এইদিন ওয়েবডেস্ক,নদীয়া,০৫ জুলাই : ভোরে প্রাতঃভ্রমনে বেরিয়ে বাড়ির কুল দেবতার জন্য প্রতিবেশী পরিবারের ফুল গাছ থেকে ফুল তুলেছিলেন এক মধ্যবয়সী মহিলা । আর তার সেই অপরাধের জন্য তাকে চোর অপবাদ দিয়ে কান ধরে ওঠবস করানোর অভিযোগ উঠেছে এক সিভিক ভলেন্টিয়ারের পরিবারের বিরুদ্ধে । সেই অপমানে আত্মঘাতী হলেন ওই মহিলা । চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে নদীয়া জেলার শান্তিপুর ব্লকের হরিপুর অঞ্চলের মধ্য কলোনি এলাকায় । মৃতার নাম মৃতার নাম সরস্বতী দে৷ আজ শনিবার সকালে নিজের বাড়ি থেকে ওই মহিলার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ । এদিকে এই ঘটনায় শান্তিপুর থানার পুলিশের বিরুদ্ধে উঠছে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ।
জানা গেছে,মৃতা সরস্বতী দে-এর স্বামী কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন । তাদের এক মেয়ে ও এক ছেলে । মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে । একমাত্র ছেলেকে নিয়ে সরস্বতীদেবী বাড়িতে থাকতেন । অত্যন্ত হতদরিদ্র পরিবার৷ স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে খবর, প্রতিদিন ভোরে প্রাতঃভ্রমনে যেতেন সরস্বতীদেবী ৷ সেই সময় বাড়ির কুল দেবতাদের পুজোর জন্য ফুল সংগ্রহ করে নিয়ে আসতেন । শুক্রবার ভোরেও যথারীতি তিনি প্রাতঃভ্রমণে বের হয়েছিল । সেই সময় প্রতিবেশী করাতি পরিবারের বাড়িতে লাগানো ফুল গাছের ঝুঁকে পড়া ঢাল থেকে কিছু ফুল তোলেন সরস্বতী দেবী । বিষয়টি করাতি পরিবারের মহিলাদের নজরে পড়ে গেলে তারা “চোর চোর” বলে চিৎকার করে । আতঙ্কে ছুটে পালানোর চেষ্টা করেন সরস্বতী দেবী৷ কিন্তু পরিবারের লোকজন তার পিছু ধাওয়া করে । এরপর তিনি একটি প্রতিবেশী বাড়ির শৌচাগারের মধ্যে ঢুকে পড়েন । কিন্তু সেখান থেকে তাকে টেনে বের করে হেনস্তা করা হয় বলে অভিযোগ । মৃতার মেয়ের অভিযোগ, মিলন করাতি ও অসীম করাতির পরিবারের মহিলারা তার মাকে সকলের সামনে কান ধরে ওঠবস করতে বাধ্য করে এবং হাতের আঙুল কেটে নেওয়ার হুমকি দেয় ।
জানা গেছে,শান্তিপুর থানার অধীনে সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজ করেন করাতি পরিবারের অন্যতম সদস্য মিলন করাতি । তার বিরুদ্ধেই থানায় প্রভাব খাটিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালানোর অভিযোগ তুলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা । স্থানীয় পঞ্চায়েতের বিজেপির সদস্য সদানন্দ হালদারের অভিযোগ,’নির্লজ্জ পুলিশ কোন তদন্ত না করে একটা গাড়িতে ডোমদের পাঠিয়ে লাশটা তুলে নিয়ে চলে গেছে ।’ ওই পরিবারের একজন সিভিক ভলেন্টিয়ার এর কাজ করে, সে প্রভাব খাটানোয় পুলিশ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি ।
তিনি আরও বলেন,’খুব গরিব এবং দরিদ্র পরিবার । এরা দিন আনে দিন খায় । পরিবারটার এমন অবস্থা যে স্বামী কাজে না গেলে সেদিন হাড়ি চাপে না ।’
যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সিভিক ভলান্টিয়ার মিলন করাতি । তার দাবি, ঘটনার দিন রাতে তিনি ডিউটিতে ছিলেন৷ মহিলাকে মারধর বা হেনস্থা করা হয়নি এবং এই ঘটনায় তার পরিবারের কোনো সদস্য যুক্ত নয়। মহিলাকে ফুল তোলার সময় হাতেনাতে ধরার পর প্রতিবেশীদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে তিনি দাবি করেছেন । অভিযুক্ত পরিবারের আর এক সদস্যা কাজল করাতির দাবি যে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে ।
জানা যায়,আজ শনিবার নিজের বাড়িতে সরস্বতী দেবীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের পর ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকার বাসিন্দারা ৷ পরে পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে নিয়ে যায় । মৃতার পরিবার জানিয়েছেন যে এই ঘটনায় তারা করাতি পরিবারের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর দায়েতর করবেন ।।