিলেন। জবাবে, আদালত বলেছে যে মাম্মান খান “আইন অনুযায়ী স্বাধীনতা রক্ষার জন্য” উপযুক্ত আইনি প্রতিকার করতে পারেন ।
উল্লেখ্য,গ্রেপ্তারের আগে, মাম্মান খানকে নূহ পুলিশ তদন্তে সহযোগিতা করার জন্য দুবার তলব করেছিল । কিন্তু ভাইরাল জ্বরের আক্রান্ত বলে দাবি করে দু’বারই তিনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ এড়িয়ে গিয়েছিলেন । পাশাপাশি তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া স্থগিতের দাবি করেছিলেন মাম্মান খান । মাম্মনের এই আবেদনের শুনানি হয় ১৪ সেপ্টেম্বর । এ সময় তার বিরুদ্ধে আদালতে প্রমাণ পেশ করে এসআইটি। এ কারণে তাকে গ্রেপ্তারে স্থগিতাদেশ দেয়নি আদালত।
হরিয়ানার অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল দীপক সবরওয়াল এর আগে পাঞ্জাব এবং হরিয়ানা হাইকোর্টকে বলেছিলেন যে উপলব্ধ প্রমাণগুলির পুঙ্খানুপুঙ্খ মূল্যায়নের পরে ৪ সেপ্টেম্বর মাম্মন খানকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। তিনি জোরের সঙ্গে দাবি করেছিলেন যে কংগ্রেস বিধায়কের বিরুদ্ধে যথেষ্ট অপরাধমূলক প্রমাণ রয়েছে ।
এর আগে হরিয়ানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল ভিজও বলেছেন যে নুহ হিংসার পিছনে মাম্মন খান জড়িত ছিলেন । তিনি বলেছিলেন যে নুহের হিংসায় গ্রেফতারকৃত অভিযুক্তরা জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে যে তারা কংগ্রেস বিধায়ক মামন খানের সাথে যোগাযোগ করেছিল । তিনি বলেছিলেন যে হিংসার আগে মাম্মন খান ২৯,৩০ এবং ৩১ জুলাই নুহে গিয়েছিলেন। তিনি দাঙ্গা-পীড়িত এলাকার মানুষের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতেন বলে দাবি করেন হরিয়ানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ।
উল্লেখ্য,মেওয়াতের নলহাদ মন্দিরকে তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন । পূণ্যার্থীদের লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি ইঁটপাটকেল ও গুলি ছোড়ে দাঙ্গাকারীরা । শতাধিক গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় । আশপাশের পাহাড়ের আড়াল থেকে নলহাদ মন্দির লক্ষ্য করে কয়েক ঘন্টা ধরে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় কট্টরপন্থীদের দল । শিশু, মহিলাসহ দেড় হাজারের অধিক পূণ্যার্থী ঘন্টার পর ঘন্টা মন্দিরের মধ্যে আটকে পড়ে । প্রচুর অল্প বয়সী মহিলা পূণ্যার্থী ধর্ষণের শিকারও হয় বলে অভিযোগ । অভিযোগ,স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন পূণ্যার্থীদের নির্বিচারে হত্যা করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালিয়েছিল ।।