এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১০ অক্টোবর : চলতি মাসেই রাজ্যে এসআইআর চালু হওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসতেই গতকাল নবান্নে তড়িঘড়ি সাংবাদিক সম্মেলন ডাকেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । তিনি রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সিও মনোজ আগরওয়ালের বিরুদ্ধে শুধু দুর্নীতির অভিযোগ নয়, পাশাপাশি বিজেপির ইশারায় কাজ করার অভিযোগ তুলে বলেছিলেন, “সিও বেড়ে খেলছেন” । মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এই কথাকে “গণতন্ত্রের পক্ষে বিপদজনক” বলে অবিহিত করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে আজ শুক্রবার নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হন শুভেন্দু । পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন,’বিষয়টা অত্যন্ত গুরুতর৷ গতকাল পশ্চিমবাংলার প্রশাসনিক প্রধান মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক হেডকোয়ার্টার নবান্নতে মুখ্য সচিব তথা এক্সটেনশনে থাকা আইএএস অফিসার মনোজ পন্থের উপস্থিতিতে সরাসরি নির্বাচন কমিশন এবং তার পশ্চিমবাংলার প্রতিনিধি সিও মনোজ আগরওয়ালকে আক্রমণ করেছেন । আক্রমণের প্রথম লাইন ছিল “সিও বেড়ে খেলছেন”৷ এই ভাষা গণতন্ত্রের পক্ষে বিপদজনক । এই ভাষা প্রশাসনিক প্রধানের দ্বারা সরাসরি নির্বাচন কমিশনকে হুমকি দেওয়ার নামান্তর ।’
গতকাল রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সিও মনোজ আগরওয়ালের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী । এই বিষয়ে তিনি এক্স-এ লিখেছিলেন,’পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি রাজ্যে নির্বাচন কমিশনের একজন সাংবিধানিক প্রতিনিধি, তাঁর বিরুদ্ধে যে স্পষ্ট ও দুঃসাহসিক হুমকি দিয়েছেন, তার প্রতি আমি গভীর উদ্বেগ এবং তাৎক্ষণিকতার সাথে ভারতের সম্মানিত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কোনও রাজনৈতিক সমাবেশ থেকে নয়, আজ রাজ্য সচিবালয়ে মুখ্য সচিবের উপস্থিতিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি সিইওর বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন এবং তাঁকে ভয় দেখানোর জন্য গোপন হুমকি দিয়েছেন। তাঁর কথা, “আমি আশা করি তিনি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না বা আক্রমণাত্মক আচরণ করবেন না” এবং “বিভিন্ন অভিযোগের” উল্লেখ আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পবিত্রতা বজায় রাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তাকে ব্ল্যাকমেইল এবং অবমূল্যায়ন করার প্রচেষ্টার চেয়ে কম কিছু নয়।’
তিনি আরও লিখেছেন,’এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ২০২৫ সালের ২৮শে জুলাই, বোলপুরে এক প্রশাসনিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য সরকারের কর্মচারী বুথ লেভেল অফিসারদের (বিএলও) খোলাখুলি হুমকি দিয়েছিলেন, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের সময় যদি তারা ভোটার তালিকা থেকে একটি নামও বাদ দেওয়ার সাহস করে, তাহলে তাদের “পরিণাম” ভোগ করতে হবে বলে সতর্ক করেছিলেন। তিনি তাদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে নির্বাচনের পরে তাদের উপর ইসিআইয়ের কর্তৃত্ব বন্ধ হয়ে যাবে, যার অর্থ তারা তার ক্রোধের মুখোমুখি হবেন। এই নির্লজ্জ হুমকির জন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইসিআই ব্যর্থ হওয়ায় তিনি তার আক্রমণ আরও তীব্র করতে সাহস পেয়েছেন। এখন তিনি একজন সাংবিধানিক পদের কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও একজন সাংবিধানিক কর্মকর্তাকে লক্ষ্য করে আক্রমণ চালাচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এতটাই অবনতি হয়েছে যে, বন্যাদুর্গত মানুষদের সাহায্য বিতরণ করার জন্য রাজ্য পুলিশের উপস্থিতিতে,এমনকি এসটি সম্প্রদায়ের একজন সাংসদকেও প্রকাশ্য দিবালোকে সহিংসভাবে আক্রমণ করা হয়েছে। যদি একজন নির্বাচিত প্রতিনিধির উপর এমন বর্বরতা চালানো হয়, তাহলে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারা প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়া সিইওর নিরাপত্তা নিঃসন্দেহে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।’
তিনি কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়ে লেখেন,’আমি ভারতের নির্বাচন কমিশনকে এই বিষয়টি অবিলম্বে বিবেচনা করার এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করার এবং সাংবিধানিক কর্মকর্তাদের ভয় দেখানোর বারবার প্রচেষ্টার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। অধিকন্তু, আমি অনুরোধ করছি যে সিইওকে তার অফিস এবং বাসভবনে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা প্রদান করা হোক যাতে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়, কারণ এই হুমকির ফলে সৃষ্ট স্পষ্ট এবং বর্তমান বিপদের কারণে এমন একটি রাজ্য যেখানে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে। আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থার অখণ্ডতা রক্ষা করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে দৃঢ়ভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে এবং স্পষ্ট বার্তা দিতে হবে যে কেউ, এমনকি মুখ্যমন্ত্রীও, আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’
কি বলেছিলেন মমতা ব্যানার্জি?
বৃহস্পতিবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে মমতা রাজ্যে এসআইআর লাগু করার সময় ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের উপস্থিতিতে তিনি স্পষ্টত হুমকির সুরে বলেছিলেন যে রাজ্যের ভোটার তালিকা থেকে একটা নাম বাদ গেলে অনান্য রাজ্যের মানুষ যা করতে পারেনি সেটাই করে দেখাবে এরাজ্যের মানুষ । তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে “মির্জাফর” এবং নির্বাচন কমিশনকে বিজেপির কথায় কাজ করার অভিযোগ তোলেন । এমনকি রাজ্যের নির্বাচন কমিশনারকে একজন “দুর্নীতিগ্রস্ত” বলেও অবিহিত করে মুখ্যমন্ত্রী । তিনি বলেন,এখানে যিনি রাজ্য থেকে গিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে।
সেগুলি সময় হলে বলব। আশা করি তিনি বেড়ে খেলবেন না। তিনি বড্ড বেশি অফিসারদের থ্রেট করছেন। এদিকে তিনি নিজেই দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ।’
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দু বলেন,’মনোজ আগরওয়ালের বিরদ্ধে কী তথ্য আছে তা পশ্চিমবঙ্গের জনগণ জানতে চায়, আমরা প্রধান বিরোধী দল জানতে চাই। আমরা জানতে চাই কোন কোন আধিকারিককে কীভাবে তিনি ধমকেছেন। সেই আধিকারিকের নাম প্রকাশ করুন।’
এর আগে ইআরও নিয়োগে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে “অসংখ্য অসঙ্গতি”র অভিযোগ তোলেন শুভেন্দু অধিকারী৷ গতকাল তিনি এক্স-এ এই বিষয়ে লিখেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে নির্বাচনী নিবন্ধন কর্মকর্তা (ERO) নিয়োগে অসংখ্য অসঙ্গতি দূর করার জন্য আমি ভারতের নির্বাচন কমিশনকে (ECI) অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমার নজরে এসেছে যে অনেক জেলা ম্যাজিস্ট্রেট WBCS-এর সিনিয়র নির্বাহী কর্মকর্তাদের এড়িয়ে জুনিয়র কর্মকর্তাদের ERO হিসেবে নিয়োগ করেছে, যা ECI-এর নির্দেশিকাগুলির স্পষ্ট লঙ্ঘন। ECI-এর নির্দেশিকা উপেক্ষা করে ২২৬ টিরও বেশি নিয়োগ করা হয়েছে। এই অসদাচরণ আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অখণ্ডতাকে ক্ষুণ্ন করে।
ইসিআই-এর সাম্প্রতিক আদেশে জোর দেওয়া হয়েছে যে শুধুমাত্র এসডিএম/এসডিও/আরডিও পদমর্যাদার কর্মকর্তাদেরই ইআরও হিসেবে নিয়োগ করতে হবে । আমি ইসিআই-কে দৃঢ়ভাবে অনুরোধ করছি যে তারা পশ্চিমবঙ্গে এই নির্দেশিকা কঠোরভাবে প্রয়োগ করুক, আমাদের গণতন্ত্রে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য ব্যাপক সংশোধন এবং যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করুক। আমি কিছু ইআরও-এর (লাল রঙে চিহ্নিত) বিবরণ প্রদান করছি, যারা মানদণ্ড পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে উদাহরণস্বরূপ…..।’।

