এইদিন ওয়েবডেস্ক,কোচবিহার,০৫ আগস্ট : আজ মঙ্গলবার কোচবিহারে দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাওয়ার সময় খাগড়াবাড়িতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর উপর প্রাণঘাতী হামলা হয়েছে । কালো পতাকা ও তৃণমূলের পতাকা হাতে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস অনুষ্ঠিত দুষ্কৃতীরা শুভেন্দু অধিকারীর কোন ভয়ে হামলা চালায় । তার গাড়ির পিছনের কাচ ভেঙে দেওয়া হয় । এই ঘটনার জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ, কোচবিহারের পুলিশ সুপার ধৃতিমান ভট্টাচার্য ও ও ডিজি রাজিব কুমারকে দায়ী করেছেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি দাবি করেছেন যে পুলিশ আজকে তাকে প্রাণে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করেছিল । ঘটনার পর জেলা কার্যালয়ে বুথ সশক্তিকরণ কার্যশালায় যোগ দিয়ে মন্ত্রী উদয়ন গুহকে সরাসরি হুমকি দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘ছাড়ের আর কোন সিন নাই । আমাকে ফিরতে দিন এবং আপনারাও বাড়ি ফিরুন । আমি এর শেষ থেকে ছাড়বো । আমি শুভেন্দু অধিকারী । সিপিএমের লক্ষণ শেঠকে জব্দ করা লোক আমি । আমি মমতা ব্যানার্জিকে হারানো লোক । আমি যদি সত্যিকারের সনাতনী হয়ে থাকি, আমার পরিবারের বিপিন অধিকারী যদি ব্রিটিশ আমলে জেলে গিয়ে থাকেন, এর হিসাব আমি নেব । বদল হবে বদলাও হবে । উদয়ন গুহ তোমার সঙ্গে আমার হিসাব হবে ।’
তিনি বলেন,’উন্মত্ত হায়নার দল, পাগল কুকুরের দল, চোরের বেটা চোর উদয়ন গুহর নেতৃত্বে ঝাঁপিয়ে পড়ে । আমি যদি ওই বুলেটপ্রুফ গাড়িতে না থাকতাম তাহলে আমার মৃতদেহে এখন আপনাদের ফুল দিতে হতো । বুলেটপ্রুফ গাড়িটা পাথর দিয়ে ভেঙেছে । প্রত্যক্ষ খুনি যদি উদয়ন গুহ হয় তাহলে পরোক্ষ খুনি পুলিশ সুপার ধৃতিমান ভট্টাচার্য ও ডিজি রাজিব কুমার ।’ শুভেন্দু অধিকারী আরো বলেন, ‘ঘোসকাডাঙ্গায় সামনে এলো পুলিশ টেনে সরালো । গট আপ গেম৷ ৮৭ বছরের বাবা-৭৮ বছরের মা তুলে গালাগালি করল । তাদের ৯০ ভাগ হলো রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি মুসলমান যাদেরকে আমরা ভারত থেকে তাড়াতে চাই । রাগ টা হচ্ছে যে বিহারে এসআইআর হয়েছে, এবারে পশ্চিমবঙ্গে যদি হয় । বর্ডার খোলা । সামনে বাংলাদেশ । হু হু করে লোক ঢোকাচ্ছে ।’
তিনি বলেন,’গোটা ভারতে ভোটার বেড়েছে সাত শতাংশ । কিন্তু কোচবিহারে বেড়েছে ২৬ শতাংশ । শীতলকুচি ২৯, দিনহাটা ২৮, কোচবিহার দক্ষিণ ২৮, মেখলিগঞ্জ ২৬ শতাংশ, নাকাবাড়ি ২৪, মাথাভাঙ্গা ২৬, সিতাই ২৮ শতাংশ ভোট বেড়েছে । এরা কারা ? এরা ভারতীয় নয় ।’ শুভেন্দু অধিকারী বলেন, কোচবিহার জেলায় যদি ইলেকশন কমিশন রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার মত পরিস্থিতি তৈরি না করে যদি নির্বাচন করেন তাহলে কোন সাধারণ সনাতনী ভোটকেন্দ্রে পৌঁছাতে পারবেন । যারা আলিপুরদুয়ারে প্রধানমন্ত্রীর সভাতে হামলা করার সাহস দেখায়, এদের আর বাড়তে দেওয়া উচিত হবে না । পিপিলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে।’
পশ্চিমবঙ্গে এসআইআর হলে ধর্মীয় কারণে ভারতের পালিয়ে আসা বাংলাদেশী হিন্দুদের কোন অসুবিধা হবে না বলে কষ্ট করে দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা । এই বিষয়ে তিনি বলেছেন,’কোন হিন্দুর সমস্যা হবে না । কোন রাজবংশীর সমস্যা হবে না । দায়িত্ব নিয়ে বলছি । আসামের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমার দু-তিন বার কথা হয়েছে । বলছে একজনা হিন্দুর কেশাগ্র স্পর্শ হবে না, আমি গ্যারান্টার শুভেন্দু অধিকারী । যদি সনাতনী হিন্দু, রাজবংশী, নমঃশূদ্র, মতুয়াদের যারা বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে পালিয়ে এসেছেন তাদের যদি এতটুকু আইনগতভাবে ত্রুটি হয় তাহলে আপনারা আমার কাছে এসে বুঝে নেবেন । আমি পদত্যাগ পত্র দিয়ে দেবো।’ তিনি আরও বলেন,’তবে একটা কথা কান খুলে শুনে রাখুন, কোন বাংলাদেশী মুসলমান এবং রোহিঙ্গা ভোটার তালিকায় থাকবে না । বিজেপি এসে বুলডোজারের মাথায় তুলে কাঁটাতারের ওপারে ফেলবো ।’
আজকে হামলার প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, বারংবার তৃণমূলের এই ধরনের হামলা দুটি জিনিষ প্রমান করছে : ১) কোচবিহার সহ সারা পশ্চিমবঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়েছে। রাজ্য প্রশাসন আমার যাত্রাপথ সম্পর্কে আগের থেকে অবগত থাকা সত্ত্বেও, এই হামলা সংগঠিত হয়েছে, এবং সেটা হয়েছে পুলিশের সামনেই।
২)পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা আর নেই তাই তিনি এখন হিংসা ও ভয় দেখানোর পদ্ধতি অবলম্বন করছেন। এটা ওনার চরম হতাশার বহিঃপ্রকাশ।
সবশেষে তিনি মুখ্যমন্ত্রী উদ্দেশ্যে বলেন,’মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই একসময় নন্দীগ্রামে সিপিএম এর হার্মাদ বাহিনী ও জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের সাথে আমি রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করেছি, তারাই আমাকে আটকাতে পারেনি, সে তুলনায় আপনার তৃণমূলের এইসব গুন্ডারা দুগ্ধপোষ্য শিশু মাত্র। সুতরাং হুমকি দিয়ে আমাকে না আটকানো যাবে, আর না বিজেপিকে এক ইঞ্চি পথচ্যুত করা যাবে। মানুষকে সাথে নিয়ে ২০২৬-এ গণতান্ত্রিক উপায়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই অগণতান্ত্রিক সরকার উৎখাত হবে।’।