দিব্যেন্দু রায়,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),০২ মে : পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া-২ ব্লকের অগ্রদ্বীপ পঞ্চায়েতের অন্তর্গত অগ্রদ্বীপ,চর সাহাপুর, চর বিষ্ণুপুর, কালিকাপুর প্রভৃতি গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ভাগিরথী নদী । ভাগিরথীর পাড় সংস্কারের জন্য সেভাবে কোনো পরিকল্পনা না নেওয়ায় প্রতি বছর গ্রামগুলি একটু একটু করে বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদীগর্ভে । সব চেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি চর বিষ্ণুপুর গ্রামে । এই গ্রামে ভাঙনের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি । একসময়ে এই গ্রামে প্রায় দেড়হাজার মানুষের বসবাস ছিল । এখন নামমাত্র পরিবার রয়েছে গ্রামে ।
ভাগিরথী ক্রমশ গতিপথ পরিবর্তন করায় চর বিষ্ণুপুর গ্রামটি সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে । ইতিমধ্যেই গ্রামের বহু কৃষিজমি, বারোয়ারি দুর্গা মন্দির, কালী মন্দির, প্রাথমিক স্কুল, ক্লাব ঘর, খেলার মাঠ সহ বহু কৃষি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। বহু পরিবার পৈতৃক ভিটে হারিয়ে অন্য গ্রামে চলে গিয়েছে । ইদানিং ফের দ্রুত হারে চর বিষ্ণুপুর গ্রামকে গ্রাস করতে শুরু করেছে ভাগিরথী । ফলে যেকটি পরিবার গ্রামে এখনো আছে তারা চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে । সেচদপ্তরের কাটোয়া সাবডিভিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার তারকনাথ মিশ্র জানিয়েছেন, শীঘ্রই ওই এলাকা পরিদর্শন করতে যাওয়া হবে । তারপরে ভাঙন নিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হবে ।
জানা গেছে,চর বিষ্ণুপুর গ্রামে রয়েছে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের একটি পোল্ট্রি ফার্ম । এই ফার্মে মূলত কড়কনাথ মুরগির চাষ হয়। বর্তমানে চার শতাধিক মুরগি রয়েছে ফার্মে । ভাগিরথী ফার্মটির এতটাই কাছে চলে এসেছে যে যেকোনো সময় সেটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে । এনিয়ে চরম উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন গোষ্ঠীর মহিলারা । গোষ্ঠীর সদস্যা অনিতা সরকার বলেন, ‘ফার্মের প্রায় ৫০ মিটার কাছে চলে এসেছে ভাগিরথী । এদিকে গ্রামকে যে দ্রুতহারে গ্রাস করছে নদী, তাতে হয়তো আর বেশি দিন ফার্মের অস্তিত্ব থাকবে না ।’ তিনি জানান, বিকল্প ব্যবস্থা করার জন্য গোষ্ঠীর তরফ থেকে বিডিওর কাছে আবেদন করা হয়েছে । এই বিষয়ে কাটোয়া-২ বিডিও পুষ্পেন্দু সাহা বলেন, ‘চর বিষ্ণুপুর গ্রামের ওই গোষ্ঠীর তরফ থেকে আবেদন জানানো হয়েছে, ফার্মটিকে অন্যত্র সরানোর জন্য চেষ্টা চলছে ।’
অগ্রদ্বীপ অঞ্চলের গ্রামবাসীদের অভিযোগ,ভাগিরথী সংলগ্ন গ্রামগুলির ভাঙন আজকের নয় । ১৯৯৬ সালের ভয়াবহ বন্যার পর থেকেই দ্রুতহারে গ্রামগুলিতে ভাঙন শুরু হয়েছে । অথচ বামফ্রন্টের জমানায় নদীর পাড় সংস্কারের কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি । এমনকি ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদল হলেও অগ্রদ্বীপে ভাগিরথী ভাঙন রোধে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ । বর্ষায় ভাঙন বেশি হলে মাঝে মধ্যে বালির বস্তা দিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা ।।