এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,৩০ ডিসেম্বর : বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর অমানবিক অত্যাচারের প্রতিবাদের মুখ ইসকনের সন্ন্যাসী এবং বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারী । সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে ৮ দফা দাবিতে তিনি আন্দোলন করছিলেন । বাংলাদেশের হিন্দুরা একজোট হয়ে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল । আর এতে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশের ইসলামি শাসক । তাই এই আন্দোলনকে রুখে দিতে চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীকে দেশদ্রোহিতার মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টির(বিএনপি) একজন জঙ্গির অভিযোগের ভিত্তিত তাকে গ্রেফতার করা হয় । ইসলামিক জঙ্গিরা আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণের জামিনের শুনানি পর্যন্ত হতে দিচ্ছে না । কারন বহু হিন্দু আইনজীবীকে হয় জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, নচেৎ সন্নাসীর পক্ষে সওয়াল করতে গেলে প্রানে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে । এমতবস্থায় ওই নিরীহ সন্ন্যাসীর জীবন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
এদিকে ভয়েস অফ বাংলাদেশি হিন্দাস এক্স-এ জানিয়েছে,’চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভু কারাগারে গুরুতর অসুস্থ এবং সরকারের কাছ থেকে যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। তাকে দুবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার আরোগ্যের জন্য ১ জানুয়ারি বাংলাদেশের প্রতিটি মন্দিরে প্রার্থনার আহ্বান জানানো হয়েছে।’ ওই এক্স ব্যবহারকারী ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট’-এর একটি সংবাদমাধ্যম বিজ্ঞপ্তি শেয়ার করেছে । রবিবার(২৯ ডিসেম্বর) প্রকাশিত ওই সংবাদমাধ্যম বিজ্ঞপ্তির বিষয়বস্তু হল ‘কারাবন্দী গুরুতর অসুস্থ শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী প্রভুর সুস্থতায় বিশেষ প্রার্থনার কর্মসূচি।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে,’আমরা বিভিন্ন সূত্রে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে জেনেছি যে, মিথ্যা, ভিত্তিহীন কথিত রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে অন্যায়ভাবে বন্দী বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অবিসংবাদিত নেতা শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী প্রভু গুরুতর অসুস্থ। বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের নেতৃবৃন্দ তথা সনাতনী সম্প্রদায় এবং ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানবিক চেতনা উদ্ভাসিত সকল শ্রেণির মানুষ তাঁর জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত। আমরা অবিলম্বে শ্রী চিন্ময় প্রভু ও বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় আটক নিরপরাধ সনাতনীদের নি:শর্ত কারামুক্তি এবং চিন্ময় প্রভুর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য রাষ্ট্রের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি।’
আরও লেখা হয়েছে,’এছাড়াও অন্যায়ভাবে কারাবন্দী শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী প্রভুর সুস্থতা, সারাদেশে নির্যাতিত নিপীড়িত আপামর সংখ্যালঘু এবং বাংলাদেশের সার্বিক মঙ্গল কামনায় সারাদেশের আপামর সনাতনীদের ধর্মীয় উপাসনালয়ে আগামী ১লা জানুয়ারী, ২০২৫ ইং, বুধবার বিশেষ প্রার্থনা আয়োজনের আহবান জানাচ্ছি।’
প্রসঙ্গত,চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, যিনি কৃষ্ণ দাস প্রভু নামেও পরিচিত, একজন সুপরিচিত হিন্দু নেতা এবং ইসকন (ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনসায়নেস) এর একজন সম্মানিত সন্ন্যাসী। তাকে গত ২৫ নভেম্বর, বাংলাদেশী পুলিশ ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করে । সংখ্যালঘুদের জন্য শক্তিশালী আইনি সুরক্ষার দাবিতে ঢাকা থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত রংপুর শহরে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে বিক্ষোভের পর এই গ্রেপ্তার করা হয় । হিন্দুদের উপর সাম্প্রদায়িক আক্রমণের বিরুদ্ধে তার স্পষ্টবাদী অবস্থানের জন্য তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করা হয়েছিল। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম নগরীর নিউমার্কেট মোড়ের স্বাধীনতা স্তম্ভে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র তালেবুর রহমান জি মিডিয়াকে জানিয়েছিল যে ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১২০(খ), ১২৪(ক), ১৫৩(ক), ১০৯ ও ৩৪ ধারায় মামলাটি দায়ের হয়েছে।তবে সুনির্দিষ্টভাবে কী অভিযোগ আনা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
চিন্ময় কৃষ্ণকে গ্রেফতারের পর জামিন আবেদনের শুনানি পর্যন্ত হয়নি কারন,তার পক্ষে কোন আইনজীবীকে বিচারকের সামনে উপস্থিত হতে দেওয়া হয়নি । তার পক্ষে উপস্থিত আইনজীবীকে নির্মমভাবে আক্রমণ করা হয়েছিল যার পরে হিন্দু সন্ন্যাসীর প্রতিনিধিত্ব করার মতো কেউ ছিল না।স্থানীয় রিপোর্ট অনুসারে, চিমনয় কৃষ্ণ দাসের পক্ষে যুক্তি প্রদর্শনকারী মোট ৫১ জন আইনজীবীকে আক্রমণ করা হয়েছিল, তাদের অফিস ভাংচুর করা হয়েছিল এবং তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল। এ কারণে কোনো আইনজীবী হাজির হতে পারেননি। মামলার শুনানি এক মাসের জন্য স্থগিত করা হয় এবং এখন আগামী ২ জানুয়ারী ফের শুনানির কথা রয়েছে । এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্র, আইনশৃঙ্খলার সম্পূর্ণ ব্যর্থতা দেখায় । পাশাপাশি ইসলামিক শরিয়া শাসনের অশনিসংকেতকে চিহ্নিত করে ।।