শ্যামসুন্দর ঘোষ,পূর্বস্থলী(পূর্ব বর্ধমান),০৫ ডিসেম্বর : পূর্ব বর্ধমান জেলার পর্যটনস্থলগুলির মধ্যে অন্যতম কালনা মহকুমার অন্তর্গত পূর্বস্থলীর ‘চুপি কাষ্ঠশালির ছাড়িগঙ্গা’ । শীত পড়তেই ছাড়িগঙ্গায় এসে জড়ো হয় হাজার হাজার রকমারি পরিযায়ী পাখি । আর পাখির টানেই এখানে ছুটে আসেন দূরদূরান্তের পর্যটকরা । তাঁরা নৌকায় চেপে ছাড়িগঙ্গায় ঘুরে ঘুরে পরিযায়ী পাখিদের ক্যামেরার লেন্সবন্দি করেন । কিন্তু সরকারিভাবে ড্রেজিং না হওয়ায় বিগত ৫-৬ বছর ধরে ক্রমশ ভাগিরথী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে ছাড়িগঙ্গা । পাশাপাশি স্থির জলে জমছে ঘন কচুরিপানা । এদিকে শুকিয়ে যাওয়া ছাড়িগঙ্গার চর একটু একটু করে ভূমি মাফিয়াদের দখলে চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ । স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা এভাবে চলতে থাকলে ছাড়িগঙ্গা নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে বেশি দেরি নেই । যার ফলে এলাকার নৌকার মাঝি ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে । স্থানীয়দের দাবি,অবিলম্বে ড্রেজিং করে পলি তুলে ফেলে ফের ফের ভাগিরথীর সঙ্গে ছাড়িগঙ্গাকে সংযুক্ত করে দেওয়া হোক ।
জানা গেছে,এক সময় পূর্বস্থলীর কাষ্ঠশালি গ্রামের ঠিক পাশ দিয়েই বয়ে যেত ভাগিরথী । বিগত তিন দশক আগে থেকে ভাগিরথী একটু একটু করে দুরে সরে গেছে । কিন্তু ভাগিরথী দূরে সরে গেলেও কাষ্ঠশালিতে বিরাট আকৃতির জলভূমির সৃষ্টি হয় । ওই জলাভূমিটি ছাড়িগঙ্গা নামে পরিচিত । পুরনো মায়াপুর মণ্ডলপাড়ার সামনে একটি সংকীর্ণ চ্যানেলের মাধ্যমে ভাগিরথীর প্রচুর মাছ আসতো ছাড়িগঙ্গায় ৷ আর সেখানে পর্যাপ্ত খাবার পাওয়ার কারনে প্রতি বছর শীতকালে সেখানে ভিড় জমাতো অসংখ্য পরিযায়ী পাখি । সেই পাখির টানেই মূলত কাষ্ঠশালি গ্রামে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়তে শুরু করে ৷ পর্যটকদের ছাড়িগঙ্গায় ঘুরে ঘুরে পাখি দেখানোর জন্য বর্তমানে ৮০ টি নৌকা রয়েছে । এছাড়া পর্যটকদের সুবিধার্থে ২০-২৫ টি খাবারের দোকান গড়ে উঠেছে এলাকায় ।
দেখুন ভিডিও :-
স্থানীয় বাসিন্দা জয়ন্ত প্রামাণিক বলেন,’পুরনো মায়াপুর মণ্ডলপাড়ার সামনে যে চ্যানেল দিয়ে ছাড়িগঙ্গায় ভাগিরথীর জল ঢোকে সেটি অনেকটাই পলিতে মজে গেছে । জানুয়ারী মাসের মধ্যেই সম্পূর্ণ বুজে যাবে বলে আশঙ্কা আমাদের । এই সময়ে যদি ওই চ্যানেলটি ড্রেজিং করে দেওয়া হত তাহলে ভাগিরথীর জল সহজেই আসতে পারতো । তাতে পরিযায়ী পাখির সংখ্যাও বাড়তো । বর্তমানে ওই চ্যানেলে ফুট দুয়েক গভীর জল আছে । কিন্তু জানুয়ারীতে শুকিয়ে গিয়ে পুরোপুরি চর পড়ে যাবে । আর জল বন্ধ হয়ে গেলে পাখিও আসবে না । ফলে এতগুলি মানুষের জীবিকা ক্ষতিগ্রস্থ হবে ।’
ছাড়িগঙ্গার নৌকার মাঝি বৃন্দাবন রাজবংশি বলেন, ‘আগে আমরা দু’দিক থেকে ছাড়িগঙ্গায় ঢুকতে পারতাম । কিন্তু একটা দিকে রাস্তা তৈরি করায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে । আর একটা দিকে চর পড়ে ডাঙ্গা হয়ে গেছে । তবুও সেখান দিয়ে অল্পবিস্তর জল আসে । কিন্তু জল সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে আর পাখি আসবে না । আর এমনিতেই ছাড়িগঙ্গায় প্রচুর কচুরি পানা হয়েছে । তার উপর বদ্ধ জল হয়ে গেলে কচুরি পানায় পুরোপুরি ছেয়ে যাবে । তখন আর নৌকা চালানো যাবে না । আমাদের জীবিকা বন্ধ হয়ে যাবে ।’
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ,ছাড়িগঙ্গা যত শুকিয়ে যাচ্ছে ততই তার চর দখল করতে শুরু করতে তৎপর হয়ে উঠছে ভূমাফিয়ারা । তাঁদের আশঙ্কা এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই ছাড়িগঙ্গার অস্তিত্বই বিলুপ্ত হয়ে যাবে । তাঁদের দাবি, ড্রেজিং করে পলি সরিয়ে ছাড়িগঙ্গায় ভাগিরথীর জল সরবরাহ নিয়মিত রাখার ব্যবস্থা করুক প্রশাসন ।।