এইদিন ওয়েবডেস্ক,কালনা(পূর্ব বর্ধমান),০৯ ফেব্রুয়ারী : দলত্যাগীদের ‘কুসন্তান’,’দুষ্ট গরু’ বলে কটাক্ষ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনার বৈদ্যপুরে জনসভার আয়োজন করেছিল শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস । ওই জনসভায় এসে বিজেপি ও দলত্যাগী নেতাদের একহাত নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি বলেন, ‘মা ছেলেকে খাইয়ে দাইয়ে লালনপালন করবে, আর তারপর মা যখন অসুস্থ হয়ে পড়বে বা মায়ের যখন খাদ্যের প্রয়োজন পড়বে তখন তুমি মাকে বিট্রে করে পালিয়ে যাবে, এই সন্তান কুসন্তান। এই সন্তান কখনও মায়ের সুসন্তান হতে পারে না ।’ সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘কয়েকটা দুষ্ট গোরু হাম্বা হাম্বা ডাকতে ডাকতে ইধার উধার করে বেড়াচ্ছে নিজেদের দুর্নীতি ঢাকার জন্য । তারা গেছে ভালো হয়েছে । পাপ বিদায় নিয়েছে । আমি মনে করি যারা তৃণমূলে থেকে তৃণমূলের ক্ষতি করে তাদের তৃণমূল কংগ্রেস দলে থাকার প্রয়োজন নেই । যারা মানুষের হয়ে কাজ করবে তারাই তৃণমূল কংগ্রেস করবে ।’
গত বছর ডিসেম্বরে মেদিনীপুরে অমিত শাহের জনসভায় শুভেন্দু অধিকারীসহ রাজ্যের বিভিন্ন অংশ থেকে এক ঝাঁক তৃণমূল নেতা গেরুয়া শিবিরে নাম লেখান । সেই দলে ছিলেন পূর্ব বর্ধমান লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ সুনীল মন্ডল ও কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু । এদিন নাম না করে দলত্যাগীদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি অন্যায় বরদাস্ত করিনা বা করবোও না । যার জন্য
আগে থেকে ভয় পেয়ে দু’একজন পালিয়ে যাচ্ছে । তারা জানে যে আমি তাদের টিকিট দেবো না । না দেওয়াই ভালো । কেন দেবো ? যারা মানুষের বিপদে আপদে পাশে থাকে না শুধু নিজেদের পরিবারকে দেখে আর কাউকে দেখে না । আমি তাদের জন্য নই। আমি মানুষের জন্য ।’
দলত্যাগীদের পর বিজেপিকে নিশানা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বিজেপি মুখে ধর্মের কথা বলে । কিন্তু ওরা আদপে কোনও ধর্মই জানে না । হিন্দু ধর্মের মধ্যে কত ধর্ম আছে ওরা জানে ? ‘ এরপর বিজেপির কেন্দ্রীর নেতাদের আক্রমন করে তিনি বলেন, ‘এখানে এসে চৈতন্যদেবের নামে ভুলভাল বলে গিয়েছিল । স্বামী বিবেকানন্দের নামের পিছনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের টাইটেল লাগিয়ে দিচ্ছে । ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মুর্তী ভেঙেছে । নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোসকে নিয়ে কিছু করার তো দুরের কথা, আজ পর্যন্ত কেউ জানতে পারলো না নেতাজীর মৃত্যু দিবস কবে ।’ পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘বিজেপি দুর্গাপূজো,কালীপূজা,লক্ষ্মীপূজো কখনও করেছে ? ওরা এসব জানেই না । আমরা তো যুগযুগান্ত ধরে দুর্গাপূজা কালীপূজো করি । আমার বাড়িতে ১৯৯৮ সাল থেকে কালীপূজো হয় ।’
এরপর উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মনে রাখবেন বিজেপির অনেক টাকা আছে । টাকা নিয়ে চলে আসবে । ইলেকশনের সময় ফান্ডে ফান্ডে টাকা দিচ্ছে । যদি টাকা দেয় জানবেন ওটা ওদের চুরি করা টাকা । টাকা দিলে টাকা নিয়ে নেবেন । ওই টাকায় ভালো করে মাংস ভাত খেয়ে নেবেন । আর ভোটের বাক্সে ওদের উলটে দেবেন ।’
এরপর বিজেপি শাসিত রাজ্য ত্রিপুরা,আসাম উত্তরপ্রদেশের আইনশৃঙ্খলা ও দিল্লিতে দাঙ্গা নিয়ে এদিন প্রশ্ন তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
এদিন ফের কেন্দ্রীয় কৃষিবিলের বিরোধিতা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ওই তিনটে কালো বিল কৃষকদের সব লুট করে নেবে । আপনি চাষ করবেন আর কালোবাজারিরা সব লুট করে নেবে । আপনি ধান উৎপাদন করবেন আর ওরা আদানিদের কাছে বিক্রি করে দিয়ে চলে যাবে ।’ রাজ্য সরজার লিস্ট না পাঠানোয় কেন্দ্রীয় কৃষক সুরক্ষা যোজনার অনুদান থেকে এরাজ্যের কৃষকরা অনুদান পাচ্ছেন না বলে বিজেপির অভিযোগকে নস্যাৎ করে দেন মুখ্যমন্ত্রী । তিনি বলেন,’রাজ্যের কৃষকদের নাম কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে । এবার এরাজ্যের কৃষকদের টাকা মিটিয়ে দিক কেন্দ্র সরকার ।’
এদিনের জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, পূর্ব বর্ধমান জেলাপরিষদের সহ সভাধিপতি দেবু টুডু, প্রাক্তন সাংসদ মমতাজ সংঘমিতা, যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি রাসবিহারী হালদার প্রমুখ । কালনা ও কাটোয়া মহকুমা এলাকা থেকে কয়েক হাজার মানুষ এদিনের জনসভায় এসেছিলেন বলে দাবি স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের ।।