এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৮ এপ্রিল : আজ সোমবার দুপুরে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সুপ্রিম রায়ে সদ্য কাজ হারানোচাকরিহারাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ৷ কিন্তু কারা সেই বৈঠকে যোগে দেবে তা নিয়ে শুরু হয়েছে সংঘাত । তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানিয়েছিলেন যে এই বৈঠকে শুধুমাত্র যোগ্যরাই যোগ দেবে । ‘চিহ্নিত অযোগ্যদের’ গেট পাস দেওয়া হবে না । কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল সাত সকালে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের সামনে হাজির হয়েছে সেই ‘চিহ্নিতরা অযোগ্যরা’ই । ফলে মুখ্যমন্ত্রী সদিচ্ছা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠল । এদিকে রাজ্য বিজেপির যুবনেতা ও কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তরুনজ্যোতি তিওয়ারি বলেছেন,’বৈঠক নয়, বিচার চাই ।’
প্রসঙ্গত,এরাজ্যে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির কারনে চাকরি হারিয়েছেন ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী । সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে যোগ্য-অযোগ্য বাছাই সম্ভব নয় বলে পুরো প্যানেল বাতিল করে দেওয়া হল । যেকারণে মেধার ভিত্তিতে চাকরি পাওয়া কয়েক হাজার যোগ্য প্রার্থীকে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির শিকার হয়ে পথে বসতে হয়েছে । সুপ্রিম রায়ের পরে এখনো ২০১৬ সালের এস এসসি প্যানেলের যোগ্য অযোগ্য বাছাই করেনি এবং কোনো উৎসাহও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না । উলটে আজ দুপুরে চাকরিহারাদের সঙ্গে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বৈঠকে বসার কথা ঘোষণা করেন মমতা ব্যানার্জি । এদিকে চাকরিহারাদের পাশাপাশি গোটা রাজ্য জুড়ে গনরোষের সৃষ্টি হয়েছে । যোগ্য চাকরিহারারা নবান্ন অভিযানেরও ডাক দিয়েছেন ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির এই বৈঠক প্রসঙ্গে তরুনজ্যোতি তিওয়ারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন,”বৈঠক নয়, বিচার চাই: একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে ২৫ লক্ষ চাকরিপ্রার্থী দের অবস্থা দেখে কতগুলো প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি” । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার বৈঠক করতে চলেছেন চাকরিহারাদের সাথে। শুনে প্রথমে মনে হতে পারে, দীর্ঘদিনের অবিচার বুঝি এবার ন্যায় পেতে চলেছে। কিন্তু প্রশ্ন জাগে—এই বৈঠকে কারা থাকবেন? যারা প্রকৃত অর্থে যোগ্য প্রার্থী ছিলেন, পরিশ্রম করে পরীক্ষা দিয়েছিলেন—তারা কি থাকবেন? না কি থাকবে সেই সব ছদ্মবেশী চোরেরা, যাদের এখনো চিহ্নিত করা যায়নি? আর যাদেরকে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ‘ব্যতিক্রমী নিয়োগ’ বলে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, তারাও কি থাকবেন? ২৬০০০ এরমধ্যে যারা প্রকৃতযোগ্য তারা থাকবেন তো নাকি তাদের মধ্যে এখনো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি এরকম কিছু অযোগ্যও থাকবে?’
তিনি আরও লিখেছেন,’এই প্রশ্নগুলোই আজ বাংলার বঞ্চিত যুবসমাজের রক্তক্ষরণ। যে সমস্ত চাকরিগুলো বিক্রি হয়ে গেল বাজারে—আলু পটলের মতো—তাদের বঞ্চিত প্রাপকেরা কি ডাক পাবে এই বৈঠকে? যে হাজারো মেয়েরা তাদের ভবিষ্যৎ শিক্ষকত্বের স্বপ্ন দেখেছিল, অথচ চাকরি বিক্রি হওয়ায় পরিবার থেকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হলো—তারা কি থাকবে? যারা সরকারি স্কুলের শিক্ষক হওয়ার সমস্ত যোগ্যতা অর্জন করেও এখন কোনো রকমে বেসরকারি চাকরি করে সংসার চালাচ্ছেন—তারা কি আমন্ত্রিত?
যারা দিনের পর দিন দেখেছে, তাদের থেকে কম নম্বর পাওয়া, কম যোগ্যতার লোকজন টাকা দিয়ে চাকরি পেয়ে গেল—তারা কি এই বৈঠকে প্রশ্ন করার সুযোগ পাবে? আর সেই এস এস সি ও সরকার—যারা সুপরিকল্পিতভাবে পুরো প্যানেল ডুবিয়ে দিল শুধুমাত্র চাকরি চোরদের রক্ষা করার জন্য—তারা আবার বৈঠক করে কি বলবে?’
তিনি লিখেছেন,’মনে আছে তো, ২০১৯ লোকসভার আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে গিয়েছিলেন এই চাকরিপ্রার্থীদের কাছে। তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তারপর? তার গঠিত উপদেষ্টা কমিটি অবৈধ প্রমাণিত হলো, এবং সেই সদস্যরাও চাকরি পেলেন।কোথায় ছিল সেই বাধ্যবাধকতা, যা একবারও চাকরি চোরদের ‘চোর’ বলতে পারল না, বরং বলল ‘ব্যতিক্রমী নিয়োগ’? আর সেই কুনাল ঘোষ—যিনি নিজেই স্বীকার করেছেন ১৬-১৭ সাল থেকেই চাকরি বিক্রির খবর জানতেন, এবং জেলে বসে ঘুষের টাকায় ডিসকাউন্টের ‘চিরকুট’ লিখতেন—তিনি এখন গলা উঁচু করে কথা বলছেন! তার দাবি, দল জানত না—তাহলে প্রশ্ন আসে, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কি কিছু জানতেন না? নিশ্চয়ই জানতেন। কারণ, এই দুর্নীতির পেছনে ছিল তাঁরই সম্মতি বা সক্রিয় অনুপ্রেরণা।’
তরুনজ্যোতির প্রশ্ন,’আজ যাঁর অনুপ্রেরণায় লক্ষ লক্ষ চাকরি চুরি হলো, তিনি কীসের বৈঠক করবেন? কাদের সঙ্গে? কেন ২৫ লক্ষ বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের ডাকা হলো না? কেন তাদের মুখে তুলে দেওয়া হলো ‘অপেক্ষা করো, দেখি কী করা যায়’ এই ধোঁয়াশা?
বৈঠক নয়, এবার বিচার চাই। যারা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকরি হারাল, যারা দুর্নীতির শিকার হয়ে ভবিষ্যৎ হারাল—তাদের চোখে এখন একটাই প্রশ্ন— “এই অন্যায়ের শেষ কোথায়?”