এইদিন ওয়েবডেস্ক,ইম্ফল,০৪ মে : হিন্দু মেইতেই (Hindu Meitie) সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতি (এসটি) মর্যাদা দেওয়ার দাবিকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক হিংসায় উত্তপ্ত হয়ে উঠল মণিপুর । এর প্রতিবাদে বুধবার খ্রিস্টানদের সংগঠন অখিল বুদাক্তু বিদ্যার্থী সংঘ মণিপুর (এটিএসইউএম) রাজ্যের দশটি পার্বত্য জেলায় ‘উপজাতীয় ঐক্য পদযাত্রা’ আয়োজন করেছিল । কিন্তু মণিপুরের চুড়াচাঁদপুর জেলার তোরবাং এলাকায় মিছিল চলাকালে হিন্দু মেইতেই সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় সশস্ত্র দল । ঘরবাড়ি এমনকি মন্দিরে পর্যন্ত অগ্নিসংযোগ করা হয় । উপত্যকার জেলাগুলিতে পালটা আক্রমণ শুরু হলে হিংসার আগুন ছড়িয়ে পড়ে গোটা রাজ্যজুড়ে । পুলিশ জানিয়েছে, তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তোরবাংয়ে বেশ কিছু দোকানপাট ও বাড়িঘর ভাংচুর ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে । এদিকে হিংসা ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজ্যে সেনাবাহিনী এবং আসাম রাইফেলস মোতায়েন করা হয়েছে । হিংসা কবলিত এলাকা থেকে এযাবৎ সাড়ে সাত হাজার মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে গেছে বাহিনী । কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে,পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ায় বুধবার রাতে সেনা ও আসাম রাইফেলসকে ডাকা হয়। পরে আজ বৃহস্পতিবার সকালে হিংসা কবলিত এলাকায় রাজ্য পুলিশের সহ বাহিনী মোতায়েন করা হয় । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পতাকা মিছিল করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে ।
এদিকে জনগণকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং বলেছেন, ‘আমরা মূল্যবান জীবন হারিয়েছি । বহু সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। তবে তাৎক্ষণিকভাবে মৃত্যুর বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি ।’ তিনি বলেন,’এই হিংসা সমাজে ভুল বোঝাবুঝির ফল।’ পাশাপাশি তিনি বলেছেন যে রাজ্য সরকার আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য অতিরিক্ত আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে ।কেন্দ্রীয় ও রাজ্য বাহিনীকে হিংসায় জড়িত ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । প্রতিবেশী মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরানটাঙ্গা হিংসায় বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মণীপুরের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন বলে জানা গেছে ।
প্রসঙ্গত,গত মাসে মণিপুর হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে মেইতেই সম্প্রদায়কে তফশিলি জাতির (এসটি) সংরক্ষণে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে কেন্দ্রের কাছে চার সপ্তাহের মধ্যে একটি সুপারিশ পাঠাতে নির্দেশ দেয় । তার প্রতিবাদেই খ্রিস্টান সংগঠন বুধবার পদযাত্রার আয়োজন করে । ওই পদযাত্রা থেকেই হামলা হয় মেইতেই সম্প্রদায়ের উপর ।
রিতু নামে এক ইউজার্স ঘরবাড়ি পোড়ানোর ছবি ও ভিডিও শেয়ার করে টুইট করেছেন,’খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ কুকি (Kuki)এলাকায় কট্টরপন্থী জনতা ফরেস্ট অফিস এবং হিন্দু মেইটি পরিবারের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ । স্থানীয়রা রিপোর্ট করেছে যে পুলিশ সাহায্য করার পরিবর্তে দাঁড়িয়ে দেখছে । সম্পূর্ণ আতঙ্ক, ১৯৯০ সালে কাশ্মীরের হিন্দুদের উপর যেভাবে আক্রমণ করা হয়েছিল সেইভাবেই মণিপুরের হিন্দুদের উপর আক্রমণ করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে ।’
অন্য এক ব্যবহারকারী হিংসার ছবি শেয়ার করে টুইট করেছেন,’মণিপুরে হিন্দুদের মন্দির পুড়িয়ে দিচ্ছে উগ্র খ্রিস্টানরা। আমরা হিন্দুরা প্রধানমন্ত্রী মোদিকে অনুরোধ করছি মণিপুরে সেনা মোতায়েন করতে এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে হানাদার খ্রিস্টানদের এসটি মর্যাদা কেড়ে নিতে যারা হিন্দু শিশু ও মহিলাদের হত্যা করছে ।’।