এইদিন ওয়েবডেস্ক,নওগাঁ,১৪ সেপ্টেম্বর : বাংলাদেশের নওগাঁ সরকারি কলেজের ছাত্রীদের ওড়না দিয়ে বুক ঢেকে রাখা মোটেই পছন্দ নয় অধ্যক্ষ অধ্যাপক সামসুল হকের । ওড়না ছাড়াই কলেজে আসার জন্য ছাত্রীদের হোয়াটসঅ্যাপে নিয়মিত মেসেজও পাঠিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি । সেই মেসেজে অশ্লীল শব্দও প্রয়োগও করতেন সামসুল হক । অধ্যক্ষের এই প্রকার কদর্য মানসিকতায় তিতিবিরক্ত ছাত্রীরা হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়েছে । তাদের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো মেসেজগুলোর স্ক্রীন শর্ট একত্রিত করে ব্যানারের আকারে ছাপিয়ে আজ রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) কলেজের প্রধান গেটে টাঙিয়ে দিয়েছে । তার সঙ্গে ছাপানো হয়েছে অধ্যক্ষের একটা বড়সড় ছবি । সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ওই স্ক্রিনশট ও গেটে ঝুলিয়ে রাখা ব্যানার ভাইরাল হয়েছে। নওগাঁ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সামসুল হকের এহেন কুকীর্তির নমুনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব স্ক্রিনশটে ছাত্রীদের ওড়না ছাড়াসহ বিভিন্ন সাজে দেখার আবদার করতে দেখা গেছে অধ্যক্ষ সামসুল হককে।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া স্ক্রিনশটগুলোর একটিতে দেখা যায়, অধ্যক্ষ সামসুল হক তার ছাত্রীর সৌন্দর্যের প্রশংসা করছেন। প্রশংসার এক পর্যায়ে ছাত্রীকে সামসুল হক লিখেন, “সুন্দরী আরোও ছবি দাও তোমার”। উত্তরে ওই শিক্ষার্থী বলেন, “আর নেই স্যার। আমি সুন্দর না। আপনার যতটা মনে হয়”। সামসুল হক লেখেন, “আছে আছে। ওড়না ছাড়া”। উত্তরে শিক্ষার্থী বলেন, “নেই স্যার। স্যরি স্যার”। তাৎক্ষণিক সামসুল হক বলেন, “কলেজে দেখেছি তো”। উত্তরে শিক্ষার্থী বলেন, “না স্যার। স্যরি। নেই স্যার। মাফ করবেন”। এরপর সামসুল হক বলেন, “ওকে। সামনেই দেখবো। অনেক অনেক অনেক ভালো থেকো। বাই”।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বলেন, মেসেঞ্জারের ওই কথোপকথন ২ বছর আগের। ওই সময়ে বিএমসি মহিলা কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন সামসুল হক স্যার। সেখানে একাদশ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় কলেজে যাতায়াতের সময় প্রায়ই উনি (অধ্যক্ষ) আমার সঙ্গে কথা বলতেন। এভাবে একদিন আমার সঙ্গে ফেসবুকের বন্ধু তালিকায় যুক্ত হন। এরপর ফেসবুক স্টোরিতে কোনো ছবি দিলে অশ্লীল মন্তব্য করতেন। এক পর্যায়ে উনি আমার কাছে থেকে ওড়না ছাড়া ছবি চান। ওই মুহূর্তে তাকে ব্লক করে স্ক্রিনশট রেখে দেই।
এতোদিন নীরব থাকার কারণ জানতে চাইলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, বিএমসি কলেজ থেকে নওগাঁ সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে বদলি হয়ে আসেন সামসুল হক। এদিকে ২০২৪-২৫ সেশনে এখানে ভর্তি হতে হয়েছে আমাকেও। তাই শত চেষ্টা করেও ভয়ে এতোদিন নীরব ছিলাম। হঠাৎ ফেসবুকে সামসুল স্যারের সঙ্গে কয়েকজন ছাত্রীর স্ক্রিনশট ভাইরাল হতে দেখে আমিও প্রতিবাদ জানালাম। উনি (অধ্যক্ষ) অনেক ছাত্রীর সঙ্গে এমন অন্যায় করেছেন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আর এক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই এখানকার সাহিত্য সংস্কৃতির সঙ্গে আমি জড়িত। কলেজে নাচের ইভেন্টে অংশগ্রহণ করার একদিন পর প্রিন্সিপাল স্যার আমাকে ফেইসবুকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠায়। রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করার পর মাঝেমধ্যেই স্যার আমাকে মেসেজ পাঠাতেন। এরপর কোথাও দেখা হলেই উনি (অধ্যক্ষ) আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে সৌন্দর্যের প্রশংসা করতেন। তার কথাবার্তাসহ তাকানোর ধরন পুরোটাই অশ্লীল।
নওগাঁ সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাদনান সাকিব বলেন, শিক্ষকরা হচ্ছেন আমাদের পিতার সমতুল্য। সেই শিক্ষক যখন তার মেয়ের বয়সী একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে এ ধরনের কথা বলে এবং আবদার করে তখন সে আর শিক্ষক থাকতে পারে না। আমরা অবিলম্বে এই অধ্যক্ষের পদত্যাগ চাই। তার পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।।