জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরা(পূর্ব বর্ধমান),১৬ অক্টোবর : ‘Cleanliness is next to God’ হলেও আমরা পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখতে আদৌ সচেষ্ট থাকিনা। যত্রতত্র গৃহস্থালির আবর্জনা ফেলি, মলমূত্র ত্যাগ করি, নিকাশী নালাতে ফেলে দিই পলিথিনের প্যাকেট। পরিস্থিতি মশা-মাছির বৃদ্ধির পক্ষে অনুকূল হয়ে ওঠে। তখন – ‘দিনে মাছি, রাতে মশা / সব মিলিয়ে আমরা আছি খাসা।’ আমন্ত্রণ জানানো হয় ডেঙ্গুর মত মারণঘাতি রোগকে। অথচ পারিবারিক বা সামাজিক কোনো উৎসব হলে আমরা বাড়ির অভ্যন্তর ও চারপাশ পরিস্কার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। সাময়িক হলেও দুর্গাপুজোর সময় ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার হাত ধরে গোটা পরিবেশের আমূল পরিবর্তন ঘটে যায়। বিষয়টি লক্ষ্য করেন পূর্ব বর্ধমান জেলাশাসক পূর্ণেন্দু কুমার মাঝি। শারদীয় উৎসবের প্রাক্কালে তিনি ‘আগমনীর আহ্বান, পরিচ্ছন্ন পূর্ব বর্ধমান’-এর ডাক দেন।
তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে রবিবার সকাল ৮টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত পূর্ব বর্ধমান জেলার সর্বত্র এক বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হয়। Charity begins at home এর মত অভিযান শুরু হয় বিভিন্ন সরকারি দপ্তর থেকে। পেছিয়ে থাকেনি গুসকরা পুরসভা এলাকার বিভিন্ন সরকারি দপ্তর। সকাল থেকেই সাজো সাজো রব। ঝাঁটা ও ব্লিচিং পাউডার হাতে এবং কয়েকজন দলীয় কর্মী ও সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে নিজ নিজ ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যস্ত দেখা গেল চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান সহ প্রত্যেক কাউন্সিলরকে। যদিও শহরকে পরিচ্ছন্ন করার কাজে পুরসভার সাফাই কর্মীদের সঙ্গে প্রায়শই এদের দেখা যায়। একইসঙ্গে তারা এলাকাবাসীদের নিজ নিজ এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক সহ অন্যান্য কর্মীদের সংশ্লিষ্ট চত্বর পরিস্কার করতে দেখা যায়। ইতস্তত ছড়িয়ে থাকা আবর্জনাগুলো কুড়িয়ে নির্দিষ্ট পাত্রে তারা জমা রাখে। একই দৃশ্য দেখা যায় পুর এলাকার প্রতিটি প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ অন্যান্যরাও ঝাঁটা নিয়ে পরিচ্ছন্নতার কাজে হাত লাগান। কন্যাশ্রী ক্লাবের সদস্যদেরও শ্রেণিকক্ষ পরিচ্ছন্ন করতে দেখা যায়।ছুটির দিন থাকায় গুসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বহির্বিভাগ বন্ধ থাকলেও জরুরি বিভাগে মোটামুটি ভিড় ছিল। ব্যস্ততার মধ্যেও ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা পরিচ্ছন্নতার কাজে হাত লাগান এবং রুগীর সঙ্গে আসা আত্মীয়দের সংশ্লিষ্ট চত্বর পরিচ্ছন্ন রাখতে আহ্বান জানান।
ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডাঃ ঘোষ বললেন, পুরসভার সাফাই কর্মীরা নিয়মিত এই এলাকাটি পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করে। আমরা নিজেরা যদি সচেতন না হই সমস্যায় আমরাই পড়ব। সুতরাং প্রত্যেককে এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
অন্যদিকে পুরসভার চেয়ারম্যান কুশল মুখার্জ্জী বললেন,শুধু আজ নয় সাফাই কর্মীরা তো আছেই আমি ও অন্যান্য কাউন্সিলররা নিজ নিজ ওয়ার্ড পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য নিয়মিত পরিদর্শন করি। তবে শহরের নিজস্ব জনসংখ্যার চাপ এবং বিভিন্ন কাজে শহরে আগত মানুষের চাপে একটু সমস্যা হলেও আমরা যদি একটু সচেতন হই শহর কিন্তু নিজের বাড়ির মতই পরিচ্ছন্ন থাকবে। তিনি প্রত্যেককে এই বিষয়ে সচেতন হওয়ার জন্য আহ্বান জানান।।