দিব্যেন্দু রায়,মঙ্গলকোট(পূর্ব বর্ধমান),২০ ডিসেম্বর : বয়সে প্রৌঢ় দুই ছেলেই মানসিক প্রতিবন্ধী । জরাজীর্ণ এক চিলতে মাটির ঘরে বসবাস । শীতবস্ত্র তো দুরের কথা, তিন জনের সংসারে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাড় করতে গিয়ে হিমসিম খেতে হয় পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট থানার তালডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা বিধবা অশীতিপর আরতি মালিককে । বিধবার অসহতার খবর কোনো ভাবে জানতে পারেন ভাতার থানার মুরাতিপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা শেখ আমির নামে এক যুবক । তারপর তিনি কয়েকজন কলেজ পড়ুয়াকে সঙ্গে নিয়ে ওই অসহায় পরিবারের সাহায্যার্থে অর্থ সংগ্রহে নেমে পড়েন । সংগৃহীত অর্থে তাঁরা শীতের পোশাক ও বেশ কিছু খাদ্যসামগ্রী কিনে মঙ্গলবার ওই দুঃস্থ পরিবারটির হাতে তুলে দিয়ে আসেন । যুবকদের এই মানবিকতায় নির্বাক বৃদ্ধার দু’চোখ বেয়ে আনন্দাশ্রু গড়িয়ে পড়ে ।
স্থানীয় গৃহবধু চায়না খাঁ বলেন,’অনেকদিন আগেই স্বামী মারা গেছেন ওই মহিলার । দুই ছেলে আছে, তারা না থাকারই সামিল । দুই ছেলেই বদ্ধ উন্মাদ ।
এই বয়সেও ওই অভাগী মহিলাকে দু’মুঠো খাবারের জন্য ছুটে বেড়াতে হচ্ছে । তিনজনের রেশন, বিধবা ভাতার টাকা আর চেয়েচিন্তে তিন জনের কোনো রকমে অন্ন সংস্থান করেন ওই বিধবা । প্রতিবেশীরা সাহায্য করে কোনো রকমে ওনার পরিবারের দিনটা চালিয়ে দেয় । কিন্তু কতদিন চলবে এভাবে ?’
জানা গেছে,আরতি মালিকের অসহায় অবস্থার খবর কোনো রকমে জানতে পারেন নতুনহাট কলেজের পড়ুয়া রাজেন্দ্র প্রসাদ রায়,রতন দাসরা । তাঁরাই মুরাতিপুরের শেখ আমিরকে বিষয়টি জানান । এরপর নতুনহাট কলেজের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে ওই পরিবারটির সাহায্যার্থে অর্থ সংগ্রহে নেমে পড়েন আমির ।
শেখ আমির বলেন,’সংগৃহীত অর্থে ওই পরিবারটির জন্য এক মাসের রেশন,এক বস্তা চাল, বৃদ্ধার দুই ছেলের জন্য দুটি জ্যাকেট, দুটি করে কম্বল, বৃদ্ধার জন্য একটি শাল,দুই ছেলের দুটি জামা, তাদের কয়েকটি হাফ প্যান্ট এবং আরো বেশ কিছু জিনিস কিনে দিয়ে এসেছি ।’ তিনি বলেন, ‘এরকম একটি অসহায় পরিবারের জন্য কিছু করতে পেরে নিজেকে ধন্য বলে মনে করছি ।’ রাজেন্দ্র-রতনরা বলেন,’ওই দুঃস্থ পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পেরে খুব ভালো লাগছে । কিন্তু এই সাহায্যে ওদের কতদিন আর চলবে ? আমাদের সামর্থ্য তো সীমিত । যদি সরকারিভাবে কিছু স্থায়ী সাহায্যের ব্যবস্থা করা হত তাহলে পরিবারটা বেঁচে যেত ।’।