এইদিন ওয়েবডেস্ক, লালমনিরহাট (বাংলাদেশ), ২০ অক্টোবর : বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর মুসলিমদের অত্যাচার চরম সীমা অতিক্রম করেছে । দেশের সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার নিয়ে এতদিন কট্টর ইসলামি মৌলবাদী দল বাংলাদেশ ন্যাশানাল পার্টি (বিএনপি) ও জামাত-এ-ইসলামির উপর অভিযোগের আঙুল তুলে আসতেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । এবার হাসিনার দলের নেতাকর্মীরাই হিন্দুদের উপর অত্যাচার শুরু করেছে । জানা গেছে,লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের বারোহাত কালীতলা এলাকার এক হিন্দু গৃহবধূকে খুনের হুমকি দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ উঠল সোলামান আলী সবুজ নামে আওয়ামী লীগ দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে । ধর্ষকের নাম সোলামান আলী সবুজ । বধূকে ধর্ষণের পর সোলামান আলী পালানোর চেষ্টা করলে বধূর প্রতিবেশীরা তাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করে । কিন্তু খবর পেয়ে আওয়ামী লীগের অনান্য নেতাকর্মীরা এসে স্থানীয় হিন্দুদের উপর হামলা চালিয়ে দেয় এবং ধর্ষক দলীয় নেতাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় ।
শুধু তাইই নয়,আওয়ামী লীগ ও গ্রামের মাতব্বরেরা মিলে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে টাকা দিয়ে জোরপূর্বক মীমাংসার জন্য চাপ সৃষ্টি করে নির্যাতিতা বধূর পরিবারের উপর । কিন্তু মীমাংসায় রাজি না হওয়ায় নির্যাতিতার পরিবারকে গৃহবন্দি করে রাখে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা । বাড়ির সামনে রীতিমতো পাহারা পর্যন্ত বসানো হয় ।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরিবারটি বেশ কয়েকদিন ঘর থেকে বের হতে পারেনি এবং তাদের কারও সঙ্গে কথাও বলার পর্যন্ত অনুমতি দেয়নি আওয়ামী লীগের নেতারা । এদিকে তিন দিন ধরে মীমাংসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে ১০০ টাকা মূল্যের ৩টি নন জুডিশিয়াল স্টাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে নির্যাতিতার পরিবারটিকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয় । পরে কুড়িগ্রামে বাপেরবাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন বধূ ও তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন । সেখান থেকে লালমনিরহাট সদর থানায় এসে লিখিত অভিযোগ করেন ওই বধূ । এদিকে শারদোৎসবের মাঝেই ভিটেমাটি ছাড়া হয়ে চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে পরিবারটি ।
জানা গেছে,ধর্ষক সোলায়মান আলী সবুজ-এর বাড়ি লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের কুলাঘাট এলাকায় । সে সফিকুল ইসলামের ছেলে এবং স্থানীয় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক । ঘটনাটি ঘটে গত ১৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় । নির্যাতিতা বধূ জানান, দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্রলীগ নেতা সোলায়মান আলী তাকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল। এতে রাজি না হওয়ায় সে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। তার স্বামী স্থানীয় কুলাঘাট বাজারে মাছের ব্যবসা করে সংসার চালান । স্বামী রাতে বাজার থেকে ফেরার পথে তাকে মেরে ফেলার হুমকি পর্যন্ত দেয় দিত সোলায়মান আলী। কিন্তু এতেও কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে সুযোগের সন্ধানে থাকে ওই ছাত্রলীগ নেতা। পরে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় বাড়িতে ঢুকে পড়ে । তিনি তখন ঘরের দরজা বন্ধ করে ভিতরেই ছিলেন । সোলায়মান ঘরের দরজায় কড়া নাড়ে ।
বধূ বলেন,’ঘটনার দিন আমি বাড়িতে একাই ছিলাম। দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ পেয়ে তা খোলামাত্রই সোলায়মান আলী আমার মুখ চেপে ধরে যাতে আমি চিৎকার না করতে পারি । এরপর সে আমাকে ধর্ষণ করে । এরই মাঝে কোনো রকমে আমি নিজেকে তার কবল থেকে মুক্ত করে চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে । এদিকে সোলায়মান আলী পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে প্রতিবেশীরা তাকে ধরে ফেলে । কিন্তু পরে খবর পেয়ে স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে সবুজকে ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায় ।’
নির্যাতিতা বধূর স্বামী বলেন, ‘আমার স্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন করে কুপ্রস্তাব দিত সোলায়মান আলী । এতে রাজি না হওয়ায় বাড়িতে একা পেয়ে আমার স্ত্রীকে সে ধর্ষণ করেছে। পরে আমাকে টাকা নিয়ে মীমাংসা করার চাপ দেয় ছাত্রলীগ নেতা সবুজের লোকজন । এতে রাজি না হলে তারা আমাদের তিন দিন বাড়ি থেকে বের হতে দেয়নি। পরে গত সোমবার বিকেলে ৩ টি ১০০ টাকার সাদা স্টাম্পে আমাদের সই নিয়ে নিজ বাড়ি থেকে বের করে দেয়।’ তিনি বলেন,’পরে কুড়িগ্রামে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে আশ্রয় নেই। সেখান থেকে লালমনিরহাট সদর থানায় এসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি । সামনে দুর্গাপূজা,ওরা আমাদের পূজার আনন্দ কেড়ে নিয়েছে। আমি ছাত্রলীগের লম্পট নেতা সোলায়মান আলীর কঠোর শাস্তি চাই ।’
যদিও আজ শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ধর্ষক সোলামান আলী সবুজকে গ্রেফতারের কোনো উদ্যোগই নেয়নি পুলিশ । এমনকি পুলিশের তরফে ধর্ষিতা বধূর মেডিকেল টেস্ট পর্যন্ত করা হয়নি । শাসনযন্ত্র হাতে থাকায় বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে শেখ হাসিনার দলের ছাত্রলীগের নেতাকে ।।