চীনের অহংকার দূর করতে এগিয়ে এসেছে ভারত। মোদী সরকারের একটা নতুন পদক্ষেপে চীনকে হতবাক করে দিয়েছে । ভারত এখন রেয়ার আর্থের (Rare Earth) উপর আধিপত্য বিস্তার করতে চলেছে, এটিকে সত্যিকারের স্বনির্ভর ভারতের সূচনা বলা হচ্ছে । বিশ্বজুড়ে মোবাইল, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন এবং বৈদ্যুতিক যানবাহনের শক্তি আসে ১৭টি বিরল খনিজ থেকে। এগুলোকে রেয়ার আর্থ এলিমেন্ট (Rare Earth Elements) বলা হয়। আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ (২০২৫) অনুসারে, চীন এখনও বিশ্বের ৬০% REE উৎপাদন করে এবং বিশ্বব্যাপী পরিশোধন ক্ষমতার ৯০% নিয়ন্ত্রণ করে।সামারিয়াম, গ্যাডোলিনিয়াম, টারবিয়াম, ডিসপ্রোসিয়াম, লুটেটিয়াম, স্ক্যান্ডিয়াম এবং ইট্রিয়াম সহ গুরুত্বপূর্ণ উপকরণগুলি বৈদ্যুতিক মোটর, ব্রেকিং সিস্টেম, স্মার্টফোন, মহাকাশ উপাদান এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতে অপরিহার্য ।
এখন পর্যন্ত এই ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া আধিপত্য ছিল । কিন্তু এখন ভারত তাদের এই অহংকার ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । মোদী সরকার কেবল এই বিষয়ে পরিকল্পনাই তৈরি করেনি, বরং তৃণমূল স্তরে কাজও শুরু করে দিয়েছে। ভারতে ৬৯ লক্ষ টন রেয়ার আর্থ ভান্ডার রয়েছে, যা বিশ্বের তৃতীয় । তবুও এখন পর্যন্ত কেবলমাত্র একটি সরকারি কোম্পানি IREL সীমিত ব্যবহারের জন্য পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষার জন্য খনি খনন করত। বাকি খরচের জন্য চীনের উপর নির্ভরশীল ছিল ভারত । চলতি সপ্তাহে চীনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রপ্তানির উপর নিয়ন্ত্রণের পর বিপাকে পড়ে গেছে ভারত, জাপান এবং ইউরোপের দেশগুলি। চীনের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণে রেয়ার আর্থ উপাদান এবং চুম্বক সংকট নিয়ে বিশেষ করে বিশ্বব্যাপী গাড়ি নির্মাতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। টাটা মোটরস, টিভিএস মোটর কোম্পানি, হিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা, অ্যাথার এনার্জি, হিরো মোটোকর্প, মারুতি সুজুকি ইন্ডিয়া (এমএসআইএল) প্রভৃতি অনেক কোম্পানি মোটর আমদানি করার অথবা মোটর সাব-অ্যাসেম্বলি চীনে পাঠানোর বিকল্প খুঁজছে, যেখানে সেগুলিতে রেয়ার আর্থ চুম্বক লাগানো যেতে পারে এবং তারপর ভারতে ফেরত পাঠানো যেতে পারে। এই কর্মপরিকল্পনা সাময়িক স্বস্তি দিতে পারে। কারণ চীনের বিধিনিষেধ চুম্বকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, সমাপ্ত পণ্যের ক্ষেত্রে নয়। তবে, উভয় বিকল্পই মোটর খরচ বাড়িয়ে দেবে ।
কিন্তু এবার এই নির্ভরতা শেষ হচ্ছে। অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা এবং তামিলনাড়ুতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় খনির কাজ চলছে । বেসরকারি কোম্পানিগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। সরকারের পিএলআই স্কিম এবং “ন্যাশনাল ক্রিটিক্যাল মিনারেল মিশন” এর জন্য অসাধারণ অবকাঠামো তৈরি করছে। শুধু তাই নয়, ভারত কাজাখস্তান, মঙ্গোলিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশের সাথে অংশীদারিত্ব শুরু করেছে। আইআরইএল এবং বিএআরসি বিশাখাপত্তনমে SmCo এবং NdFeB এর মতো শক্তিশালী চুম্বকের জন্য একটি প্ল্যান্ট শুরু করেছে। স্মার্টফোন থেকে শুরু করে যুদ্ধবিমান এবং উপগ্রহ পর্যন্ত সবকিছুতে এই একই চুম্বক ব্যবহার করা হয়। গুজরাটের ট্রাফালগার গ্রুপ ২০২৬ সাল থেকে উৎপাদন শুরু করবে। ২০২৭ সালের মধ্যে, এগুলি দেশের চাহিদার ২০% পূরণ করবে।
হায়দ্রাবাদ-ভিত্তিক মিডওয়েস্ট ম্যাটেরিয়ালস কোম্পানি ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০০ টন NdFeB চুম্বক তৈরি করবে এবং পরবর্তীতে ৫০০০ টন পর্যন্ত উৎপাদন করবে। ভারত এখন তার ইভি সেক্টরের জন্য মোটর, গিয়ার সিস্টেম, হেডলাইট এবং উইন্ড টারবাইনে ব্যবহৃত সমস্ত চুম্বক দেশীয়ভাবে তৈরি করবে। আজ চীন ৮০% এরও বেশি REE প্রক্রিয়াজাত করে এবং ৯০% চুম্বক তৈরি করে। কিন্তু ভারতের নতুন কৌশল তাদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।
চীন বারবার সরবরাহ বন্ধ করে বিশ্বকে ভয় দেখায়, এখন ভারত নিজেই একই জিনিস তৈরি করতে চলেছে। ২০২৮ সালের মধ্যে, ভারত চীনের উপর শূন্য নির্ভরতার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু নিজের দেশের চাহিদা মেটানোই নয়,মোদী সরকারের এই দৃষ্টিভঙ্গি ভারতকে বিশ্বব্যাপী রেয়ার আর্থ সরবরাহকারী করে তুলবে, কেবল স্বনির্ভর নয় ।।