জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,আউশগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),১৪ নভেম্বর : অতীতে দেখা গেছে গুরুদেবরা ছোট ছোট গল্পের মাধ্যমে শিষ্যদের নীতিশিক্ষা দিচ্ছেন। একসময় পাঠ্যপুস্তকে গল্পের ছলে একই কাজ করা হয়েছে। এইভাবে দেওয়া শিক্ষা শিশুমনে বা জনমানসে যে ব্যাপক প্রভাব ফেলে সেটা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায়না। উৎসবের সময় এইভাবে যদি নীতিশিক্ষা দেওয়া হয় তার তাৎপর্য অন্যরকম হতে বাধ্য । এই ভাবনাকে মাথায় রেখে কালীপুজোর সময় অন্য দৃশ্য দেখা গেল পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রামের দ্বারিয়াপুরে । দর্শকদের আকর্ষণের জন্য চারদিকে যখন থিমের ছড়াছড়ি তখন ভিন্ন আঙ্গিক দর্শনার্থীদের সামনে নিয়ে এল বিবেকানন্দ ক্লাব।
সাধারণ মানুষকে মারণঘাতী ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতন করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন সর্বদাই সতর্ক রয়েছে। বাসিন্দাদের সচেতন করার জন্য নিয়মিত প্রচার চলছে। শোবার সময় মশারি ব্যবহার করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বাড়িতে বা আশেপাশে যাতে জল না জমে থাকে সেই বিষয়ে নজর রাখতে বলা হচ্ছে। কারণ ডেঙ্গুর বাহক মশার পক্ষে পরিস্থিতি খুব অনুকূল।
প্রচার সত্ত্বেও মাঝে মাঝে অঘটন ঘটে যাচ্ছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই পৃথিবী থেকে অকালে বিদায় নিতে বাধ্য হচ্ছে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে ক্লাব কর্তৃপক্ষ সমগ্র প্যাণ্ডেলটি মশারি দিয়ে ঘিরে ঠাকুর দেখতে আসা দর্শনার্থীদের ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে সদর্থক বার্তা দিতে চেয়েছেন। প্যাণ্ডেলের এই ভিন্ন ধরনের অভিনবত্ব দেখে দর্শনার্থীরা খুব খুশি। প্যাণ্ডেলকে মশারি দিয়ে ঢেকে দিয়েই এরা থেমে থাকেনি। ক্লাবের পক্ষ থেকে এলাকার প্রায় কুড়ি জন দুস্থর হাতে মশারি তুলে দেওয়া হয় এবং শোওয়ার সময় মশারি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। পুজো উপলক্ষ্যে এলাকার কচিকাচাদের জন্য একটি অঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। সফল প্রতিযোগীদের পুরস্কৃত করা হয়। এটা ছিল পুজোর বাড়তি আকর্ষণ। শিশুদের মাধ্যমে বাড়ির অভিভাবকদের মশারি খাটিয়ে শোওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
পুজোর উদ্বোধনের সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডার এবং বিশিষ্ট সমাজসেবী অরূপ সরকার, তাপস চ্যাটার্জী, দেবব্রত শ্যাম, সেখ সালেক রহমান, কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তী, শিলা মার্ডি, প্রশান্ত গোস্বামী এবং গুসকরা পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান বেলি বেগম ও চেয়ারম্যান কুশল মুখার্জ্জী সহ আরও অনেকেই। প্রত্যেকেই বিবেকানন্দ ক্লাবের এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
ক্লাব সভাপতি গিরিরাজ চ্যাটার্জী বললেন, ২০১২ সাল থেকে আমরা কালীপুজো করে আসছি। গতানুগতিক থিমের পরিবর্তে আমরা সমাজ সচেতনতামূলক ও প্রাসঙ্গিক থিমের দিকে লক্ষ্য রাখি এবং সেটার মাধ্যমে দর্শনার্থীদের একটা বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করি। অস্বীকার করার উপায় নাই, ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন যথেষ্ট সতর্ক আছে। তারপরও আমরা এই থিমটি বেছে নিয়েছি। আশাকরি এলাকার বাসিন্দারা নিজে সচেতন হবে এবং অপরকেও সচেতন করবে।।