প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০২ ফেব্রুয়ারি : কেন্দ্রের বাজেট ঘোষণার পরে শেয়ার বাজারে ব্যাপক ধ্বস নামায় কেন্দ্রে সরকার টাই নাকি পড়ে যাচ্ছিল। বৃহস্পতিবার বর্ধমানে প্রশাসনিক সভায় যোগ দিয়ে বুধবারের কেন্দ্রীয় বাজেটকে এভাবেই কটাক্ষ করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, এবারের কেন্দ্রীয় সরকারি বাজেটে বেকারদের জন্য একটিও কথা খরচ করা হয়নি। ইলেকশন আসলেই বলে ২ কোটি লোককে চাকরি দেবো। আর ইলেকশন চলে গেলেই ৪ কোটি লোকের চাকরি খেয়ে নেয়। বুধবার তো কেন্দ্র সরকার টাই পড়ে যাচ্ছিল। কেন পড়ে যাচ্ছিল জানেন? শেয়ার বাজারে ধ্বস নেমেছিল। তারপর ঐদিন বিকালে যাদের শেয়ার পড়ে যাচ্ছে এমন ছয় আট জনকে ফোন করে, কাউকে বলে কুড়ি হাজার কোটি, কাউকে তিরিশ হাজার কোটি আবার কাউকে দশ হাজার কোটি টাকা দিতে বলে। আমরা জানি তারা কারা। নাম বলে আমি তাদের দুর্বিষহ করতে চাই না।এই দিয়ে সরকার চলে! একটা সরকারের যদি প্ল্যানিং না থাকে।
কেন্দ্রীয় বাজেট নিয়ে আরো কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,বাজেটে ইনকাম ট্যাক্স এর স্ল্যাব পাঁচ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে ৭ লক্ষ করা হয়েছে বলে যেটা বলা হচ্ছে, সেটা আসলে একটা চালাকি। মাছের তেলে ওরা মাছ ভেজেছে। সবটাই কথার কারসাজি। আসলে লোভ দেখিয়েছে আর মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়েছে। রোজগার আরো ঝরঝরে করে দিয়েছে। এর ব্যাখ্যা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,’স্ল্যাব পাঁচ থেকে সাত হলো। দুই বাড়ল কিন্তু আড়াই কাটল। এটা কাটা হল ফ্যাসিলিটিস থেকে। সবটাই কথার জাগুলারি। যারা ইনকাম ট্যাক্স দেন ৮০ (সি) ধারায় , এমনকি এলআইসি, পি পি এফ কিংবা টোয়াক্স সেভিংস মিউচুয়াল ফান্ড মিলিয়ে যে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত আপনারা ছাড় পেতেন, নতুন কাঠামোয় সেই দেড় লক্ষ টাকা কিন্তু আপনারা আর ছাড় পাবেন না। সেইগুলো উঠিয়ে দিল। অর্থাৎ দুই যেটা বাড়িয়েছে তার দেড় এখানেই উঠিয়ে দিল। এবার হচ্ছে মেডিকেল ইন্সিওরেন্স। প্রিমিয়ামের যে ছাড় ফ্যামিলির জন্য আশি (টি) ধারায় ৫০ হাজার টাকা অব্দি পেতেন, নতুন করকাটামোয় সেটাও পাবেন না।এছাড়াও , ন্যাশনাল পেনশন স্কিমে ( ৮০ সিসিডি ) ভবিষ্যতের কথা ভেবে ৫০ হাজার টাকা অব্দি যে টাকাটা জমাতেন, তাতে ছাড়ও আর পাবেন না। এইটাই হলো আসল সত্য।, দিল দুই আর এইভাবে কেটে নিলো আড়াই”। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, কেন্দ্রের এই সরকার বেশিদিন ক্ষমতায় থাকলে সব ব্যাংক বন্ধ করে দেবে, লাইফ ইন্সুরেন্স উঠিয়ে দেবে। এলআইসির শেয়ার যেভাবে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে, এলআইসি ,ব্যাংকের শেয়ার আর জনগণের টাকা দিয়ে, এভাবেই পার্টি আর পার্টির কয়েকজন বিখ্যাত লোককে বাড়ানো হচ্ছে।
সবাই উপস্থিত থাকা মানুষজনকে স্মরণ করে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,মনে রাখবেন আগামী দিন আপনারা আপনাদের ব্যাংকের টাকা পাবেন কিনা জানেন না। ইনসিওরেন্স করে রাখেন ভবিষ্যতের জন্য। কিন্তু আগামী দিন ইনসিওরেন্সও পাবেন কিনা আপনারা জানেন না। চাকরি কোথা থেকে দেবে। বাজেটে একটা চাকরির কথাও বলেনি। সেলফ হেল্প গ্রুপ নাকি একাশি লক্ষ্য করবে। এই বিষয়ে বাংলাকে তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলায় আগে ১ লক্ষ সেলফ হেল্প গ্রুপ ছিল।এই দশ বছরে সেলফ হেল্প গ্রুপ করেছি ১১ লক্ষ্য। আরো হবে।কেন্দ্রের সরকারকে চ্যালেঞ্জ জুড়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এও বলেন,তুমি একাশি লক্ষ্য করবে কি, আমাকে পাঁচ বছর টাইম দাও। আমি একাই একাশি লক্ষ্য হেল্প হেল্প গ্রুপ করে দিচ্ছি। যত ক্রেডিট সব নেবেন উনারা আর শুধু সেন্ট্রাল টিম পাঠাবে।
বর্ধমানের প্রশাসনিক সভা থেকেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও সুর চড়ান। উপাচার্য বিদ্যুৎ বরণ চক্রবর্তীর নাম মুখে না এনে মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আমি জানি কি করে কি করতে হয়”।পাশাপাশি তিনি এও বলেন, বিশ্বভারতীতে ছাত্রদের উপর জুলুম চলছে, অধ্যাপকদের উপর অবিচার চলছে। আদালতে মামলা চলছে। কি বলে দেখি। তারপর জনগণের আদালতে বিচার হবে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, আমি বিশ্বভারতীর পড়ুয়া, অধ্যাপক সবার পাশে আছি। আমি জানি কি করে কি করতে হয়। উপাচার্য বিদ্যুৎ বরন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে চিঠি পাঠানোর কথা মুখ্যমন্ত্রী বুধবার বোলপুরে জনসভা থেকে জানিয়ে ছিলেন ।
বর্ধমানের গোদার মাঠে এদিন পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান মিলে সভাটি হয়। এখানে দুই জেলার বাসিন্দারা ছাড়াও বড় সংখ্যায় ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে আসা হয়েছিল। সভায় মুখ্যমন্ত্রী জানান; ১০ লক্ষ সাইকেল দেওয়া হবে। যারা দ্বাদশে উঠবে তারা সবাই স্মার্টফোন পাবে।১০ লক্ষ টাকা করে স্মার্টকার্ড পাবে ছাত্রছাত্রীরা। কারো কাছে হাত পাতার দরকার নেই। বাইরেও যেতে হবে না।এদিন বর্ধমানের সভা থেকে দুর্গাপুরে রিজিওনাল ফরেন্সিক ল্যাব উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,আর বাঁকুড়া পুরুলিয়া,বীরভূম, দুর্গাপুর ও আসানসোলের মানুষজনকে কলকাতা ছুচে যেতে হবে না ফরেন্সিক টেস্টের জন্য। মুখ্যমন্ত্রী এদিন দুই জেলার একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন একসঙ্গে করেন। পাশাপাশি সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বর্ধমানের কাঞ্চন মেলারও উদ্বোধন করেন। সরকারি মঞ্চ থেকে বেসরকারি মেলার উদ্বোধন করায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
বিজেপির জেলা সহসভাপতি সৌম্যরাজ ব্যানার্জী বলেন,’সরকারি অফিসে বসে দলের কাজ হয়।পঞ্চায়েত অফিসে বসে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করানো হয়।এদিন তিনিও সেই পথে গেলেন ।’।