প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,৩১ জানুয়ারি : মুখ্যমন্ত্রীর সমস্ত নিষেধাজ্ঞাকে অমান্যকারী দুই তৃণমূল নেতার ‘দৌরাত্ম্যে’ ও ’সন্ত্রাস’ মাত্রা ছাড়িয়েছে। আর তা নিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের বেরুগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মানুষজন সহ দলেরই বিভিন্ন পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধি ও কর্মাধ্যক্ষরা। অভিযোগের প্রতিলিপি রাজ্য প্রশাসনের বিভিন্ন কর্তাদের কাছেও পাঠিয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ প্রদীপ পাল এবং বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য আব্দুস সালাম সহ আরো অন্য সদস্যরা।
তাঁদের অভিযোগ,ওই দুই নেতা বালি মাফিয়াদের সঙ্গে আঁতাত করে দামোদর থেকে বালি লুঠ করছে বলেও অভিযোগ গ্রামবাীদের।তা ছাড়া গাছ কাটা,আবাস যোজনার উপভোক্তাদের থেকে কাটমানি নেওয়া,স্কুলের জমি আত্মসাৎ করা প্রভৃতি নানা অভিযোগও তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের আগেই এই দুই তৃণমূল নেতাই এখন দলের বিড়ম্বনার কারণ হয়ে উঠেছে।
রেরুগ্রাম অঞ্চলের বাসিন্দারা যে দুই নেতার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁষছেন তাঁদের একজন হলেন বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের স্বামী ফিরোজ শেখ । অপরজন হলেন একই পঞ্চায়েতের সদস্য তথা বেরুগ্রাম অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি সাহাবুদ্দিন শেখ ওরফে দানি । এই দুই নেতা মঙ্গলবার দাবি করেছেন, ‘সবটাই চক্রান্ত। অভিযোগতো করা হয়েছে বেশ কয়েকমাস আগে।অভিযোগের যদি সত্যতা থাকতো তাহলে প্রশাসনতো তো তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিত। কিন্তু কই ,তা তো হয়নি ।’এই দুই নেতার অনুগামীা বলেন,সম্প্রতি ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচনে যাঁরা দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে ভোটাভুটিতে গিয়েছিল তাঁরাই এই সব অভিযোগ করছেন ।
মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো পাঁচ পাতার চিঠিতে মোট
১২ জনের স্বাক্ষর রয়েছে ।ওই চিঠিতে একাধিক অনুচ্ছেদে দুই তৃণমূল নেতা ফিরোজ ও দানির নামে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে লেখা হয়েছে, মেহেমুদ খাঁন ব্লক তৃণমূলের সভাপতি হবার পর থেকেই এই দুই তৃণমূল নেতার ‘দৌরাত্ম্য’ চরমে পৌছেচে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দুই নেতার সন্ত্রাস। অভিযোগ করা হয়েছে স্থানীয় চক্ষণজাদি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে থাকা প্রকাণ্ড সব গাছ ২০১৯ সালে কেটে দিয়ে বিক্রি করে দিয়ে এই দুই নেতা টাকা আত্মসাৎ করেছে। এছাড়াও পঞ্চায়েত এলাকারর রাস্তার দু’ধারে থাকা বহু গাছও ২০২০-২১ সাল দরপত্র ছাড়া বিক্রি দিয়েছে এই দুই নেতা।ওই টাকার কানাকড়িও পঞ্চায়েতে জমা পড়েনি। চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে গত পাঁচ-সাত বছরে চক্ষণজাদি গ্রামে যেসব গরিব মানুষ সরকারী আবাস যোজনার বাড়ি পেয়েছেন তাঁদের অনেকের কাছ থেকে ১০-২০ হাজার টাকা কাটমানি নিয়েছেন এই দুই তৃণমূল নেতা ।তারমধ্যে শম্ভুপুর গ্রামের কয়েকজন উপভোক্তাকে টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছে। শুধু আবাস যোজনার উপভোক্তাদের কাছ থেকেই নয়,বার্ধক্য ও বিধবা ভাতা প্রাপকদের কাছ থেকেও ওই নেতারা কাটমানি নিয়েছেন।এমনকি চক্ষণজাদি হাই স্কুলের জমিও এইদুই নেতা নেতা আত্মসাৎ করতে ছাড়েনি । মুখ্যমন্ত্রীকে অভিযোগে জানানো হয়েছে।
‘বালি-মাফিয়াদের’ সঙ্গে জোট গড়ে এই দুই নেতা বেড়ুগ্রাম পঞ্চায়েতের শম্ভুপুর, চক্ষণজাদি, জামুদহ,হৈবৎপুর, চব্বলপুর মৌজায় কি ভাবে দামোদরের বাঁধের ক্ষতি করে বালি ‘লুট’ করছে । এ সব করার জন্যে ওই দুই তৃণমূল নেতা ফিরোজ ও দানি সিপিএমের কায়দায় ‘দুষ্কৃতী-বাহিনী’ গড়ে তুলেছে। এলাকারর কেউ এইসব অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করলেই তাদের উপর ফিরোজ,দানি ও তাঁদের দলবল চরম অত্যাচার ও সন্ত্রাস চালায় । জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ ও তৃণমূলের ব্লক কমিটির নেতা প্রদীপ পাল বলেন, “ফিরোজ ও দানির অত্যাচার, জুলুমবাজি আর তোলাবাজির জেরে বেরুগ্রাম অঞ্চলের মানুষ অতিষ্ঠ।এরজন্য তাঁরা গোটা তৃণমূল পার্টিকে বিষোদাগার করছেন। তৃণমূলের থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন। তাই আমরা দুই নেতার কুকীর্তির সবিস্তার লিখে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নালিশ জানিয়েছি। আমরা চাই,দলীয় ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে যাঁরা নিরীহ মানুষজনের উপর সন্ত্রাস চালাচ্ছে, লুঠতরাজ চালাচ্ছে তাঁদের বিরুদ্ধে এবং যাঁরা এইসব কাজে মদত যোগাচ্ছে তাঁদের বিরুদ্ধেও দল কড়া ব্যবস্থা নিক“। আর বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য আব্দুস সালাম দাবি করেন,বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন মৌজা এলাকায় যে ভাবে বেআইনি পথে বালি তোলা হচ্ছে,তাতে আমরা আতঙ্কিত।অবৈজ্ঞানিক ভাবে দামোদর থেকে বালি তোলার জন্য নদি বাঁধও বিপন্ন হতে বসেছে। এইসব দেখেই আমরা প্রশাসনের নানা মহলে অভিযোগ করা করেছেন“।যদিও জামালপুর ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকদের দাবি, বেআইনি বালি খাদান চলার অভিযোগ তারা নাকি পান নি। তবে মঙ্গলবার জামালপুরে অভিযান জোরদার করেছে ভূমি দফতর ও পুলিশ ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগামী ২ ফেব্রুয়ারি
বর্ধমান সফরে আসছেন। তার প্রাক্কালে দলের দুই নেতার বিরুদ্ধে এমনসব বিস্ফোরক অভিযোগ প্রকাশ্যে আসায় যঠেষ্টই বিড়ম্বনায় পড়ে গিয়েছেন ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব।তার কারণেই অভিযুক্তদের দুই তৃণমূল নেতা দানি ও ফিরোজের পাশে দাঁড়ান নি ব্লক তৃণমূলেরর সভাপতি মেহেমুদ খান । তিনি বলেন,“প্রশাসন অভিযোগের তদন্ত করে কোনও দোষ পেলে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে দল দোষীদের পাশে থাকবে না“। এলাকার বিধায়ক অলোক মাঝির দাবি,অভিযোগের বিষয়টি প্রশাসন তদন্ত করে দেখবে। পাশাপাশি তিনি এও বলেন, “যাঁরা দল বিরোধী কাজ করেছে, তাঁরাই এ সব অভিযোগ করছে ।।