এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৫ ফেব্রুয়ারী : আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তরুনী চিকিৎসক ‘অভয়া’র ধর্ষণ-খুনে একমাত্র ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রাইয়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা হয়েছে । কিন্তু এই মামলায় সবচেয়ে বেশি আঙুল উঠছিল যার দিতে আরজি করের সেই প্রাক্তন অধ্যক্ষ এখন জেলের বাইরে । পাশাপাশি প্রমান লোপাটের অভিযোগ যার বিরুদ্ধে উঠেছে, কলকাতার টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডলও জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন ৷ তাই ‘অভয়া’র ধর্ষণ-খুন মামলার প্রকৃত ন্যায়বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা এখন কার্যত অসম্ভব । এই মামলায় একদিকে রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের ভূমিকায় যেমন প্রশ্ন উঠছে, ঠিক তেমনি প্রশ্ন উঠছে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধেও । কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে খোদ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী পর্যন্ত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ।
যাই হোক, এই পরিস্থিতিতে সোমবার ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের বেতন বৃদ্ধির ঘোষণায় সন্দেহ প্রকাশ করেছেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি মনে করছেন যে বেতন বাড়িয়ে চিকিৎসকদের আন্দোলনকে ছত্রভঙ্গ করার ছক কষছেন মুখ্যমন্ত্রী ।
“উই ওয়ান্ট জাস্টিস” হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে বিরোধী দলনেতা লিখেছেন,’আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তার বোনটি আজও বিচার পাননি। বোন অভয়ার বাবা মা প্রতিদিন বিচারের দাবীতে মহামান্য আদালতের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন। বোন অভয়ার সহকর্মী চিকিৎসকরা এখনো বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত ও সংঘবদ্ধ। এরকম একটা প্রেক্ষাপটে মুখ্যমন্ত্রী ধনধান্য স্টেডিয়াম থেকে সরকারি চিকিৎসকদের বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা করলেন যা আদপে চিকিৎসকদের আন্দোলনকে ছত্রভঙ্গ করার এক সুষ্পষ্ট পরিকল্পিত ছক।’
এরপর শুভেন্দু লেখেন,’আর জি কর ধর্ষণ কাণ্ড স্বাধীন ভারতে ঘটা পশ্চিমবঙ্গের সব থেকে কালিমালিপ্ত অধ্যায়। সরকারি চিকিৎসকদের আন্দোলনের ফলে দেশে বিদেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা পুলিশ মন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর মুখ পুড়েছে। রাজ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জীর্ণ দশা দেশের সামনে উন্মোচিত হয়ে গিয়েছে, যা অবশ্যই মুখ্যমন্ত্রীর জন্য অস্বস্তিকর। আজ সরকারি চিকিৎসকদের বেতন বৃদ্ধির ঘোষণার ফলে চিকিৎসকদের বেতন যে যৎসামান্য বেড়েছে তার সাথে যে পরিমাণ সামান্য শতাংশ মহার্ঘ ভাতা পশ্চিমবঙ্গ সরকার দেয় তা যোগ করে মাসের শেষে যে টাকা তারা হাতে পাবেন তা দেশের বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে একই পদে কর্মরত চিকিৎসকরা যে বেতন পান তার থেকে অনেকটাই কম, সুতরাং এই বেতন বৃদ্ধিতে সরকারি চিকিৎসকরা উপকৃত হবেন না। আর নার্স, স্বাস্থ্য কর্মচারীরা ও এজেন্সির মাধ্যমে নিয়োজিত হাসপাতালের কর্মচারীগণ এই বেতন বৃদ্ধি থেকে বঞ্চিত হলেন তাদের বিষয়ে সরকারের কোনও চিন্তাভাবনা রয়েছে বলে মনে হয় না। এছাড়া সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে মুখ্যমন্ত্রী সরকারি চিকিৎসকদের চিকিৎসার কাজ থেকে জোর করে ডেকে এনে একটি সভায় উপস্থিত করালেন। রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল গুলিতে রোগীরা পরিষেবা পেলেন না, এতে ওনার বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। আসলে তিনি নিজের ভাষণ শোনাতেই চিকিৎসা পরিষেবা থেকে চিকিৎসকদের বিরত রেখে একটি কর্মব্যস্ত দিনে এমন একটি সভা করলেন।
তিনি লিখেছেন,’মমতা ব্যনার্জী এছাড়াও প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে “ফেস্ট” আয়োজন করার জন্য দু’কোটি টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা করেছেন। বিগত দশ বছর ধরে মেডিক্যাল কলেজ সহ রাজ্যের বিভিন্ন কলেজ গুলিতে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়নি। এত দিন শাসকদলের ছাত্র নেতারা ফেস্টের টাকা নয়ছয় করতো, এ বার মুখ্যমন্ত্রী দুর্নীতির লাইসেন্স দিয়ে দিলেন। রোগী পরিষেবা যেখানে নিম্ন মানের সেখানে এই অনুদান মানানসই? রোগীদের স্যালাইন বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে, সেখানে ২ কোটি টাকা ফেস্টের জন্য অনুদান! এটা কি নির্বাচনের আগে ঘুষ?
আর মন্ত্রী শশী পাঁজার নেতৃত্বে চিকিৎসকদের সংগঠন তৈরি করা আসলে ডাক্তারবাবুদের আন্দোলন থেকে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে নিজেদের সংগঠন ভূমিষ্ঠ করার উদ্যোগ, যা আন্দোলনরত চিকিৎসকদের মধ্যে সুষ্পষ্ট বিভাজন তৈরী করার চক্রান্ত মাত্র।’
সব শেষে শুভেন্দু অধিকারী লেখেন,’মমতা ব্যনার্জী আসলে ভয় পেয়েছেন। তিনি বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন তার সরকারের অপশাসন, তোষণের রাজনীতির কারণে সমাজের একটা বড়ো অংশের ভোট তার বিরুদ্ধে যাবে, তাই সরকারি চিকিৎসকদের বেতন বৃদ্ধি, মেডিক্যাল কলেজগুলিকে দু’কোটি টাকা এই সব ঘোষণা ২০২৬ বিধানসভার প্রাক্কালে নির্বাচনী বৈতরণী পার করার একটা সুচতুর কৌশল মাত্র।’
উল্লেখ্য,সোমবার ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে মমতা ব্যানার্জি ঘোষণা করেন,’ডিপ্লোমাধারী সিনিয়র রেসিডেন্টদের নতুন বেতন ৮০ হাজার টাকা, পোস্ট গ্রাজুয়েট সিনিয়র রেসিডেন্টদের নতুন বেতন ৮৫ হাজার টাকা, পোস্ট ডক্টরেট সিনিয়র রেসিডেন্টদের নতুন বেতন ১ লক্ষ টাকা করা হল। ১৫ হাজার টাকা বেতন বৃদ্ধি করলাম। ইন্টার্ন, হাউস স্টাফ, পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেনি, পোস্ট ডক্টরের ট্রেনিদের জন্য ১০ হাজার টাকা বেতন বৃদ্ধি করলাম। সিনিয়র চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের জন্য ২০ কিমি থেকে বাড়িয়ে ৩০ কিমি করলাম।’ তার আগে তিনি ‘অভয়া’র ধর্ষণ-খুন কাণ্ডে দাবি করেন, ‘আর.জি.করের নিহত চিকিৎসক কন্যার শোকস্তব্ধ পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা জানাই। আমি দোষী সাব্যস্তের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে পথে হেঁটেছি। আমাদের সরকার ‘অপরাজিতা’ বিল পাশ করিয়েছে, যাতে আগামী দিনে দোষীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেতে পারে। স্বাস্থ্যের আরেক নাম ‘সেবা’।’।